মানসিক টেনশন কিভাবে দূর করা যায়?
Tension বা মানসিক দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ দূর করার জন্য নানারকম পরামর্শ দেয়া হয় যেমন, বই পড়া, খেলাধুলা করা, গান বাজনা করা, সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, ধ্যান করা…ইত্যাদি।
কিন্তু, এসব করে খুব একটা ফলাফল দেখা যায় না, ঘুরে ফিরে মনে টেনশন চলেই আসে। এর কারণ, আমাদের মন।
মনের বিক্ষিপ্ত গতি এই টেনশন সৃষ্টির মূল কারণ।
এটা হলে কী হবে ? ওটা না হলে কী হবে ?… এসব চিন্তায় মন সততই ব্যাকুল হয়ে থাকে। মনের এই চঞ্চলাবস্থা কে স্থিতাবস্থায় আনা খুবই কঠিন, আর সেটা যখন স্থির অবস্থায় চলে আসবে, তখন আর টেনশন মন কে আক্রান্ত করতে পারবে না।
কথায়, কথায় আমরা টেনশন না করার জন্য বলি, পরামর্শ দিই। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয় না, কারণ, টেনশন বা দুশ্চিন্তা করা না করার ধার ধারে না, নিজে থেকেই চলে আসে।
মন যদি চাওয়া, পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে যেতে পারে, তাহলে আর টেনশনের শিকার হতে হবে না। আর যে অবস্থায় মন চাওয়া, পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে, সেরকম একটা অবস্থায় নিজেকে পৌঁছানো প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার।
ক্রিয়াযোগের প্রাণপুরুষ, মহাবতার বাবাজীর শিষ্য ছিলেন যোগিরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয়।
একদিন লাহিড়ী মহাশয়, বেনারসে তাঁর বাসভবনে নিচের তলায় বসার ঘরে সন্ধ্যেবেলা, ভক্তবৃন্দ পরিবৃত হয়ে গীতার শ্লোক ব্যাখা করে যাচ্ছেন। হঠাৎ করেই বাসভবনের দোতলা থেকে প্রবল কান্নাকাটির আওয়াজ আসছে। ভক্তবৃন্দগণ সবাই আতংকিত হয়ে লাহিড়ী মহাশয়কে এই কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করাতে লাহিড়ী মহাশয় বললেন,
“আমার দ্বিতীয় মেয়ে হরিমতী তার শ্বশুরবাড়ী থেকে আমার এখানে এসেছিলো, কদিন ধরেই রোগে ভুগছে, সম্ভবত: এখনি সে দেহত্যাগ করেছে, তাই এই ক্রন্দনরোল…” বলে আবার গীতা বিশ্লেষণের যে জায়গায় থেমে ছিলেন, সেখান থেকে শুরু করলেন। ভক্তবৃন্দ লাহিড়ী মহাশয়কে থামতে বললেন, কিন্তু, তিনি থামতে উৎসাহী নন। যাই হোক, ভক্তগণের উপর্যুপরি অনুরোধে তিনি গীতা পাঠ থামিয়ে বসে রইলেন। ভক্তগণ ছুটে দোতালায় গিয়ে দেখলেন সত্যি সত্যিই লাহিড়ী মহাশয়ের দ্বিতীয় কন্যার দেহে প্রাণ নেই। তাকে ঘিরে লাহিড়ী মহাশয়ের স্ত্রী কাশিমনি দেবী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ শোক-বিলাপ করছেন। এবার ভক্তরা নিচে এসে দেখলেন লাহিড়ী মহাশয়, অর্ধ নিমীলিত চক্ষে স্থির হয়ে চৌকির উপরে বসে রয়েছেন।
কন্যার মৃত্যু হওয়ার পরে ও সেই সময়ে লাহিড়ী মহাশয়ের যে নির্বিকার অবস্থা, এটা তখনই ঘটা সম্ভব হয়, যখন চিত্ত বা মন স্থির হয়। সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আশা-হতাশা, এসব তখন মনের শক্তির কাছে, মনের স্থিরাবস্তার কাছে বারে, বারেই পরাজিত হয়ে ফিরে যায়।
কিন্তু, আমাদের সংসার জীবনে মন কে এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, আমাদের জীবনে সুখ দুঃখ, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি, সার্থকতা, ব্যর্থতার চুল-চেরা হিসেবে আমরা মজে থাকি অহর্নিশি। তাই টেনশন ও জড়িয়ে থাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আষ্ঠে-পৃষ্ঠে।
ব্যক্তি বিশেষে, পরিস্থিতি বিশেষে টেনশনের মাত্রার তারতম্য ঘটতে পারে। কিন্তু, প্রশ্নে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, ” মন থেকে টেনশন কে কীভাবে দূর করা যায় ?”
দূর করা ?
অ স ম্ভ ব।
ধন্যবাদ।