মানুষকে কি নিজে থেকে আগে বাড়িয়ে সাহায্য করা উচিত?
মানুষকে কি নিজে থেকে আগে বাড়িয়ে সাহায্য করা উচিত?
মানুষকে সাহায্য করা অবশ্যই মহৎ কাজ। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী আপনাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপ্রয়োজনীয়, অযাচিত এবং অনভিপ্রেত সাহায্য করা কাঙ্খিত নয়। প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে সামনের ব্যক্তি আপনার সাহায্য চাইছেন কিনা। অথবা সামনের ব্যক্তির আপনার সাহায্যের খুবই প্রয়োজন কিন্তু পরিস্থিতির কারণে অথবা চক্ষু লজ্জার ভয়ে আপনার কাছে সাহায্য চাইতে পারছেন না। কিছু ঘটনার উল্লেখ করে সাহায্যে ধরন গুলি বুঝিয়ে বলা যাক।
প্রধান সড়কে কেউ ধরুন দুর্ঘটনায় আঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ে আছে। ঐ ব্যক্তিটি এতটাই গুরুতর আহত যে আপনাকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করতে পারছেন না। কিন্তু আহত ব্যক্তিকে যত শীঘ্র সম্ভব চিকিৎসা স্থানে নিয়ে যেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আপনি অবশ্যই আহত ব্যক্তিকে অযাচিতভাবে অর্থাৎ আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে পারেন। এই সাহায্য মহৎ সাহায্য।
একবার কিছু কেনার উদ্দেশ্যে আমি একটি মুদিখানা দোকানে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই অন্য আরেকজন ক্রেতা ওই দোকানে আসে। বেশভূষা দেখে ঐ ক্রেতাকে খানিকটা অসহায় এবং অর্থকষ্টে আছে এরকম মনে হচ্ছিল। সে দোকানদারকে 100 গ্রাম সরিষার তেল দিতে বলে। কিন্তু দাম দেওয়ার সময় এলে ওই ব্যক্তির কাছে 6 টাকার মতো কম পরে। দোকানদারকে সে বাকিতে দেওয়ার অনুরোধ করলেও দোকানদার তাতে রাজি হয়নি। এই ঘটনায় আমি খুব বিচলিত বোধ করি এবং তৎক্ষনাত ওই ব্যক্তির কম পরা 6 টাকা দিয়ে আমি তাকে 100 গ্রাম সরিষার তেল কিনতে সাহায্য করি। এই ৬ টাকা হয়তো বর্তমান সময়ে তেমন কোনো মূল্য রাখে না। কিন্তু ওই সময়ে ওই ছয় টাকা সাহায্য ওই অসহায় মানুষটিকে তার পরিবারের কাছে সম্মান বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। ঐ মানুষটি আমার কাছে কখনোই সাহায্য চায়নি। আমি নিজে থেকে যেচেই সাহায্য করেছিলাম। এরকম সাহায্য অবশ্যই মহৎ কাজ।
কিন্তু ধরুন কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বসে আছে। আপনি সেই সময়ে ওই শিক্ষার্থীকে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিলেন এবং আগামী দিনে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। আপনি তাকে হতাশা কাটিয়ে উড়তে সাহায্য করেছিলেন। এটাও এক প্রকারের সাহায্য….. মানসিক সাহায্য। কিন্তু আপনি জানেন না বয়সের কারণে ওই মেধাবী শিক্ষার্থীটি ভবিষ্যতে আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে পারবে না। আপনি এখানে সাহায্য করার মানসিকতা নিয়েই অগ্রসর হয়েছিলেন কিন্তু আপনি পুরো ঘটনা না জেনেই সাহায্য করতে যাওয়ায়, এটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতোই হয়ে গেল। তাই নয় কি? ওই শিক্ষার্থীটি আপনার পরামর্শকে কখনোই ভালোভাবে নেবে না। বরং সে আপনার উপর বিরক্ত হবে। এরকম সাহায্য কে বলা হয় অপ্রয়োজনীয় অযাচিত সাহায্য। এরকম সাহায্য করা থেকে সর্বদা বিরত থাকা উচিত। কারো ব্যর্থতায় শান্তনা দেওয়া জঘন্য কাজ। কোন মানুষের ব্যর্থতায় তাকে একা ছেড়ে দিন। ব্যর্থতার আঘাত সেই বুঝতে পারে যার জীবনে ব্যর্থতা ঘটেছে।
আশা করি এই উত্তরের পর আপনারা সকলে অপ্রয়োজনীয় অযাচিত সাহায্য করা থেকে দূরে থাকবেন এবং আপৎকালীন অযাচিত সাহায্য করার কাজে নিজেকে যুক্ত করবেন।