মানুষ কীভাবে মানুষ হবে?

    মানুষ কীভাবে মানুষ হবে?

    Train Asked on February 1, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      মানুষকে জানতে হবে কিভাবে মানুষ হতে হয়। কিভাবে মানুষের মানবীয় বৃত্তিগুলো সাজিয়ে তুলতে হয়। যদি প্রশ্ন ওঠে কেন মানুষকে মানুষ হতে হবে? মানুষ আবার মানুষ হয় কিভাবে? এ জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে। ছিল অতীতে। এখনো। এবং থাকবে ভবিষ্যতেও। মানুষের মতোই পুরনো এ জিজ্ঞাসা। কালে কালে যুগে মানুষই মানুষকে ডেকেছে। ডেকে বলেছে হে মানুষ, তোমাকে মানুষ হতে হবে। এর কী অর্থ? কী গভীরতা! কী গাম্ভীর্য! এসব মিলেই প্রস্তুত হতে পারে এর জবাব। এখানে গভীরতা আছে। গাম্ভীর্যতা আছে। আছে এক নিবিড় চেতনাবোধক অর্থ।
      অবয়ব যখন মানুষের, তাকে তো মানুষ বলতেই হবে। আকারে মানুষ সে কারণেও বলতে হবে মানুষ। কিন্তু অবয়ব ও আকার মানুষের হলেই তাকে কি মানুষ বলা যায়? বলা যুক্তিসঙ্গত? নাকি বলা উচিত? গভীরভাবে এর জবাব হবে, না। আকার-অবয়ব মানুষের হলেই সে মানুষ নয়। বরং মানুষ হওয়ার যুক্তিগত বৈশিষ্ট্য জরুরি। মানুষের ভেতর পাশবিকতা বাস করে। পশুর স্বভাব থাকে, পশুর আচরণ থাকে। পশুর মতো ভোগের ঘটনা থাকে। কিন্তু পশুর গ্রহণ আর মানুষের গ্রহণের ব্যবধান সীমাহীন। কেননা মানুষের বিচার করার ক্ষমতা থাকে। বিচারিক দৃষ্টি থাকে। বুদ্ধির আয়োজন থাকে। আর থাকে স্বাধীনতার সাথে গ্রহণ-বর্জনের কারুকাজ। এ গ্রহণ ও বর্জনÑ দু’টি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কোনটি গ্রহণ করা উচিত আর কোনটি উচিত নয় এই বিবেচনাটাই জরুরি। গ্রহণ করলে কেন করবে? না করলেই বা কেন? দুটো বুঝতে হয়। বোঝে প্রকৃত মানুষ। যে মানুষ সত্যিই মানুষ হয় তার কোনো ভয় থাকে না। তার শত্রু থাকে না। তার প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে না। তার থাকে না হারানোর ভয়। পাওয়া না পাওয়ার আনন্দ-বেদনায় কাতর হয় না সে। সে কেবল তার দায়িত্ব পালন করে চলে। তার কর্তব্য সম্পাদনে অগ্রগামী সে। তার কাজে কে প্রশংসা করল, কে করল না এই সব ভাবার সময় থাকে না তার। কারো নিন্দা তাকে থামাতে পারে না। কোনো প্রশংসাও তাকে উচ্চে তোলে না। সে তার কাজের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠে। কাজই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কাজই তার সাফল্যের নমুনা। কাজ ছাড়া তার কাছে জীবনের আর কোনো অর্থ থাকে না। কাজেই জীবনকে গড়ে তোলে। এগিয়ে দেয়। পরিচয় করিয়ে দেয়। স্থান করে দেয় অন্যের মধ্যে। একজন সত্যিকার মানুষ কাজের ক্ষেত্রেও থাকেন বিবেকবান। কোন কাজ কার যায়। কোনটি যায় না। কোনটি প্রযোজন আর কোনটি প্রয়োজন নয় এটি ভালো করেই বোঝেন তিনি। বোঝেন কাজের উপকার-অপকারিতা। বোঝেন কাজের লক্ষ্য।
