মানুষ কেন হাসে?

    মানুষ কেন হাসে?

    Train Asked on January 21, 2024 in মানবদেহ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      আমরা কেন হাসি?

      সব মানুষই হাসতে ভালবাসে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ দিনে অন্তত ১৭ বার হাসেন। হাসিকে ঘিরে কত সার্কাস, কমেডি মুভি, টিভি শোসহ কত ধরনের শিল্পের উদ্ভব ঘটেছে, তার ইয়ত্তা নেই।

      মজার সব কথা বা ঘটনাই আমাদেরকে হাসায়। তাই আমরা নানাভাবে মজা পেতে ভালবাসি। সে টাকা খরচ করে কমেডি মুভি দেখেই হোক বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েই হোক।
      হাসিকে আমরা সাধারণত মজার কোনো কৌতুকে সাড়া দেয়া মনে করলেও, হাসি আসলে এত সহজ নয়। হাসি মূলত একটি সামাজিক আচরণ। যখন আমরা একা থাকি তার তুলনায় মানুষের সংস্পর্শে থাকলে ৩০ গুণ বেশি হাসি। দার্শনিক জন মরিয়েল বিশ্বাস করেন, প্রাগৈতিহাসিক সময়ে সম্ভবত বিপদ থেকে মুক্তিলাভের পর স্বস্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে হাসির উদ্ভব হয়েছিল। অনেক গবেষকদের মতে, হাসি হচ্ছে দু’জন মানুষের পরস্পর সম্পর্ক তৈরি ও তা মজবুত করার হাতিয়ার। একজন মানুষের সংস্পর্শে এসে আরেকজন মানুষ তখনই হাসে, যখন যে স্বচ্ছন্দ, সুখী ও নিরাপদ বোধ করে। নৃতাত্ত্বিকদের মতে, কোনো একটি দলের সদস্যরা যত হাসবে, তারা পরস্পরের তত কাছে আসবে।

      দলের সদস্যদের কাছাকাছি আনে হাসি; Image Source: Laughter | Professional Speaker Australia| Laugher Works

      হাসি বিশেষজ্ঞ পিটার ডার্কস মনে করেন, হাসি হচ্ছে দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় একধরনের আচরণ। আমরা হাসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। হাসি সংক্রামকও বটে।
      গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোম্পানির বস, গোত্রপ্রধান বা পরিবার প্রধান তাদের অধীনস্থদের চেয়ে অনেক বেশি হাসিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে মরিয়লের ব্যাখ্যা হলো, “একটা দলের মধ্যে হাসি নিয়ন্ত্রণের অর্থ হচ্ছে দলের আবেগীয় অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা।”
      তাই, বলা যায়, হাসি শুধু রসিকতায় সাড়া দিয়ে কিছু শব্দের নির্গমন নয়, বরং এটি একটি জটিল সামাজিক আচরণ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, হাসি নিয়ে গবেষণার জন্য আস্ত একটি বিষয়ই তৈরী হচ্ছে, যাকে বলা হয় ‘হাসিবিজ্ঞান’ বা ‘জেলোটোলজি’। আমাদের জীবনে হাসির এমনিতেই অনন্য অবস্থান রয়েছে। নানান সময়ে আমরা নানান রকম হাসি হেসে থাকি।

      হাসির উপকারিতা

      বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। হাসি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। হাসলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন কমে যায়, ফলে স্ট্রেস কমে যায় এবং আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফোলতে পারি। হাসলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয় এবং আমাদের শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। হাসি রক্তচাপ কমায়, তাই এটি হৃৎপিন্ডের জন্যও ভালো দাওয়াই। হাসি নেতিবাচক আবেগ যেমন- রাগ, ক্ষোভ, বিষণ্ণতা প্রভৃতি হ্রাস করে। হাসির এই উপকারিতাগুলোর জন্য ডাক্তাররা আজকাল রোগীদের ‘লাফটার থেরাপি’ গ্রহণের পরামর্শ দেন। বিশ্বের নানা দেশে এই হাসি থেরাপি চর্চা করার জন্য গড়ে উঠেছে নানা ক্লাব।

      ক্লাবগুলোতে নানা বয়সের মানুষেরা নিয়ম করে বিচিত্র ঢঙে হাসাহাসি করে থাকেন। পৃথিবীতে আছে হাসি দিবসও। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম রবিবারে পালন করা হয় ‘বিশ্ব হাসি দিবস’।

      ২০২০সালের হাসি দিবস পালিত হয়েছে মে মাসের ৫ তারিখে ।

      হাসিতে এগিয়ে কারা?

      বাচ্চারা অবশ্যই সবচেয়ে বেশি হাসে৷ তারা প্রতিদিনই নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করে, এতে আনন্দ পায় এবং প্রচুর হাসে। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি হাসেন। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষেরা এমন নারীকে সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করেন, যিনি তার রসিকতায় বেশি হাসেন। অন্যদিকে, নারীরা এমন পুরুষদের পছন্দ করেন, যারা তাদেরকে হাসিখুশি রাখবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী নয়, যারা হাসতে পারে। অন্যান্য প্রাইমেট যেমন- শিম্পাঞ্জি, কুকুর, এমনকি ইঁদুরও কাতুকুতু দিলে হাসে ।

      হাসি পৃথিবী জোড়া একটি সার্বজনীন আচরণ। পৃথিবীর আরেক প্রান্তের কোনো মানুষ আপনার ভাষা হয়তো বুঝবে না, কিন্তু হাসি ঠিকই বুঝবে। সব জায়গাতেই, সব সংস্কৃতিতেই হাসি বন্ধুত্ব ও নির্ভরতার প্রতীক। তাই, হাসুন প্রাণ খুলে। নিজের জন্য, সবার জন্য!

      Professor Answered on January 21, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.