যন্ত্রণাদায়ক পিরিয়ড কেন হয় এবং কাদের হয়?
যন্ত্রণাদায়ক পিরিয়ড কেন হয় এবং কাদের হয়?
ঋতুস্রাব বা ঋতুচক্র বা মাসিক মেয়েদের জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতিমাসে ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বানু নিষিক্ত হতে জরায়ুতে অবস্থান নেয়। কিন্তু তা নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে নিষিক্ত না হলে এই ডিম্বানু জরায়ুর ভেতরে একে ধারণ করার জন্য গড়ে ওঠা রক্তনালীকার ধ্বংসাবশেষের সাথে মিশ্রিত হয়ে পচা রক্ত হিসেবে সারভিক্স বা জরায়ু মুখের একটি ছোট ফোকর থেকে বের হয়ে যোনিপথে দেহের বাইরে বের হয়ে আসে। এটি যৌবনপ্রাপ্তির পর মেয়েদের জীবনে একটি নিয়মিত ঘটনা।
পিরিয়ডের সময় কিছুটা ব্যথা, অস্বস্তি, ক্র্যাম্পিং (মাংস জমাট বেধে ব্যথা হওয়া) ইত্যাদি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু প্রতিবার মাসিকের সময় অত্যাধিক ব্যথায় কোনো মেয়ের স্বাভাবিক জীবনধারা ব্যহত হয়ে যায়; যেমন স্কুল, কলেজ বা অফিসে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া, তাহলে এটি মোটেও আর স্বাভাবিক কোনো ঘটনা বা হেলাফেলার বিষয় থাকেনা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাবকে ডিস্মেনোরিয়া (Dysmenorrhea) বলে। একে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়- প্রাইমারি ডিস্মেনোরিয়া এবং সেকেন্ডারি ডিস্মেনোরিয়া। কোনো নারী যদি ঠিক ঋতুস্রাবের পূর্বে এবং ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন কিন্তু এছাড়া বাকি সময় সুস্থই থাকেন, তাকে প্রাইমারি ডিস্মেনোরিয়া বলে। আর যেসব নারীদের স্বাভাবিকভাবে মাসিক শুরু হয়ে পরবর্তীতে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে একে বলা হয় সেকেন্ডারি ডিস্মেনোরিয়া। এই সমস্যাটা সাধারণত জরায়ুকে এবং অন্যান্য শ্রোনীদেশীয় (Pelvic)বা তলপেটের অঙ্গগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারকারী সমস্যার সাথে যুক্ত।
কারা আছেন অধিক ঝুঁকির মাঝে?
ঋতুস্রাব প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নাও থাকতে পারে। তবে কিছু কিছু নারী এই যন্ত্রণাদায়ক ঋতুচক্রের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকির মাঝে থাকেন। যারা এই ঝুঁকির ভেতর থাকেন তারা হলেন-
• যাদের বয়স ২০ বছরের চাইতে কম।
• যাদের পরিবারে যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাবের ইতিহাস আছে, অর্থাৎ মা, খালা, ফুফু, দাদু, নানু- এদের কারোর এই সমস্যা ছিল বা আছে।
• যারা ধূমপান করেন
• যাদের প্রতিবার মাসিকের সময় অনেকবেশি রক্তক্ষরণ হয়।
• যাদের মাসিক অনিয়মিত।
• যাদের কখনও কোনো বাচ্চা হয়নি।
• যারা সঠিক বয়েসের আগেই বয়ঃসন্ধি লাভ করেন, অর্থাৎ ১১ বছরের আগেই যাদের মাসিক আরম্ভ হয়ে যায়।
নারীদেহে প্রোস্টোগ্ল্যান্ডিন নামক হরমোন জরায়ুর মাংসপেশির সংকোচন ঘটায়, যাতে করে জরায়ু থেকে প্রতিমাসে রক্তজালিকাগুলি বের হয়ে আসে। এই সংকোচন যন্ত্রণা এবং ফুলে ওঠার (Inflammation) কারণ হতে পারে। যে নারীর দেহে যত উচ্চমাত্রায় প্রোস্টোগ্ল্যান্ডিন ক্ষরিত হয়, তিনি পিরিয়ডের সময় তত উচ্চমাত্রায় যন্ত্রণা এবং ক্র্যাম্পিং অনুভব করেন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি ডিস্মেনোরিয়ায়ও কিছু রোগের কারণে যন্ত্রণাদায়ক মাসিক হয়ে থাকে-
• মাসিক পূর্ববর্তি অসুস্থতা (Premenstrual Syndrome সংক্ষেপে PMS)
• Endometrosis (একটি যন্ত্রণাদায়ক শারীরিক অসুস্থতা, যেখানে জরায়ুর ভেতরের রক্তজালিকার কোষোগুলি দেহের অন্য অংশে জন্মাতে শুরু করে।)
• জরায়ুতে Fibroid (একধরণের টিউমার যা পরবর্তিতে কখনও ক্যন্সারে রূপ নেয় না) জন্মান।
• শ্রোণিদেশীয় ফুলে ওঠা রোগ (Pelvic inflammatory Disease), জরায়ু (Uterus), ডিম্বনালী (Fallopian tubes), অথবা ডিম্বাশয় (Overies) -এর সংক্রমণ, যা যৌনবাহিত রোগের (Sexually Transmitted Disease) কারণে প্রায়ই হয়ে থাকে।
• যৌনবাহিত রোগ।
• অ্যাডেনোমায়োসিস (Adenomyosis ), একটি বিরল অসুস্থতা যাতে, জরায়ুর ভেতরের নালীকাগুলো জরায়ু প্রাচীরের পেশীর অভ্যন্তরে জন্মায়।
• Cervical stenosis, আরেকটি বিরল অবস্থা যাতে সারভিক্স (জরায়ুমুখ) এতই ছোট হয় যে তা মসিকের প্রবাহকে ধীর করে দেয়।
• কিছু কিছু ধরণের গর্ভনিরোধক, বিশেষ করে জরায়ুর ভেতর তামা নির্মিত যেসব নিরোধক (Intrauterine devices বা সংক্ষেপে IUD) ব্যবহার করা হয়, মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্যথার সৃষ্টি করে থাকে।