ভালোবাসাকে না পাওয়ার কষ্ট/বেদনা কতদিন বয়ে বেড়ানো যায়?
ভালোবাসাকে না পাওয়ার কষ্ট/বেদনা কতদিন বয়ে বেড়ানো যায়?
নিজের অল্প বয়সের কথা মনে পড়ে, তীব্র দুঃখে যখন দিনগুলো কন্টকিত হয়ে উঠেছিল তখন কোনোমতে সেগুলো উত্তীর্ণ হয়ে যাবার রাস্তা পাই নি | মনে করেছিলাম অন্তহীন এই দুর্গমতা | কিন্তু জীবনের পরিণতি একান্ত বিস্মৃতির ভিতর দিয়ে নয়, দিনে দিনে বেদনাকে বোধনার মধ্যে নিয়ে গিয়ে কঠোরকে ললিতে, অম্লতাকে মাধুর্যে পরিপক্ক করে তোলাই হচ্ছে পরিণতি |
-ন হন্যতে (মৈত্রেয়ী দেবী)
‘ন হন্যতে’র লেখিকা মৈত্রেয়ী দেবী যখন তাঁর কৈশোরের প্রেম মির্চা ইউক্লিডের অন্তর্ধানে শোকে বিহ্বল তখন তাঁর মানসিক অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠি লেখেন | জবাবে রবীন্দ্রনাথ লেখিকাকে যে চিঠিটি লিখে পাঠান তাঁরই একটি অংশ উপরের উদ্ধৃতিটি |
চিঠির আর একটি অংশে রবীন্দ্রনাথ লেখিকাকে বলেছেন-
নিজের উপর শ্রদ্ধা রেখ, চারিদিক থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে সেই গভীর নিভৃতে নিজেকে স্তব্ধ কর যেখানে তোমার মহিমা তোমার ভাগ্যকেও অতিক্রম করে |
আমার ছোটবেলায় গল্পের বই পড়ার আর লেখালেখি করার বেশ শখ ছিল | তখন লোকের ঘরে-ঘরে এখনকার মত ইন্টারনেট ছিল না | অবসর বলতে আমার বয়সী ছেলে-মেয়েরা মাঠে-ঘাটে গিয়ে খেলা-ধুলোই বুঝত |
কিন্তু আমি বোধ করি একটু অন্তর্মুখী প্রকৃতির ছিলাম বলেই খেলাধুলোর চেয়ে গল্পের বই নিয়ে সময় কাটাতে ভালবাসতাম বেশি | নতুন কোনো গল্পের বই হাতের কাছে না থাকলে পড়া বইই আবার পড়তাম |
আর লিখতাম | হাতের কাছে খাতা, ডায়েরি, পেন, পেন্সিল যা পেতাম তাই নিয়েই আর নিজের কল্পনাকে সম্বল করেই লিখতাম |
বড় হয়ে ওঠার পর দুটো অভ্যেসই কিভাবে আর কখন যে অন্তর্হিত হয়েছিল জানি না |
২০১৩র শেষের দিকে Quoraর সন্ধান পাওয়ার পর লেখালেখির পাট আবার শুরু হয়, তবে ইংরেজিতে | বাংলায় লেখালেখির অবকাশ বা ইচ্ছা, কোনটাই তখন ছিল না |
মূলত প্রেমে পড়ার পরই আমার বাংলায় লেখালেখির পুনর্জন্ম হয় | না, জোরাজুরিতে পড়ে নয় নিজের তাগিদেই | বহুদিন পর নিজের মন থেকে সাড়া মিলেছিল বলে |
কিন্তু তখনো বুঝিনি যে হৃদয়ভঙ্গের পর এই বাংলাই আমার আবেগ্মুক্তি ও কষ্টের ভার লাঘবে সবচেয়ে বড় সহায় হবে |
আমার ভাগ্য ভালো ছিল যে Quoraর মাধ্যমেই আমার বাংলায় লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগটা এই সময়ই এসে পড়ে |
এখানে লেখালেখি শুরু করার পর একদিকে তা যেমন মনকে হালকা করতে সাহায্য করেছে তেমনি পাশাপাশি বই পড়ার প্রতি টিমটিম করে জ্বলতে থাকা আগ্রহটাকেও পুনরুজ্জীবিত করেছে |
বলা যায়, এই দুইয়ের সমন্বয়ই আমাকে একটু-একটু করে নিয়ে গেছে মানসিক শান্তির দিকে |
বা অন্যভাবে দেখলে, এই যন্ত্রণা আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে আমার শৈশবে; যে শৈশব আমাকে পরিবর্তে দেখিয়ে দিয়ে গেছে মানসিক নিরাময়ের পথ |
যাত্রাটা যে খুব সহজ বা সোজাসাপ্টা ছিল এমনটা মোটেই নয়; কিন্তু বিফলে যে যায়নি এটা নিশ্চিতভাবেই বলা চলে |
পথ অবশ্য সবার একই হবে তাও নয়, আলাদা আলাদা হতে পারে | তবে পথ যে আছে এতে বোধ করি বিশ্বাস করাই যায় |