      আমরা মানুষ। মানুষ বলেই আমাদের আছে স্বাধীনতার এক আশ্চর্য নিশান। যা আমার বয়ে চলি। আগলে রাখি। ধারণ করি। আমাদের স্বাধীনতা যদি পশুর মতো হতো! তবে? তবে আমায় কখনো মানুষের তোকমা পেতাম বলে মনে হয় না। পশুর মতো যদি আমরা বিবেকহীন হই? তবে কি মানুষ হতাম! নিশ্চয় নয়। বিবেকহীনতাই পশুকে পশু করে তুলেছে। এখন যে মানুষ বিবেকহীন তাকে আমরা কেন মানুষ বলব? কিভাবে বলব? মানুষ বলা কি সঙ্গত? কোনোভাবেই কি মানুষ বলার যুক্তি আছে? এর জবাবও তাইÑ মানুষ বলা যাবে না
      যে মানুষ খুব সহজে অন্য মানুষকে খুন করে সেও কি মানুষ থাকে? নাকি থাকা উচিত। খুনি মানুষ হতে পারে না আর যারা ঠাণ্ডা মাথায় তিলে তিলে খুন করে তাদের কথা তো বলাই বাহুল্য। তারা পশুরও অধম। নিকৃষ্ট। তাদের হৃদয়বৃত্তি নেই। মন নেই। মানবিক সামান্য গুণও অবশিষ্ট থাকে না। থাকতে পারে না। মানুষ কী করে মানুষ খুন করে? এ বিস্ময় আসলে কাটে নাÑ এতটা নির্মম কী করে মানুষরূপী এসব দোপায়া হতে পারে, ভাবতেও অবাক লাগে।
      যারা মানুষ তারা তো মানুষের বিপদে ধেয়ে আসে। হাত বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের। পাশে থাকে। সাথে থাকে। মানুষের জন্য মানুষ সেই অর্থের পূর্ণতা দেয়। সেই অর্থকে মহিমান্বিত করে। বিপদে পড়া মানুষকে টেনে তোলে। রক্ষা করে। এগিয়ে দেয়। পথ দেখায়। পথ নির্মাণ করে।
      এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায় মানুষ। জীবনের সাথে থাকে জীবন। আশার সাথে ওড়ায় আশার আকাশ। স্বপ্নহীন মানুষের বুকে স্বপ্নের অমীয় ধারা ঢেলে তাকে নদীর মতো করে স্রোতবাহী। করে খরস্রোতা। মানুষ বেঁচে থাকার আকাশ দেখে। আশাবাদী মানুষ তো অন্যের স্বপ্নকে দীর্ঘ করে তুলতে পারে। অন্যের আকাক্সক্ষায় জ্বেলে দিতে পারে বাস্তবতার প্রদীপ। যে মানুষ মানুষের পক্ষে কাজ করে। যে মানুষ মানুষের জন্য কাজ করে। তার আয়োজনই অন্যরকম। তার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তার চলাফেরার ঢঙও পৃথক। মানুষ জানে এ মানুষটি মানুষের জন্যই বেঁচে থাকে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতেই তার বাঁচা। মানুষকে এগিয়ে দিতেই তার চলা। এমন মানুষ যদি শাসক হয় তবে সে শাসক হবে জগতের সেরা শাসক। সে শাসক হবে মানুষবান্ধব শাসক। এমন শাসকের হাতে মানুষ অত্যাচারিত হবে না। নিপীড়িত হবে না। বঞ্চিত হবে না। মানুষ বুঝে পাবে তার অধিকার। নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকবে না মানুষের। দ্বিধাহীনভাবে ছুটতে চলতে পারবে মানুষ। প্রতিষ্ঠা পাবে ন্যায়-নীতির শাসন। আদালত হবে মানুষের আশ্রয়স্থল। বিচারক হবেন নীতিবান। অন্যায় বিচার হবে না কোনোভাবেই। অন্যায়কারী যতই শক্তিশালী হোক সাজা সে পাবেই। শক্তির কাছে মাথা নোয়ানোর মতো মানুষ তিনি হবেন না।
