যারা রাত জেগে কাজ করি, তাদের রাত একটু গভীর হলেই খিদে পেয়ে যায়। এ রাতের খাবার কেমন হওয়া উচিত?
যারা রাত জেগে কাজ করি, তাদের রাত একটু গভীর হলেই খিদে পেয়ে যায়। এ রাতের খাবার কেমন হওয়া উচিত?
ঘুমাবার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সেরে নেয়া উচিত ডিনার… ইত্যাদি ইত্যাদি আমরা যাই বলি না কেন, নিজের বেলায় মানি কি উপদেশটা? একদমই না। সারাদিনের শেষে অনেকেই দেখা যায় রাত করে বাসায় ফিরছি, ক্লান্ত শরীর- মন নিয়ে যেটাই হাতের কাছে পাচ্ছি খেয়ে নিয়ে সোজা বিছানায়। বিশেষ করে যারা একলা থাকি, তাদের তো কথাই নেই। দিনের শেষে খাবারের দিকে মনযোগ দেয়া হয়ে ওঠে না একদমই।
আবার যারা রাত জেগে কাজ করি, তাদের ব্যাপারটা কিন্তু আরও ভয়াবহ। জলদি ডিনার সেরেও লাভ হয়না তাদের ক্ষেত্রে। দেখা যায় রাত একটু গভীর হলেই খিদে পেয়ে যায়। কিংবা খিদে না পেলেও কিছু একটা খাবার জন্য মনটা ভারী আনচান করে। আর তখন কি খাওয়া হয়? চানাচুর, বিস্কিট, মিষ্টি জাতীয় খাবার কিংবা ভাজাপোড়া। আর খেয়েই ঘুম। খাবারটা হজম হবার পর্যন্ত সুযোগ পায়না। যাদের অল্পতেই মুটিয়ে যাবার প্রবণতা, তাদের কথা বাদই দিন। যারা স্বাভাবিক ওজনের মানুষ বা হ্যাংলা পাতলা, তারাও কিন্তু এই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বেশ কয়েক কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেলতে পারবেন দ্রুত।
তাই বলে কি খিদে পেলেও না খেয়ে থাকতে হবে? মোটেই না! একদমই না!
আপনাকে না খেয়ে থাকতে বলেছে কে, কেবল একটু বুঝে খাবেন। গভীর রাতে খাওয়া দাওয়ার জন্য এমন কোনও খাবার বেছে নিবেন, যা কিনা হজমে বেশি সমস্যা হয়না। সহজ পাচ্য খাবার কেবল যে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবে তাই নয়, বরং এসিডিটি আর বদহজমের সমস্যা থেকেও রেহাই দিবে। রাতে খাবার সময় একটি ব্যাপার সব সময় মনে রাখবেন যে শোবার আগে যেটাই খাচ্ছেন না কেন, তার সিংহভাগই কিন্তু বাড়তি ক্যালোরি রূপে জমে যাচ্ছে আপনার শরীরে। আমরা যারা সহজে মোটা হয়ে যাই, তাদের অনেকেরেই বাড়তি ওজনটা আসে রাতের বেলায় না বুঝে খাওয়া দাওয়া করার অভ্যাস থেকে।
তাহলে কী খাবেন রাতের বেলা?
– যদি কাজের ফাঁকে সত্যিকারের খিদে পেয়েই যায়, তাহলে ভাজাভুজি না খেয়ে ফল খেতে পারেন। ফল খেতে ভালো লাগলে তার সাথে ঘন টক দই আর সামান্য চিনি মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন স্বাস্থ্যকর ফলের সালাদ। টক দই খেতে না চাইলে কেবল ফল, লেবুর রস, অল্প চিনি আর বিট লবণ ছিটিয়ে নিলেও হয়ে যাবে আপনার সালাদ তৈরি। আপনার পছন্দমতন যে কোনও মৌসুমি ফল ব্যবহার করতে পারেন। শসা, গাজর, টমেটো ইত্যাদি মিলিয়ে নিলেও চমৎকার লাগবে খেতে।
– যদি এমন হয়ে থাকে যে রাতের খাবার খাওয়া হয়নি, এদিকে রাতও বেশ হয়ে গেছে। তখন কেবল সালাদে শরীরের চাহিদা মিটবে না। একটুখানি প্রোটিন, একটু শ্বেতসার লাগবেই খাদ্য তালিকায়। তাই বলে ভাত খেতে বসে গেলেও চলবে না। গভীর রাতে খাওয়া ভারী খাবার হজম তো হয়ই না, উলটো গ্যাস বা বদহজম জাতীয় সমস্যা তৈরি করে। এমন পরিস্থিতিতে রুটি খেতে পারেন সবজি বা মাছ/ মাংস দিয়ে। হাতে গড়া রুটি না থাকলে খেয়ে নিন নাহয় পাউরুটি।
– রাতের বেলা খেতে গিয়ে কখনোই ইনস্ট্যান্ট নুডুলস বা ২ মিনিটের নুডুলস এর দিকে যাবেন না। বাড়তি ক্যালোরি তো বটেই, এগুলো স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো নয়। গরম পানি ঢেলে দিলেই তৈরি হয় যে কাপ নুডুলস, তাতে মূলত থাকে একটি মোমের আবরণ। গরম পানিতে এই মোম গলে যায় আর নুডুলস খাবার উপযোগী হয়। সুতরাং ভুলেও সেইসব সংক্ষেপ খাবারের মাঝে সমাধান খুঁজবেন না।
– খিদে বেশি পেলে খেয়ে নিতে পারেন চিকেন বা এগ স্যান্ডুইচ। মেয়নিজ খেতে না চাইলে এখানেও ব্যবহার করতে পারেন টক দই। এক টুকরো স্যান্ডুইচ সাথে একটু ফল বা সালাদ- বানাতে ঝামেলা নেইউ, আবার শরীরের চাহিদাও পূরণ করতে পারবেন। বাদামী রুটি হলে আরও ভালো হয়।
– এছাড়াও খেতে পারেন এক গ্লাস দুধ এবং সাথে বাদাম, আখরোট, কিসমিস। আপনি মধ্যবয়সী হয়ে থাকলে তো এটা আপনার কাজে আসবে আরও বেশি।
– মধ্যরাতের খাবারে কেবল নয়, দিনের যে কোনও খাবারেই চিনির বদলে মধু ব্যবহার করতে পারেন। চিনির তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর তো বটেই, ক্যালোরিও কম। রুটির মাঝে জ্যাম/ জেলি/ মাখন মাখিয়ে খেতে চাইলে তার বদলে মধু দিয়ে খান। সাথে বাদাম/ ফল ইত্যাদি যে কোনও কিছুও সাথে নিতে পারেন চাইলে।
– খেতে পারেন মুড়ি, খই। দুধ আর মধুর সাথে খেতেও যেমন মজাদার, তেমনি স্বাস্থ্যকরও।
– রাতের বেলা কোক পেপসি বা কোনও কোমল পানীয় খাবেন না মোটেই। চা কফিও না খাওয়াই ভালো। ঘুমের জন্য সহায়ক নয়।
তবে সবচাইতে ভালো কি হয় জানেন? রাত জেগে বাড়তি খাওয়া দাওয়া করে স্বাস্থ্য নষ্ট না করে বরং ঘুমিয়ে পরুন। যে কাজ বাকি আছে, সেটি না হয় সকালে জলদি উঠে সেরে নিবেন।
শুভরাত্রি!