বিপদের সময় কী করা উচিত নয়?
কথায় আছে একটি বিপদ অন্য একটি বিপদ কে বয়ে আনে। বিপদের সময় মানুষ তার স্বাভাবিক কর্ম ক্ষমতা হারায় এবং সঠিক পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অবস্থায় থাকে না। বিপদের সময় যে কোন কাজে লাগাতার ব্যর্থ হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আর এই লাগাতার ব্যর্থতার মাধ্যমেই মানুষ তার আত্মবিশ্বাস হারায় এবং হতাশার বশবর্তী হয়ে যায়। তাই বিপদের সময় অবশ্যই আপনার কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত। এই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার আগে আমি অবশ্যই আপনাকে গৌতম বুদ্ধের জীবনের একটি কাহিনী উল্লেখ করব;
একবার গৌতম বুদ্ধ এবং তার কিছু অনুগামী কোন উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিলেন। পথে যেতে যেতে গৌতম বুদ্ধের পিপাসা পায়। গৌতম বুদ্ধ জল গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে তার অনুগামীদের বলেন তারা যেন নিকটবর্তী কোন স্থান থেকে জল নিয়ে আসে। গৌতম বুদ্ধের কাছ থেকে এইরকম নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তার কিছু অনুগামী নিকটবর্তী কোন জলাশয় জল আনতে প্রস্থান করেন। কিন্তু জলাশয়ের নিকটে গিয়ে তার অনুগামীরা লক্ষ্য করেন জলাশয়ের জল এখনো ঘোলা অবস্থায় রয়েছে, সেটা পানের অনুপযুক্ত। কোন গবাদি পশু পালনকারী কিছুক্ষণ আগে হয়তো তার গবাদি পশু গুলোকে এখান থেকে নিয়ে গেছেন তাই জলাশয় এর জল এখনো ঘোলা রয়েছে। বুদ্ধ কে তারা এইরকম জল কি করে পান করাবেন! তাই গৌতম বুদ্ধের কাছে এসে তারা এ কথা জানান।
বুদ্ধ তার অনুগামীদের কিছুক্ষণ পর আবার জলাশয় এর নিকট যেতে বলেন। এবার যখন তার অনুগামীরা জলাশয় এর কাছে পৌছলেন তখন তারা দেখলেন জলাশয়ের জল স্বচ্ছ হয়ে গেছে এবং সেটা পানের উপযুক্ত হয়েছে। এবার তারা গৌতম বুদ্ধের জন্য পানের উপযুক্ত জল নিয়ে পৌছলেন এবং তাকে সেই জল পান করার অনুরোধ করলেন।
জল পান করে গৌতম বুদ্ধ তার অনুগামীদের উদ্দেশ্যে বললেন: জীবনের সমস্যাগুলো ওই জলাশয় এর ঘোলা জলের মতো। তুমি যদি ধৈর্য ধরে জলাশয় এর ঘোলা জল পরিষ্কার হওয়ার অপেক্ষা করো তবে তুমি অবশ্যই স্বচ্ছ পানীয় জল পাবে। কিন্তু যদি ব্যস্ত হয়ে ঘোলা জলেই পানীয় জলের খোঁজ করো তাহলে জলাশয়ের ঘোলাজল আরো বেশি ঘোলা হয়ে যাবে। সকল অনুগামী গৌতম বুদ্ধের এই লীলা বুঝতে পারল এবং জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহন করল।
এই কাহিনীটি পর্যবেক্ষণ করলে আমরা এটা বুঝতে পারব যে বিপদের সময়;
- ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করতে হবে। তুমি যত ব্যস্ত হবে তোমার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য, ততই আরো বেশি খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
- বিপদের সময় কখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। যদি গৌতম বুদ্ধের অনুগামীরা এটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিত যে, ঐ জলাশয় এর জল কখনোই পান করা যাবে না তাহলে কি তারা কিছুক্ষণ পরে স্বচ্ছ জল দেখতে পেত।
- বিপদের সময় যত সম্ভব কম কথা বলুন। কারণ বিপদের সময় আপনি বুদ্ধিমত্তার সাথে কখনোই কথা বলতে পারবেন না। আপনার আবেগ এবং অভ্যন্তরীণ অনুভূতি আপনার কথাবার্তা অনেক বেশি সাধারণ করে তুলবে।
- নিজের বিপদ এর ব্যাপারে বেশি কারো সাথে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। খুব কম লোকই পাবেন যে আপনার বিপদে পাশে থাকবে।