মিশরের আলেমরা দাড়ী রাখেনা কেন?

মিশরের আলেমরা দাড়ী রাখেনা কেন?

Train Asked on September 17, 2015 in ইসলাম ধর্ম.
Add Comment
1 Answer(s)

    সরকারী ভাবে মিশরে দাড়ি বড় রাখা নিষিদ্ধ  এজন্য তারা বড় রাখতে পারে না  !
    প্রথমে একটি হাদিস দেখি:
    যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহাব্বত করল সে
    যেন আমাকেই মুহাব্বত করল। আর যে আমাকে
    মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে
    বসবাস করবে।
    (তিরমিযী শরীফ, মেশকাত- পৃ: ৩০)
    দাঁড়ির হুকুম ও পরিমাপ:
    ইসলামী শরীয়তে একমুষ্টি পরমান লম্বা দাঁড়ি
    রাখা ওয়াজিব বা আবশ্যক। দাঁড়ি এক মুষ্টির
    কম রাখা বা একেবারে তা মুন্ডিয়ে
    সর্বসম্মতিক্রমে হারাম এবং কবীরা গুনাহ।
    স্বয়ং হুজুর স. এর দাঁড়ি রাখা এবং তার
    অসংখ্য হাদীসে উম্মতের প্রতি দাঁড়ি রাখার
    সাধারণ নির্দেশই প্রমান করে যে, দাঁড়ি
    রাখা ওয়াজিব এবং না রাখা হারাম। কারন,
    শরীয়ত প্রবর্তক কর্তৃক কোন বিষয়ের প্রতি
    সাধারন নির্দেশ হলে তা পালন করা
    ওয়াজিব এবং বিপরীত করা হারাম হয়ে যায়।
    আরে এটা ফিক্বাহ শাস্ত্রের একটি
    মূলনীতিও বটে। এছাড়া সাহাবা, সালফে
    সালেহীন এবং ফুক্বাহাগণের দাঁড়ি রাখার
    নিরবচ্ছিন্ন আমল এবং তাদের বিভিন্ন
    উক্তিসমূহের দ্বারাও এক মুষ্টি পরিমাপ
    লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং এর বিপরীত
    করা হারাম প্রমাণিত হয়।
    নিম্নে দাঁড়ি সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস,
    সাহাবাগণের আমল ও ফুক্বাহাগণের
    উক্তিসমূহ উল্লেখ করা হল:
    হাদীস শরীফে দাঁড়ি:
    ১. হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূল স. ইরশাদ
    করেছেন, দশটি বিষয় সকল নবী রাসূলগণের
    সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাঁড়ি
    লম্বা করা অন্যতম।
    (মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
    ২. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল
    স. ইরশাদ করেছেন, তোমরা গোঁফ কাট এবং
    দাঁড়ি লম্বা কর, আর অগ্নিপূজকদের
    বিরোধিতা কর।
    (মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
    ৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে
    বর্ণিত। রাসূল স. ইরশাদ করেন, মুশরিকদের
    বিরোধিতরা কর, দাঁড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ
    ছোট কর।
    (বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, মুসলিম)
    ৪. হুজুর স. বলেছেন যে, তোমরা ভালভাবে
    গোঁফ কাট এবং দাড়ি বাড়াও। (বুখারী শরীফ)
    ৫. হুজুর স. এরশাদ করেন যে, গোঁফ কাট এবং
    দাড়ি ছড়িয়ে রাখ। (কাজী এয়াজ শরহে
    মুসলিম নববী)
    ৬. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে
    আকরাম স. ইরশাদ করেন, দাড়ি বাড়াও , গোঁফ
    কাট এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের
    সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা। (মাসনাদে আহমদ)
    ৭. নবী করীম স. এর আমল দ্বারাও দাড়ি
    প্রমান পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে বর্ণিত
    আছে যে, সাহাবী হযরত খাব্বাব রা.-কে
    কেউ জিজ্ঞেস করেন, হুজুর পাক স. কি
    জোহর ও আছর নামাযে কেরআত পাঠ করতেন?
    তিনি বলেন, হ্যা, পাঠ করতেন। লোকটি
    পুন:প্রশ্ন করেন, আপনি কিভাবে তা বুঝতেন ?
    তিনি বলেন হুজুর স.-এর দাড়ি মুবারকের
    দোলায় আমরা বুঝতাম যে, তিনি কিরআত
    পাঠ করছেন। (তাহাবী শরীফ)
    বলাবাহুল্য, কেরআত পাঠকালে ঐ দাড়ি
    দোলাই পরিদৃষ্ট হবে, যা যথেষ্ট দীর্ঘ হয়,
