ভোগ-বিলাসিতাপূর্ণ জীবন সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
ভোগ-বিলাসিতাপূর্ণ জীবন সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
সাদাসিধে, অনাড়ম্বর ও সাবলীল জীবনই ইসলামের কাক্সিক্ষত। মানুষের জীবনবোধে যেন কোনো ধরনের আবিলতা ও লৌকিকতার উপসর্গ হিসেবে যুক্ত না হয় সে তাগিদ ইসলামে করা হয়েছে বারবার। জাঁকজমকপূর্ণতা, লৌকিকতার ঝলক কিংবা বাড়তি শৌখিনতাকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলামী জীবনবোধ হচ্ছে পার্থিব এবং এই জীবন ক্ষণস্থায়ী, পরকালের শস্যক্ষেতস্বরূপ। এখানকার কর্মদক্ষতা ও কর্মফলই সে ভোগ করবে আখেরাতে। এ জন্য এখানে তার অবস্থানটা সীমিত সময়ের জন্য স্বল্প পরিসরে। এখানকার প্রাপ্তির হিসাবটা মুখ্য নয়। পরজগতের ভাবনায় ইহজাগতিক যাবতীয় কর্মকাণ্ড সূচিবদ্ধ একটি নিয়মের অধীনে পরিচালিত হবে। জাগতিক প্রতিষ্ঠা ও বৈষয়িক চিন্তা থাকবে গৌণ হিসেবে। একজন পথিক যেমন তার আরামস্থলকে স্থায়ী কোনো ঠিকানা মনে করে না, তেমনি দুনিয়ার জীবনটাও মানুষের জন্য মুহূর্তের আবাসস্থল, পথিকের বিশ্রাম গ্রহণের মতো।
ইসলামের নবী (সা.) আল্লাহর বন্ধু ও উভয় জগতের বাদশা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর জীবনাচরণ ও জীবনধারা ছিল অতিসাধারণ। প্রাচুর্যের খনিতে ঐশ্বর্যমণ্ডিত হওয়ার সমূহ ব্যবস্থা থাকার পরও সাদাসিধে ও আড়ম্বরহীন জীবনকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। জাগতিক উচ্চাভিলাষ ও প্রতিষ্ঠার ভাবনা তার মধ্যে ছিলই না। নবী জীবনের অর্ধাহার, অনাহার ও অভাবক্লিষ্ট চিত্রগুলো সাদাসিধে জীবনের প্রতি ইসলামের জোরালো প্রেরণার কথা প্রমাণ করে। নবীর শিক্ষায় শিক্ষিত সাহাবায়ে কেরামও ছিলেন ইসলামের এ প্রেরণা বাস্তবায়নের উত্তম নমুনা। সময়ের স্রোতধারায় আবিলতাযুক্ত জীবনবোধে বর্তমানে ইসলামের সেই আদর্শিক শিক্ষাটা আর অবশিষ্ট নেই।
মুসলমানরা আজ ভোগ-বিলাসের সম্ভারে ডুবে আছে আকণ্ঠ। সাদাসিধে অনাড়ম্বর জীবনের কাহিনী আজ অলীক ও অকল্পনীয় মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বৈষয়িকতার প্রাবল্যের কারণে জীবনের সুখ-শান্তি আজ অনুপস্থিত। শান্তির সন্ধানে মানুষ ব্যাকুল হয়ে ফিরছে এদিক-ওদিক। সব কিছুতেই একটা অপূর্ণতা, অপ্রাপ্তি ও খাই খাই ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। চারদিকে বিরাজ করছে হাহাকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসলামের প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে জীবনধারায় সাদাসিধে ও অনাড়ম্বরতা নিয়ে আসা। বৈধ-অবৈধ পথে যত সম্পদই মানুষ উপার্জন করুক তাকে একদিন যেতে হবে খালি হাতে। স ষ্টার দরবারে তাকে প্রতিটি পদক্ষেপের জবাবদিহি করতে হবে। এ জন্য পরকালের ভাবনা যথার্থভাবে কারো মধ্যে থাকলে বৈষয়িক প্রাপ্তি তার কাছে বড় হয়ে ধরা দেবে না।