মানুষের গায়ের রং বদলায় কেন?
পৃথিবীর সব জায়গার জলবায়ু এক রকম নয়। স্থান বিশেষে আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে। মূলত এই কারণেই মানুষের গায়ের রং ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে আবহাওয়ার পার্থক্যের কারণে মানুষের গায়ের রং বদলাতেও পারে।
অনেক সময় দেখা যায় ছোটবেলার লাল টুকটুকে ফরসা গায়ের রং বড় হতে হতে কুচকুচে কালো হয়ে যায়। এটি হয়ে থাকে এ কারণে যে বড় হওয়ার সাথে সাথে ঘরের বাহিরে বের হলে সূর্যের আলোতে তার ত্বক পুড়ে যায়। ফলে ত্বক কালো হয়ে যায়। সকল মানুষের চামড়ার নিচে সবার রক্ত লাল হলেও বংশগতি, জলবায়ুর প্রভাব, জাতিগত সত্তার কারণে গায়ের রং আলাদা আলাদা। আবার কখনো কখনো নানা রোগ-বালাই, বিশেষ করে হরমোনের প্রভাবে গায়ের রঙে পরিবর্তন হতে পারে। রং পাল্টাতে পারে নানা ওষুধপত্রের প্রভাবেও।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা :
আমাদের ত্বকে রয়েছে মেলানোসাইট নামের বিশেষ কোষ, যেটি তৈরি করে মেলানিন নামের রঞ্জক পদার্থ। এই মেলানিনই ঠিক করে কার গায়ের রং কেমন হবে। মেলানিনের মাত্রা আবার নির্ভর করে জাতিসত্তা, বংশগতি, সূর্যালোকের উপস্থিতির ওপর। মেলানিন তৈরি বেড়ে গেলে ত্বকের রং গাঢ় বা কালো হয়ে যায়, যেমনটা ঘটে রোদে পুড়লে, আবার মেলানিন অস্বাভাবিক কমে গেলে রং ফ্যাকাসে সাদা হয়ে যাবে, যেমন শ্বেতী রোগে। এই মেলানিনকে প্রভাবিত করে দেহের কিছু হরমোনও।
কারণ :
রং কালো হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো রোদে পোড়া। ত্বককে রোদের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচানোর জন্য মেলানোসাইট মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, ফলে ত্বক কালো হয়ে যায়। ছোটবেলার ফরসা রং তাই বড় হতে হতে রোদে পুড়ে বাইরে ঘুরে ধীরে ধীরে কালচে হয়ে যায়। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অকার্যকারিতায় ধীরে ধীরে ত্বক, ত্বকের ভাঁজ, সন্ধির ওপর ও অনাবৃত স্থান কালো হয়ে যায়। একে বলে অ্যাডিসনস ডিজিজ। গর্ভকালীন হরমোনের প্রভাবে মুখে ও অন্যান্য স্থানে কালচে বর্ণ ধরে, একে বলে মেলাসমা। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলেও এমন হতে পারে। এ ছাড়া কেমোথেরাপি দিলে বা মিনোসাইক্লিন জাতীয় ওষুধের প্রভাবেও গায়ের রং কালো হয়ে যেতে পারে। লিভার সিরোসিস বা যকৃতের দীর্ঘমেয়াদি রোগে গায়ের রং কাদার মতো বর্ণ ধারণ করতে পারে। রক্তে লৌহ জমে যায় হিমোক্রোমাটোসিস নামের জেনেটিক জটিলতায়, যাতে লৌহ বিপাক মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এই রোগে লৌহ জমে গিয়ে দেহের রং তামার মতো হয়ে যায়, সঙ্গে ডায়াবেটিসও হয় বলে এর অপর নাম ব্রোনজ ডায়াবেটিস। স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিট্যান্সের কারণে দেহের ভাঁজে ভাঁজে, যেমন বগলে, ঘাড়ের ত্বক ঘোর কালো বর্ণ নেয়, একে বলে অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকেনস। নানা রকমের ক্যানসারের কারণে দেহের ত্বকের রং পরিবর্তিত হতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের অভাবে গায়ের রং হলদে ফ্যাকাশে দেখায়। আর জন্ডিসে তো হলুদ দেখায়।
এসব সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কারণেই মানুষের গায়ের রং দিনদিন বদলায়। এগুলো ছঅড়াও দেখা যায় রুপচর্চাতেও গায়ের রং আগের চেয়ে অনৈক বেশি উজ্জ্বল বর্ণ হয়েছে। কারণ হল গায়ে জমে থাকা ময়লা রুপচর্চার ফলে পরিস্কার হয়ে যায়। ফলে ফর্সা দেখায়।