রাশিচক্র সম্পর্কে কি বলে ইসলাম?

রাশিচক্র সম্পর্কে কি বলে ইসলাম?

Vice Professor Asked on March 28, 2015 in ইসলাম ধর্ম.
Add Comment
1 Answer(s)

    শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

    image

    আগেও উল্লেখ করা হয়েছে যে জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা শুধু হারামই নয় একজন জ্যোতিষবিদের কাছে যাওয়া এবং তার ভবিষ্যদ্বাণী শোনা, জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর বই কেনা অথাব একজনের কোষ্ঠী যাচাই নিষেধ। যেহেতু জ্যোতিষশাস্ত্র প্রধানত ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যারা এই বিদ্যা চর্চা করে তাদের জ্যোতিষী বা গণক বলে গণ্য করা হয়।

    ফলস্বরূপ, যে তার রাশিচক্র খোঁজে সে রাসূল (সা) প্রদত্ত বিবৃতির রায়ের অধীনে পড়েঃ

    হাফসা (রাঃ) কর্তৃক বর্নিত, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
    “যে গণকের কাছে যায় এবং কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তার চল্লিশ দিন ও রাত্রির নামাজ গ্রহণযোগ্য হবে না।” [Sahih Muslim, English trans, vol. 4, p.1211, no, 5540]

    এমনকি জ্যোতিষের বক্তব্যের সত্যতায় সন্দিহান হওয়া সত্ত্বেও একজনের শুধু তার কাছে যাওয়া এবং প্রশ্ন করার শাস্তি এই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যদি কেউ জ্যোতিষ-সংক্রান্ত তথ্যাদির সত্য মিথ্যায় সন্দিহান হয়,তবে সে আল্লাহর পাশাপাশি অন্যরাও হয়তো অদৃশ্য এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানে বলে সন্দেহ পোষণ করে। এটা এক ধরনের শিরক।

    কারণ আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেনঃ
    “অদৃশ্যের কুঞ্জি তাঁহারই নিকট রহিয়াছে, তিনি ব্যতীত কেহ জানে না।” [সূরা আন-আনআমঃ ৫৯]

    “বল আল্লাহ ব্যতীত আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে কেহই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।” [সুরা আন-নামল: ৬৫]

    যতই জ্যোতিষ বলুক অথবা যা কিছুই জ্যোতিষশাস্ত্রের বইয়ে থাকুক, কেউ তার রাশিচক্রে প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস করলে সে সরাসরি কুফরি (অবিশ্বাস) করে। কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
    ”যে একজন ভবিষ্যতদ্রষ্টা গণকের নিকট গেল এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করল,মুহাম্মদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছিল সে তা অবিশ্বাস করল।”  [Sunan Abu Dawood vol.3, p.1095, no.3895]

    পূর্বে বর্ণিত হাদিসের মত এই হাদিসে শাব্দিকভাবে গণকের সম্বন্ধে উল্লেখ করা হলেও জ্যোতিষবিদদের জন্যেও সমভাবে প্রযোজ্য। উভয়ই ভবিষ্যতের জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবি করে। জ্যোতিষবিদদের দাবি সাধারণ গণকদের তৌহিদের বিরোধিতা করার মত। সে দাবি করে যে মানুষের ব্যক্তিত্ব নক্ষত্র দ্বারা নিরূপিত এবং তাদের ভবিষ্যৎ কর্মকান্ড এবং তাদের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী নক্ষত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সাধারণ গণক দাবি করে যে একটি কাপের তলায় চায়ের পাতায় গঠন অথবাহাতের তালুর রেখা একই বিষয় বলে। উভয় ক্ষেত্রে তারা সৃষ্ট বস্তর বাস্তব বিন্যাসের মধ্যে অদৃশ্যের জ্ঞানের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা দাবি করে।

    জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস এবং রাশিচক্র পরীক্ষা করা পরিস্কারভাবে ইসলামের শিক্ষা এবং বিশ্বাসের বিপক্ষে। সেটাই সত্যিকারের শূন্য ও নিঃস্ব আত্মা যা খাঁটি ঈমানের (বিশ্বাসের) স্বাদ গ্রহণ করেনি এবং এই সব পথ খুঁজে বেড়ায়। অপরিহার্যভাবে,এই সব রাস্তা পূর্বনির্ধারিত নিয়ত হতে মুক্তি পাবার একটি নিষ্ফল প্রচেষ্টার প্রতীক। অজ্ঞ লোকেরা মনে করে যে তারা যদি জানে আগামীকাল তাদের ভাগ্যে কি রয়েছে, তারা আজ থেকে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। ঐভাবে তারা অমঙ্গল এড়াতে সক্ষম হতে পারে এবং মঙ্গল নিশ্চিত করতে পারে।

    তথাপি, আল্লাহ কর্তৃক আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে বলা হয়েছেঃ

    “বল, আল্লাহ যাহা ইচ্ছা করেন তাহা ব্যতীত আমার নিজের ভাল মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানিতাম তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করিতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করিত না। আমিতো শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য সর্তককারী ও সুসংবাদবাহী।” [সুরা আল-আ’রাফঃ ১৮৮]

    সুতরাং,সত্যিকার মুসলমানগণ এই সব ক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে থাকতে নৈতিকভাবে বাধ্য। একইভাবে আংটি, গলার হার ইত্যাদির উপর যদি রাশিচক্রের চিহৃ থাকে তবে তা পরা উচিত নয়, এমনকি কেউ তাতে বিশ্বাস না করলেও। এটি একটি বানোয়াট পদ্ধতির অংশ যা কুফর বিস্তার করে এবং একে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা উচিত। কোন বিশ্বাসী মুসলমানের রাশিচক্র কি তা জিজ্ঞাসা করা অথবা তার প্রতীক অনমান করার চেষ্ট করাও উচিত নয়। কোন পুরুষ অথবা মহিলা কর্তৃক খবরের কাগজের

    রাশিচক্রের কলাম পড়া অথবা পড়তে শোনাও অনুচিত। যে মুসলমান তার কার্যক্রম নির্ধারণ করতে জ্যোতিষতত্ত্ব সম্বন্ধীয় পূর্বাভাস ব্যবহার করে, তার উচিত আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থণা (তওবা) করা এবং ইসলামের উপর বিশ্বাস নবায়ণ করা।

    আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে শিরক এবং কুফর থেকে বেচে থাকের তউফিক দান করুক। আমিন।

    Professor Answered on March 28, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.