      শাসক নীতিবান হলে সবচেয়ে বড় সুবিধা হয় মানুষের। সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয়। ন্যায়বিচারের বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকে না। এভাবে অন্যায়কারী শাস্তির মুখোমুখি হলে সমাজে অন্যায় কমে যায়। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি কমে যায়। একে-অন্যের প্রতি খড়গ নামিয়ে রাখে। খুন-খারাবি কমে আসে। মাদক চোরাচালান ও অবৈধ জিনিসের ব্যবহারও সীমিত হয়।
      একজন শাসক তো বিশাল ব্যাপার। তার ইচ্ছের অনেক মূল্য। তার দৃষ্টির অনেক দাম। তার কার্যপদ্ধতির বেশুমার গুরুত্ব। শাসকের ইচ্ছের কাছে সবাই নত হয়। চাহিদার কাছে সবাই নুয়ে আসে। শাসক যা ইঙ্গিত করেন তাই তামিল করেন তার অধীনস্থ মানুষ। সুতরাং একজন শাসকের যদি গুডউইল থাকে এবং এটি যদি তার অধীনস্থরা বুঝে উঠতে পারে, তবে অর্ধেক খারাপ ঘটনা আপনাতেই বন্ধ হয়ে যায়। যে শাসকের ব্যাপারে আমলারা জানবেন তিনি দুর্নীতিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেন না। তবে কি দুর্নীতি করার সাহস খুব সহজে করবেন কোনো আমলা? কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি? নিশ্চয় করবেন না। যদি কেউ করেন তার প্রতিকার যদি সাথে সাথে হয়ে যায় তবেই তো সুন্দরের পাখিগুলো উড়ে বেড়াবে আনন্দে।
      এসব মানুষকেই ভাবতে হয়। মানুষই ভাবে। মানুষই ভাববে। মানুষ না ভাবলে কে ভাববে?
      পশু পাখি? কোনো জন্তু? নাকি কোনো জানোয়ার? না। মানুষকেই ভাবতে হবে। মানুষকেই নিতে হবে পদক্ষেপ। মানুষের সমাজের কথা মানুষকেই ভাবা উচিত। মনে রাখতে হবে মানুষ না হয়ে কোনো উপায় নেই। কী হয় খারাপ হয়ে? অন্যের অধিকার লুট করে? অন্যকে বঞ্চিত করে? অন্যের অধিকার ছিনিয়ে কেউ সুখী হতে পারে না। হয় না। হবেও না। বরং সুখ যা থাকে সব উবে যায়। উড়ে যায়। ছুটে যায়। ঝরে যায়। অন্যায় জুলুম ও যন্ত্রণার ভেতর সুখ থাকে না। সুখের রেশও নয়। বরং থাকে আশ্চর্য দুঃখের ডামাডোল। থাকে কষ্টের অহেতুক কারণ। থাকে বেদনার যত আয়োজন। বেদনার অনলে পুড়ে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় সব। সবই দুঃখের দহনে ছাই হয়ে যায়। সুখের অনুভূতি দখল করে লোভের প্রকাশ।
      লোভ মানেই ভয়ঙ্কর বিষয়। লোভের জলে যাদের পা ডোবে, যাদের শরীর ডোবে, তাদের ধারে কাছে সুখের কিছু থাকে না। লালসার পাঁকে তারা ডুবতেই থাকে। ডুবন্ত এ মুখগুলো কারো আস্থায় বিশ্বাসে থাকে না। কেউ গ্রহণ করে না মন থেকে। কেউ না। বরং সবার খারাপ দৃষ্টি থাকে তার ওপর। সবাই তাকে মন্দ বলেই জানে। সে কী করে ভালো হবে বলুন। ভালো হওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? কোনো কারণ থাকতে পারে না। তাই তারা খারাপ হিসেবেই গণ্য সমাজে। খারাপ পরিণতিই অপেক্ষা করে তাদের জন্য।

      Professor Answered on February 1, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.