ভ্রমণ কীভাবে মানুষের আত্ম-উন্নয়ন ঘটায়?
ভ্রমণ কীভাবে মানুষের আত্ম-উন্নয়ন ঘটায়?
আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি কেবল একটা কথাই বলতে পারি— জীবনে কিছু জিনিস শুধুমাত্র উপভোগ করার উদ্দেশ্যেই করা উচিত । আত্মোন্নয়ন নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে গেলে এমন সব কাজে সময় ও অর্থ ব্যয় হতে পারে যেগুলো আপনার কাছে উপভোগ্যই নয় কিন্তু আপনি করছেন কারণ আর সবাই সেগুলো করছে তাই ।
সামাজিক মাধ্যমে সর্বত্র একাকী ভ্রমণ (solo traveling)এর উপকারিতা নিয়ে লেখার ছড়াছড়ি । এইসব লেখা পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমিও উৎসাহী হয়ে একসময় বেরিয়ে পড়েছিলাম একাকী ভ্রমণের মাধ্যমে নিজের জীবনকে সমৃদ্ধ করবো এই আশা নিয়ে । তারপর দেশ-বিদেশ মিলিয়ে বেশ কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণে গিয়েছি । তাতে একটা জিনিসই ভালো বুঝেছি— একাকী ভ্রমণ আমার ভালো লাগে না । নিজের অভিজ্ঞতা, অনুভূতিগুলো একজন সমমনস্ক সঙ্গীর সাথে ভাগাভাগি না করে নিতে পারলে আমার মন ভরে না । একাকী ভ্রমণে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে এটা ঠিক কথা, কিন্তু এতটা স্বাধীনতা হয়তো আমার দরকার নেই । ভ্রমণে আনন্দটাই আমার কাছে আসল আর নিঃসঙ্গ ভ্রমণ আমার জন্য যথেষ্ট আনন্দদায়ক নয়, সে আমি যেখানেই যাই না কেন!
এই উপলব্ধি হওয়ার পর থেকে ভ্রমণ জিনিসটার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আমার সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে; বিদেশ ভ্রমণের মোহ প্রায় উবে গিয়েছে বলা যায় । যদিও পরিহাসটা এখানেই যে রবি ঠাকুর যে কথাটা কবে বলে গিয়েছেন সেটা হৃদয়ঙ্গম হতে আমার এতো দেরি হয়ে গেল ।
বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু ।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু ।
আজ যদি কেউ সারা বিশ্ব জয় করে এসে আমাকে তাঁর গল্প শোনাতে বসে, আমি মন দিয়ে তাঁর গল্প শুনব, উপভোগ করব কিন্তু অনিরাপত্তায় আক্রান্ত বোধহয় হব না । নিজের কথা বলার ফুরসৎ হলে হয়তো তাকে বলব, “আজ অনেকদিন বাদে গ্রামের দিকে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল । একটা সম্পূর্ণ অচেনা জায়গা, শুধু একটু ঘুরে দেখব বলেই গিয়েছিলাম আমার মাসতুতো ভাইটিকে সঙ্গে নিয়ে । ঠিক তা নয় আসলে, জায়গাটার একটা মিষ্টির খুব খ্যাতি আছে তাই সেটা চেখে দেখার লোভও ছিল । কিন্তু মিষ্টিমুখ ছাড়াও আরও অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা হল যাতে মনটা ভরে গেল; দেখলাম সুপুরি গাছের সারি, মজে যাওয়া পুকুরের উপরে নুয়ে-পড়া বাঁশঝাড়, যার পাতাগুলো জলকে ছুঁতে-ছুঁতেও যেন ছুঁচ্ছে না, ফাঁকা স্টেশনের একদিকে গাছ-গাছালির আড়ালে সূর্যাস্ত ও আরেকদিকে চন্দ্রোদয়, দূরে একটা নারকেল গাছের পাতার উপর বসে থাকা একটা বক, ট্রেনে যেতে-যেতে দূরে মাঠের মধ্যিখানে কাশফুল ঝাড়, সেইসাথে আসন্ন সন্ধ্যার অন্ধকারে সাদা ধোঁয়ার একটা আস্তরণ—কতদিন যে এগুলো দেখিনি! তবে নিজে দেখে যতটা না আনন্দ পেতাম, তার চেয়ে বেশি পেলাম ভাইকে দেখিয়ে । ও দেখল বলেই যেন আমার দেখাটা আরো বেশি করে সার্থক হল ।”
এরপর আত্মোন্নয়নের কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে কি? কি জানি!