মিথ্যা বলা আর না বলার মধ্যে পার্থক্য আছে কী?

    মিথ্যা বলা আর না বলার মধ্যে পার্থক্য আছে কী?

    Add Comment
    1 Answer(s)

      গতকাল রাত তিনটার ঘটনা। আমি গভীর ঘুমে কিন্তু হুট করে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কোনো স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গল কিনা জানি না। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছে কে যেন আমার গলা টিপে ধরে রেখেছে। আমি খুব ছটফট করছি। অথচ সুরভি আমার পাশে শোয়া- কিন্তু আমি তাকে ডাকছি না। তাকে ডাকলেই সে আমাকে দেখে ভয় পেয়ে যাবে হয়তো! কান্নাকাটি শুরু করবে। মনে হচ্ছে আমি মরে যাচ্ছি। সময় শেষ। এত তাড়াতাড়ি! আমি নড়াচড়া করতে পারছি না। পুরো শরীর অসাড়। মনে মনে ভাবছি মৃত্যুর আগে সুরভিকে কিছু বলে যাওয়া দরকার। খুব কষ্ট হচ্ছে! খুব যন্ত্রনা! বুকের ভেতর যে কেমন করছে- বলে বুঝাতে পারবো না।

      ব্যাপারটা যদি এমন হতো- আমি ঠিক আছি। যা ঘটছে তা স্বপ্নে ঘটছে। আমি দুঃস্বপ্ন দেখছি। না এটা দুঃস্বপ্ন নয়। কারন মোবাইলে আমি সময় দেখলাম রাত তিনটা। মনে হচ্ছে আমি স্ট্রোক করেছি। কয়েক মাস আগে আমার এক বন্ধু সৌদিতে রাত তিনটায় স্ট্রোক করে মারা যায়। আমিও কি এখন মরে যাচ্ছি? নিজেকে নিজে বুঝাচ্ছি- না তোমার কিছু হয়নি। পেটে গ্যাস জমেছে। সেই গ্যাস গলার দিকে কিক মারছে। তাই বমি বমি ভাব হচ্ছে। রাতে ঘুমের আগে একটা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে এই সমস্যা হতো না। হে আল্লাহ তাই যেন হয়। স্ট্রোক যেন না করি। আমি মরে গেলে বউ বাচ্চাকে দেখবে? আমার তো ব্যাংক ব্যালেন্স কিচ্ছু নেই।

      সব মিলিয়ে দশ মিনিট হবে।

      কিন্তু আমার কাছে মনে হলো যেন অনন্তকাল ধরে আমি কোমায় চলে গিয়েছিলাম। যাই হোক, দশ মিনিট পর ওয়াশ রুমে গেলাম। নিঃশ্বাস বেশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আমি এক গ্লাস পানি খেয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। এখনও আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেনি। জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলাম পরী আর সুরভি দু’জনেই বাম গালের উপর, বাম হাত রেখে, বাম পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে বেশ আরামের ঘুম দিচ্ছে। এক কাপ চা খেতে পারলে ভালো লাগতো। সুরভিকে বললে সাথে সাথে চা করে দিবে। অবস্বাদ ভাবটা কাটানোর জন্য সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে সিগারেট খাচ্ছি না। দূরে কোথাও কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে। এখন আর বিছানায় যাবো না। আকাশ ফর্সা হলে ছাদে যাবো।

      যদি সত্যি সত্যি মরেই যেতাম! কেউই জানতো না। কেউ হয়তো খোঁজও করতো না। তাছাড়া আমি তো বিখ্যাত কেউ না। কোনো টিভি চ্যানেল বা পত্রিকায় আসতো না আমার মৃত্যুর খবর। তবে মৃত্যু আমাকে দেখা দিয়ে গেছে। আমার বাড়ি চিনে গেছে। সে আবার আসবে। আসবেই। সে আমাকে না নিয়ে ছাড়বে না। অন্তত আমার তাই-ই মনে হচ্ছে। তবে আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না। অনেক কাজ বাকি আছে। চল্লিশ বছরও এখনও হয়নি আমার। মৃত্যু বড় অদ্ভুর জিনিস! সে কোনো কিছুর পরোয়া করে না। তার কাছে ধনী গরীব নেই। হুট করে চলে আসবে একদিন, তারপর চিলের মতোন ছো মেরে নিয়ে যাবে।

      তোমার সময় শেষ। সময় শেষ। খুব ক্লান্ত লাগছিল। বিছানায় মাথা রাখলাম। সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম। গভীর ঘুম। স্বপ্ন শুরু হলো। আমি একটা হাতিটার পিঠে উঠে বসলাম। হাতিটা চলতে শুরু করলো। হাতির পিঠে চড়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা জঙ্গলে চলে এলাম। চারিদিক গাঢ় সবুজ। নানান রকম গাছপালা। প্রতিটা গাছ আমার অচেনা। গাছের পাতা গুলো অনেক বড় বড়। অসংখ্য নাম না জানা ফল আর ফুল। আকাশে বিশাল একটা চাঁদ। চাঁদ কি এত বড় হয়! চারিদিকে চাঁদের তীব্র স্বচ্ছ আলো। চাঁদের আলোতে খেলা করছে খরগোশ আর কাঠবিড়ালি। আর তিনটা ময়ূর খুব নাচছে। জায়গা খুব সুন্দর। আমি মনে মনে ভাবলাম- সুরভিকে এখানে নিয়ে আসবো একদিন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পেলাম। জঙ্গলের ভেতর থেকে একলোক ছুটে এলো আমার সামনে। বলল, আপনার একটা চিঠি এসেছে। লোকটাকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, সে ইমাম সাহেবদের মতো আচকান পড়েছে।

      আমি বললাম- আপনি কি পোষ্টম্যান?

      হ্যাঁ। এই নিন আপনার চিঠি। আমার আরও চিঠি বিলাতে হবে। যাই।

      খামের চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখি, খামের মুখটা খোলা। চিঠিটা বের করে দেখলাম। চিঠিতে কিছু লেখা নেই। পুরোটাই সাদা। আমার খুব রাগ হলো। আমি চিঠিটা কুঁচিকুঁচি করে ছিঁড়ে ফেলাম।

      Professor Answered on January 27, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.