    ছোট ছোট দাড়ি কখনো দুলবে না।
    এক নজরে দাড়ি:
    ১. দাড়ি বাড়াও। (বুখারী, মুসলিম শরীফ)
    ২. দাড়ি পূর্ণ কর। (মুসলিম শরীফ)
    ৩. দাড়ি ঝুলন্ত ও লম্বা রাখ। (মুসলিম শরীফ)
    ৪. দাড়ি বহার রাখ। (মাজমাউল বিহার)
    ৫. দাড়ি বেশী রাখ (বুখারী, মুসলিম)
    ৬. দাড়িকে ছাড়, অর্থাৎ কর্তন করো না।
    (তাবরানী)
    দাঁড়ি ও সাহাবায়ে কেরামের আমল :
    ১.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.যখন হজ্জ্ব
    বা উমরা আদায় করতে, তখন স্বীয় দাঁড়ি মুষ্টি
    করে ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে
    ফেলতেন।
    (বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫)
    ২. হযরত আবু হুরায়রা রা. স্বীয় দাঁড়ি ধরতেন,
    অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।
    (মুসান্নাফ লি-ইবনি আবি শাইবা- ১৩/১১২)
    দাঁড়ি ও ফুক্বাহাদের উক্তি:
    ১. হানাফী মাযহাবের কিতাব শরহে মুনহাল ও
    শরহে মানজুমাতুর আদবের মধ্যে লিখেছেন,
    নির্ভরযোগ্য ফতোয়া হল দাড়ি মুন্ডানো
    হারাম।
    ২.মাওলানা আশেকে এলাহী মিরাঠী রহ.
    তার প্রণিত “’”দাড়ি কী কদর ও কীমত”
    কিতাবে চার মাজহাবের ফক্বীহগণের
    মতামত শাফেয়ী মাজাহাবের প্রামান্য গ্রন্থ
    “আল ওবাব” হতে উদ্বৃত করেছেন :
    ইমাম ইবনুর রাফ’আ বলেন, ইমাম শাফেয়ী রহ.
    “আলউম্ম” কিতাবে লেখেন যে, দাড়ি কাটা
    হারাম।
    ৩. মালেকী মাজহাব মতেও দাড়ি মুন্ডন করা
    হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত
    ছেটে ফেলাও হারাম। (কিতাবুল ওবদা)
    ৪. হাম্বলী মাজহাবের কিতাব “শাহহুল
    মুন্তাহা” ও “শরহে মুজ্জুমাতুল আদব” এর
    উল্লেখ হয়েছে যে, নির্ভরযোগ্য মত হল দাড়ি
    মুন্ডন করা হারাম।
    অনুরূপ অন্যান্য গ্রন্থাকারও দাড়ি রাখা
    ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মাননীয় ইমামদের
    ইজমা (ঐকমত) বর্ণনা করেছেন।
    দাড়ি কর্তনকারী আল্লাহ পাকের
    দুশমনদের মধ্যে গণ্য হওয়ার সম্ভাবনা:
    ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. নিজ রচিত
    “কিতাবুজ্জুহুদে” আকীল ইবনে মোদরেক
    সালামী হতে উদ্ধৃতি করেন যে, আল্লাহ
    জাল্লা শানুহু বনী ইস্রাইলের এক নবীর নিকট
    এই অহী প্রেরন করেন যে, তিনি যেন নিজ
    কওম বনী ইস্রাইলকে এ কথা জানিয়ে দেন
    যে, তারা যেন আল্লাহ তা’য়ালার দুশমনদের
    বিশেষ খাদ্য শুকরের গোশত না খায় এবং
    তাদের বিশেষ পানীয় অর্থাৎ শরাব(মদ) পান
    না করে এবং তাদের শিক্ল ছুরত (আকৃতি) না
    বানায়। যদি তারা এমন করে অর্থাৎ শুকরের
    গোশত খায়, বা মদ পান করে, অথবা দাড়ি
    মুন্ডায় বা ছোট করে (ফ্রেন্সকাট করে)
    অথবা বড় বড় মোচ রাখে, তা’হলে তারাও
    আমার দুশমন হবে, যেমন তারা আমার দুশমন।
    (দালায়েলুল আসর)
    কওমে লূতের নিন্দনীয় বৈশিষ্ট্য ও ধ্বংসের
    কারন:
    প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আসাকেরসহ আরো
    কতিপয় মুহাদ্দিস হযরত হাসান রা. হতে নবী
    করীম স. এর এই মুবারক হাদীস বর্ণনা করেন
    যে, দশ প্রকার পাপে লূত সম্প্রদায় ধ্বংস
    হয়েছিল; তন্মধ্যে দাড়ি কাটা, গোঁফ বড়
    রাখা অন্যতম।
    আল্লাহ সুবানুহুতা’’য়ালা আমাদের সকলকে
    দাঁড়ি রাখার গুরুত্ব অনুধাবন করে যারা এখন
    দাঁড়ি রাখিনি তাদের দাঁড়ি রাখার তৌফিক
    দান করুন
    এবং যারা দাঁড়ি সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য
    করেন তাদের হেদায়াত দান করুন। আমীন।

    Professor Answered on September 17, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.