মেয়েদের কাছে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ বলতে কী বোঝায়?
বর্তমান যুগে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ বলতে আমরা কি বুঝি? স্যুট-টাই পরা, পরিপাটি চুলওয়ালা, চকচকে তকতকে ত্বকবিশিষ্ট, রোলেক্স ঘড়ি হাতে দেয়া, বিএমডব্লিউ তে চড়া, পার্ফেক লুকের পুরুষদের আমরা ব্যক্তিত্ববান হিসেবে দেখি। মেয়েরাও দেখি প্রেমিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব গুনকেই প্রাধান্য দেয়।
ছোটবেলায় দেখতাম দাড়ি রাখা ফ্যাশনেবল ছিলনা। শাহরুখ খান, হৃত্তিক রোশানদের মত সুদর্শন নায়কদের তরুনরা পদে পদে অনুসরণ করতো। তারা কেউই দাড়ি রাখতো না, ক্লিন শেভড হয়ে পর্দায় হাজির হতো। তাই ক্লিন শেভ ছিল সে যুগের ফ্যাশন। কেউ দাড়ি রাখলে তাকে আদু ভাই, দেবদাস, রাস্তার ফকির, মাস্তান, বুড়ো উপাধি দেয়া হতো। মোটকথা সেই যুগে ক্লিন শেভ মানে ছিল ফ্যাশনেবল আর দাড়ি রাখা মানে ছিল ওল্ড ফ্যাশন।
উপরের দু’টো প্যারার মিল কোথায় জানেন? এখনো ধরতে পারেননি? আচ্ছা কোনটা ফ্যাশনেবল আর কোনটা ফ্যাশনেবল না এটা ঠিক করে কে বা কারা? এর পিছনে আছে অনেক বড় বড় কর্পোরেশন, আর মিডিয়া। আজ থেকে বিশ বছর আগেও যদি কেউ ছেঁড়া প্যান্ট পরতো , তাকে লোকে পাগল কিংবা ভিক্ষুক বলতো। আজ ছেঁড়া প্যান্ট হয়ে গেছে ফ্যাশন।
তাই বুঝতেই পারছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষের যে ডেফিনিশন আমাদের গেলানোর চেষ্টা করে তা প্রকৃত সত্য এর থেকে আলাদা। এবার চলুন জানা যাক কিভাবে একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ হবো।
একবার চিন্তা করুন তো, আমাদের পূর্বপুরুষরা কেমন ছিল? তারা শিকার করতো, সাহসী ছিল, নিজের পরিবারের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে নিজের প্রাণের ঝুঁকি পর্যন্ত নিতো, কাজে ক্ষেত্রে হিংস্র ও ছিল তারা। বনের বাঘ-সিংহের সাথে লড়াই করা ছিল তাদের নিত্যদিনের ব্যাপার। কিন্তু আজকালের ছেলেরা কুকুর দেখলেই ভয়ে পালায়। এমন কেন হলো? যাদের পূর্বপুরুষেরা এত নির্ভীক বীর্যবান ছিল, তাদের এমন পরিণতি কেন হলো? উত্তর সহজ। মিডিয়া পুরুষদের নপুংসক বানিয়েছে। কিভাবে বানিয়েছে? মিডিয়া বলছে চুলে জেল লাগাও, তা না হলে তোমাদের সুন্দর লাগবেনা, সবাই দল বেধে জেল লাগানো শুরু করলো। মিডিয়া বললো পুরনো কাপড় পরলে তুমি খ্যাত বলে পরিগনিত হবে, সবাই সে কথা মেনে নতুন নতুন কাপড় পরতে লাগলো। কেউ যদি পুরনো কাপড় পরেও, সবাই লাগে লজ্জা দিতে লাগলো। মিডিয়া বললো মুখে ক্রিম ঘসো, তা না হলে তোমাকে সুন্দর লাগবেনা। ছেলেরা সেটাও করা শুরু করলো।
