ভালো একটা গল্প বলবেন কী?

    ভালো একটা গল্প বলবেন কী?

    Doctor Asked on June 29, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      এক সপ্তাহ ধরে একটা নৌকা নদীতে ভাসছে।
      দিনরাত ধরে ভাসছে। নৌকায় কেউ নেই। মাঝিহীন নৌকা। পানির স্রোতে ভেসে চলেছে অবিরাম, অজানায়। কোথায় গিয়ে থামবে সে, জানে না! কার নৌকা তা এখনও জানা যায় নি। নৌকাটা বেশ বড়। অবশ্যই মাছ ধরার নৌকা। তবে এ নৌকায় অনায়াসে পনের জন মানুষ বহন করতে পারবে। নৌকা যদি কথা বলতে পারতো তাহলে সে তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে পারতো। ভাসতে ভাসতে এখন সে কার কাছে গিয়ে পড়বে সে জানে না। যে তাকে পাবে, সে কি তাকে নিয়ে মাছ ধরতে যাবে, না মানুষ পারাপার করবে? যত্ন নিবে তো তার? নদীর সবচেয়ে আপন হলো নৌকা। নদী আর নৌকা মিলেমিশে একাকার! মানুষের কাছে আপন হলো তার সন্তান। কবুতর কখনও হারায় না। সে তার মালিককে ঠিকই খুঁজে বের করে নেয়। নৌকার সেই ক্ষমতা নেই।

      শফিক বাড়ির উঠানে বসে আছে।
      তার মন মেজাজ প্রচন্ড খারাপ। তার ডিঙ্গি নৌকাটা হারিয়ে গেছে। অথচ এই নৌকাই তার আয় ইনকামের একমাত্র ভরসা। শফিকের ঘর সংসার আছে। পরিবারে চারজন মানুষ খাওয়ার। মা, স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে ফাতেমা। ফাতেমার বয়স চার বছর। শফিক ডিঙ্গিতে করে মাছ ধরে। কখনও সে ডিঙ্গিতে করে পাট, ধান বা মাটির হাড়ি পাতিল পৌঁছে দেয় দামুদার বাজারে। বিনিময়ে সে কিছু টাকা পায়। সেই টাকা দিয়ে কোনো রকমে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর কন্যাকে নিয়ে খেয়েপড়ে বেঁচে আছে। আজ সাত দিন হলো তার ডিঙ্গি হারিয়ে গেছে। শফিকের স্পষ্ট মনে আছে সে তার ডিঙ্গি ঘাটে বেঁধে রেখেছিলো। নিশ্চয়ই কেউ তার ডিঙ্গির দড়ি খুলে দিয়েছিলো। এই কাজ কে করতে পারে তা শফিক অনুমান করতে পারে কিন্তু তার বলার সাহস নাই। ডিঙ্গি হারিয়ে শফিক চোখে অন্ধকার দেখছে। তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এখন নদীতে ডুবে মরা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

      রমিজ উদ্দিন আজ বড় খুশি।
      অবশ্য একটু আগেও সে খুশি ছিলো না। তার স্ত্রী তার সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করেছে। স্ত্রী জাতি আজিব চিজ। দিতে পারলেই খুশি। না দিলেই গালমন্দ করে। বিয়ে করাই তার ভুল হয়েছে। রাত হয়েছে, স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে যা আছে খেয়ে ঘুমাবে। তা না রমিলা শুরু করলো ঝগড়া। ঝগড়ার কারন রমিলা একটা চুন্ডি শাড়ির কথা বলেছিলো। রমিজের কাছে টাকা নাই সে শাড়ি আনতে পারে নি। এখন আনতে পারেনি পরে আনবে। সামান্য শাড়ির জন্য ঝগড়া করতে হবে! এ কেমন মেয়েছেলে! খুব ক্ষুধা লেগেছে রমিজের। সরিষার তেল, আর কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে রমিলা আলু ভর্তা করেছিলো। খাওয়া হলো না আরাম করে। রাগ করে রমিজ নদীর পাড়ে এসে বসেছে। নদীর পাড়েই তার বাসা। আজ রাত মনে হয় নদীর পাড়েই কাটাতে হবে। রমিলা কি তাকে ডেকে নিতে আসবে? হঠাত রমিজ একটা ডিঙ্গি নৌকা দেখতে পায়। ডিঙ্গি দেখে রমিজ খুশি। সে দৌড়ে রমিলার কাছে যায়। গিয়ে বলে, শাড়ি কিনি নি কিন্তু একটা ডিঙ্গি খরিদ করেছি। এখন তোমাকে প্রতিমাসে একটা করে চুন্ডি শাড়ি দিতে পারবো।

      শফিকের ঘরে খাবার নেই।
      বৃদ্ধা মা খুব অসুস্থ। তাকে ডাক্তার দেখানো দরকার। অথচ হাতে কোনো টাকা নেই। ঘরে এমন কোনো মূল্যবান জিনিস নেই যা বিক্রি করে দিলে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। গ্রামে সাহায্য করার মতোন কেউ নেই। যদিও ইচ্ছা করলেই অনেকেই সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এই ইচ্ছাটাই কেউ করে না। শফিক বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলো। চেয়ারম্যান বলেছেন, কিছু টাকা তোমাকে দিতেই পারি, কিন্তু সাদা কাগজে সাইন করে টাকা নিতে হবে। সফিক জানে সাদা কাগজে একবার সাইন করে টাকা নিলে, তাকে বসতভিটা হারাতে হবে। বহু লোক সাদা কাগজে সাইন করে টাকা নিয়ে বসতভিটা হারিয়েছে। এই ভুল শফিক করতে পারে না। তবে পরিবার নিয়ে তো আর না খেয়ে থাকতে পারে না। তার কন্যা ফাতেমার দিকে তাকালে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। অসুস্থ মা! কই যাবে সে? কার কাছে যাবে? কে তার মাথায় এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে হাত রাখবে!

      রমিজের ভাগ্য ফিরে গেছে।
      সে এখন চুরী চামারি এবং কুলিগিরি ছেড়ে দিয়েছে। তার স্ত্রী রমিলা খুব খুশি। রমিজ ভালো নৌকা বাইতে পারে। সে সারাদিন নৌকা বায়। পাট, ধান, মাটির হাড়ি পাতিল এবং লোক নিয়ে নদীর এপার ওপার যায়। প্রতিদিন তার অনেক টাকা আয় হচ্ছে। আবার জেলেরা তার কাছ থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে মাঝ নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছে। জেলেরা তাকে ফ্রি মাছও দিচ্ছে। একটা নৌকা রমিজের জীবন বদলে দিলো। রমিলা পোয়াতি হয়েছে। এই খুশিতে রমিজ তিনটা চুন্ডি শাড়ি কিনে ফেলেছে। শাড়ি দেখে খুশিতে রমিলা কেঁদে ফেলেছে। শাড়ি গুলো এত সুন্দর। এর মধ্যে একটা শাড়ি রমিলার এতই সুন্দর লেগেছে যে শাড়িটা সে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। রমিজ বলল, বউ শাড়িটা পরো। দেখি তোমাকে কেমন লাগে! রমিলা যেন এই কথাটার অপেক্ষায়ই ছিলো মনে মনে। রমিজা শাড়ি পরলো, ঠোটে গাঢ করে লিপস্টিক দিলো, চোখে মোটা করে কাজল দিলো, কপালে টিপ আকলো। দুই গোছা কাঁচের চুড়ি পড়লো। রমিজ তার স্ত্রীকে দেখে মুগ্ধ! মাশাল্লাহ তার বউটা সুন্দর আছে।

      Professor Answered on June 29, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.