মন খারাপ থাকলে কি করেন?
মন খারাপ থাকলে কি করেন?
মন খারাপ হলে আমি রাস্তায় এলোমেলো হাঁটি। হেঁটে হেঁটে অনেক দূর চলে যাই। কখনও কখনও রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটি। কোনও গাড়ি যদি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, তো দিক। আমি মরে যাবো। যেন আমি মরে গেলেই সকলের শান্তি। আমি যখন ছোট। তখন আমার মন খারাপ হলে- আমি রেলস্টেশন চলে যেতাম। কমলাপুর রেলস্টেশন। সেখানে একটা লোহার ব্রীজ আছে। ব্রীজের উপর ওঠে দাঁড়িয়ে থাকতাম অনেকটা সময়। একটু পরপর হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন আসতো। দেখতে ভালো লাগতো। মন খারাপ হলে আমি মাঝে মাঝে মাছের বাজারে যাই। বড় বড় মাছ দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়। আবার বড় মাছ কাটা দেখতে ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আমি ইউটিউবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মাছ কাটা দেখি। ভালো লাগে।
একসময় আমার মন খারাপ হলে- আমি সোজা রমনা পার্কে চলে যেতাম। একটা বেঞ্চে বসে থাকতাম চুপচাপ, ঘন্টার পর ঘণ্টা। চারপাশে প্রচুর গাছপালা, প্রচুর মানুষজন থাকতো। তাতে আমার কি? একবার মেজাজ খুব খারাপ হলো। তখন আমি কলেজে পড়ি। চ্যাংড়া বয়স। দিলাম হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে একদম এয়ারপোর্ট চলে গেলাম। আমাদের বাসা থেকে এয়ারপোর্ট অনেক দূর। হেঁটে হেঁটে আমার অবস্থা শেষ। পায়ে ঠোসা পড়ে গেছে। পুরো শরীর ব্যথা হয়ে গেছে। জ্বর এসে গিয়েছিলো। আমার জীবন যায় যায় অবস্থা। মন খারাপ হলে, মানুষ যা যা কর্ম করে সেগুলোতে বোকামির পরিচয় পাওয়া যায়। জীবনটা বোকামি করে করেই পার করে দিচ্ছি। আফসোস। আমার দরকার ছিলো একজন বুদ্ধিমান মানুষ। যে আমাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করবে। তাহলে জীবনটা অন্য রকম হতো।
এই সমাজের চারপাশের পরিবেশ এবং মানুষজনের আচারআচরনে মন খারাপ হয়েই যায়। বাংলাদেশের মানুষ গুলো মূলত ইতর শ্রেনীর। ইহা সত্য মিথ্যা নয়। তবে অল্প কিছু লোক ভালো আছে, এ কথাও সত্য। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে- রেস্টুরেন্টে গিয়ে পছন্দের খাবার গুলো অর্ডার করে খেতে বসি। শপিং করি। পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করি, জমিয়ে আড্ডা দেই। যদি পকেটে টাকা না থাকে, তাহলে কোনো এসি মসজিদে গিয়ে ঘুম দেই। বড় শান্তির ঘুম হয়। সমস্যা হলো- মসজিদে বালিশ নেই। মসজিদে বালিশ রাখা দরকার। চায়ের ব্যবস্থাও রাখা দরকার। ঢাকার মসজিদ গুলোর অনেক ইনকাম। এত এত টাকা দিয়ে মসজিদ কমিটি করে কি? নাগরিকদের কিছু সুবিধা দেওয়া উচিৎ। মসজিদের ইনকাম তো নাগরিকদের দিয়েই হয়।
আমার স্ত্রীর কারণে মন খারাপ হলে, আমি চলে যাই মিতুর কাছে। মিতু মোহাম্মদপুরে থাকে। বিয়ে করেনি। কোনোদিন করবেও না। সহজ সরল সুন্দর মেয়ে মিতু। ভালো চাকরি করছে। মিতুর কাছে গেলেই মিতু প্রথম যে কথাটা বলে সেটা হলো- ‘এতদিন পড়ে এলে’! আমি যদি দু’দিন পরেও মতুর সাথে দেখা করতে যাই, মিতু বলবে, এতদিন পড়ে এলে। দুনিয়াতে একমাত্র মিতু আমাকে দেখলে সত্যিকারের খুশি হয়। নিজের হাতে আমাকে রান্না করে খাওয়াবে। খুব খাতির যত্ন করবে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে স্ত্রীর কাছে যাবো না। মিতুর কাছেই থেকে যা। মিতু নিউ মার্কেট গেলে আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে। সেদিন মিতু আমাকে জোর করে বইমেলায় নিয়ে গেলো। অনেক গুলো বই কিনে দিলো। প্রতিটা বইই তার পছন্দের। মনে মনে ভাবি মিতুকে বিয়ে করলে আমার জীবনটা অন্যরকম হতো। ঢাকার এক মার্কেটে মিতুর নামে তিনটা দোকান আছে। দুটা ফ্লাট আছে।
আজকাল মন খারাপ হলে- বই পড়ি, লিখি। অথবা মনে মনে অতি কুৎসিত কিছু গালি দেই। যেসব গালি ভদ্র সমাজে দেওয়া যায় না। মা মাসি একদম এক করে দেই। মনে মনে গালি দিয়ে এক ধরনের কুৎসিত সুখ পাই। দুষিত একটা সমাজে বাস করি, দুষিত লোকজনের মাঝে। মন তো খারাপ হবেই। মন খারাপ করে দিতে পারে অনেকেই কিন্তু মন ভালো করে দিতে পারে না সবাই। মন খারাপ হতে হতে এখন আমি কিছুটা বুদ্ধিমান হয়েছি। যারা আমার মন খারাপ করে দেয়, তাদের কাছ থেকে আমি দূরে থাকি। একশ’ হাত দূরে থাকি। দুষ্টলোকজনের কাছে থাকার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো। দুষ্টলোকজনদের আমি আমার জীবন থেকে মাইনাস করে দিয়েছি। তাই এখন আমার মন তেমন একটা খারাপ হয় না। অবশ্য মন খারাপ হওয়ার সময়ই আমার নেই। নিজেকে নানান রকম কাজে ব্যস্ত রাখি। মন খারাপ হওয়ার সময়ই হয় না।