এবার দেখা যাক আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ফ্যাশনের দিক দিয়ে কেমন ছিল। তারা এতটা পরিপাটি ছিলনা। তারা এত ময়েশ্চারাইজার গালে ঘসতো না কিংবা চুলে জেল লাগাত না। তাদের ছিল লম্বা দাড়ি, অপরিপাটি চুল। তাই বলে কি নারীরা তাদের পছন্দ করতো না? অবশ্যই করতো। তখনকার নারীরা জীবনসঙ্গী বাছাই করার সময় দেখতো সে কত সাহসী আর শক্তিশালী, লুক তাদের কাছে মূখ্য ছিলনা।
জনপ্রিয় এনিমেশন সিরিজ শ্রেক দেখেছেন নিশ্চয়ই। ওই যে আগুনে ঘেরা প্রাসাদের থেকে ঘুমন্ত রাজকন্যা কে বাঁচানোর জন্য প্রিন্স চার্মিং যায়, প্রিন্স চার্মিংয়ের চুমোতে রাজকন্যার ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু বিপত্তি হলো, এই প্রিন্স চার্মিং সুদর্শন নয়। সে এক সবুজ দৈত্য। সে আসলে কোনো রাজপুত্র ও নয়। তাকে অন্য এক রাজা পাঠিয়েছে রাজকন্যা কে উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু রাজা নিজে কেন আসলোনা? যে রাজা তার ভালোবাসার জন্য নিজের জীবনের ঝুকি নিতে পারেনা সে আর যাইহোক সুপুরুষ হতে পারেনা। রাজা তার রাজ্যে বানিয়েছে বিশাল অট্টালিকা। কিন্তু এত বিশাল অট্টালিকা বানিয়ে সে তার কোনো বিশেষ ত্রুটি কে ঢাকার চেষ্টা করছে না তো? উত্তর হচ্ছে হ্যা। রাজা নিজে বামুন। তাই সে নিজের উচ্চতার ত্রুটিকে ভুলাবার জন্য উচু উচু প্রাসাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। এবার পাঠকরা একটা জবাব দিন তো। কুৎসিত সবুজ রণয়ের শ্রেক যে কিনা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, আগুনে ঘেরা প্রাসাদ থেকে ড্রাগনের হাত থেকে রাজকুমারীকে উদ্ধার করেছে সে সুপুরুষ, নাকি সেই রাজা যার উচু উচু প্রাসাদ আছে, কিন্তু যার রাজকুমারীকে বাচানোর সাহস নাই সে সুপুরুষ? সিদ্ধান্তটা আপনাদের বিচারের উপর ছেড়ে দিলাম।
দেখুন আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি বলছিনা আপনি অপরিপাটি হয়ে যান। আমি বলছিনা একমাস গোসল করে না থাকলে, দাড়ি বাড়ালে আপনি সুপুরুষ হয়ে যাবেন। বরং আমি বলছি, কোথাও পুরনো কাপড় পরে যেতে লজ্জা পাবেন না। কারণ পোশাক আপনার আসল পরিচয় নয়, আপনার আসল পরিচয় আপনার গুণ, মেধা, যোগ্যতা। অতএব গুণের দিকে নজর দিন। তাহলে সঠিক সময়ে সঠিক মেয়ে আপনাকে খুজে নিবে। আর যেসব মেয়ে আপনার গুনের জন্য নয়, বরং আপনার পোশাকের জন্য আপনাকে পছন্দ করবে, সে সঠিক মেয়ে নয়।
আর বোনেরা, আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি, যে ছেলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিপাটি, বুঝে নিবেন সে তার কোন ত্রুটি বা দুর্বলতার জন্য ওভারকম্পেনসেট করছে করছে। যেসব ছেলে কথায় কথায় সরি বলে, মিনমিনে স্বভাবের, নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেনা, কোনো ব্যাপারে না বলার সাহস রাখেনা, তাকে জীবনসঙ্গী বানাবেন না। সে আর যাই হোক সুপুরুষ নয়।