রোজা রাখার ফলে মুখে গন্ধ হওয়া থেকে মুক্তির উপায় কী?

রোজা রাখার ফলে মুখে গন্ধ হওয়া থেকে মুক্তির উপায় কী?
Add Comment
1 Answer(s)

    রোজা রাখার ফলে মুখে গন্ধ হবে এটা স্বাভাবিক। অনেকেই এর ফলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে থাকেন। তবে এর জন্য বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ নাই। সহীহ বুখারী (১৮৯৪) এ বলা আছে, ‘রোজাদারের মুখের গন্ধ আমার (আল্লাহর) নিকট মেসক (অতি মূল্যবান সুগন্ধি) অপেক্ষা বেশি প্রিয় ও মূল্যবান।’ তবে আপনি চাইলে মেসওয়াক করতে পারেন।

    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখেও মেসওয়াক করতেন। আমের বিন রাবিয়া হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অসংখ্যবার রোজাবস্থায় মেসওয়াক করতে দেখেছি। [তিরমিজি : ৭২৫, হাদিসটিকে তিনি হাসান বলেছেন। হাদিসটি অনুসারেই আমল করা হবে। রোজা অবস্থায় মেসওয়াককে কেউ দুষণীয় মনে করেননি। তবে, কেউ কেউ কাঁচা ডাল দিয়ে মেসওয়াককে মাকরূহ মনে করেছেন। এমনিভাবে, মাকরূহ মনে করেছেন দিবস শেষে মেসওয়াক করাকে।]

    মেসওয়াকের প্রতি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।
    হাদিসে এসেছে—
    السواك مطهرة للفم مرضاة للرب.
    অর্থাৎ, মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। [আহমদ : ৭, হাদিসটি সহি লিগায়রিহ।]

    অপর হাদিসে এসেছে—
    لقد أمرت بالسواك حتى ظننت أنه سينزل به علي قرآن أو وحي.
    মেসওয়াকের ব্যাপারে আমাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, এমনকি, একসময় আমার মনে হয়েছিল যে, এ ব্যাপারে আমার উপর কোরআন কিংবা ওহি নাজিল হবে। [আহমদ : ২২/৩।]

    স্পষ্ট যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো দিবস জুড়েই মেসওয়াক করতেন। দিবসের সূচনা বা সমাপ্তির মাঝে কোন প্রকার পার্থক্য করতেন না। হাদিসে এসেছে—
    لولا أن أشق على أمتي لأمرتهم بالسواك مع كل وضوء
    আমার উম্মতের উপর যদি বিষয়টি কঠিন না হত, তবে প্রতি ওজুর সময় তাদের জন্য মেসওয়াক আবশ্যক করে দিতাম। [আহমদ : ৯৯৩০।]

    অপর হাদিসে এসেছে—
    لولا أن أشق على المؤمنين لأمرتهم بالسواك عند كل صلاة
    মোমিনদের জন্য যদি কষ্টকর না হত, তবে প্রতি নামাজের কালে আমি তাদের জন্য মেসওয়াক আবশ্যক করে দিতাম। [মুসলিম : ২৫২।]

    ইবনে আব্দুল বার বলেন : এ হাদিস প্রমাণ করে, যে কোন সময় মেসওয়াক বৈধ। হাদিস দুটিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘প্রতি ওজুকালে’ এবং ‘প্রতি নামাজ কালে’ বাক্যাংশ দুটি ব্যবহার করেছেন। নামাজ নির্দিষ্ট একটি সময়েই নয়, ওয়াজিব হয় দ্বিপ্রহর, বিকেল ও রাতের নানা সময়ে। [ইবনে আব্দুল বার, আত তামহিদ : খন্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ১৯৮।]

    ইমাম বোখারির উক্তি—রোজাদারকে এ হুকুমের আওতা-বহির্ভূত করা হয়নি। [বোখারি।]
    ইবনে খুযাইমা বলেন : হাদিসটিতে প্রমাণ হয় স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যক্তির জন্য যেভাবে প্রতি নামাজের সময় মেসওয়াক করা ফজিলতের বিষয়, তেমনিভাবে ফজিলতের বিষয় রোজাদারের জন্যও। [ইবনে খুযাইমা : খন্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২৪৭।] সুন্নতের অনুসারীগণের অবশ্য কর্তব্য বিষয়টির প্রতি যত্নশীল হওয়া। কারণ, এর প্রতিদান অঢেল, উপকারিতা অগণিত।

    রাসুলের অন্য হাদিসে বর্ণিত একটি উক্তি এ ক্ষেত্রে কোন জটিলতা তৈরি করবে না, উক্তিটি হচ্ছে—
    لخلوف فم الصائم أطيب عند الله من ريح المسك.
    মেশকের সুঘ্রাণের চেয়েও আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ অধিক প্রিয়। [বোখারি : ১৮০৫। এ হাদিসটির ফলে একদল মনে করেন, দিবসের শেষে মুখের দুর্গন্ধ যাতে দূর না হয় তাই মেসওয়াক করা মাকরূহ। দীর্ঘক্ষণ অভুক্ত থাকার ফলে দিবসের শেষান্তে রোজাদারের মুখ দুর্গন্ধে ভরে যায়। রোজাদারের ক্ষেত্রে মেসওয়াকের মাসআলায় উলামাগণ বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, কেউ মনে করেন : শর্তহীনভাবেই রোজাদার ব্যক্তি মেসওয়াক করতে পারবেন। কেউ বলেন : সূর্য হেলে পড়ার পর মেসওয়াক করা মাকরূহ, এরপূর্বে মোস্তাহাব। কেউ বলেন : কেবল আসরের পরই মেসওয়াক করা মাকরূহ হবে, অন্য সময় নয়। অপর কারো মত এই যে, বিষয়টিকে ফরজ ও নফলের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে দেখা হবে। রোজা যদি ফরজ হয়, তবে সূর্য হেলে পড়ার পর হবে মাকরূহ, নফলের ক্ষেত্রে মাকরূহ হবে না। কারণ, এ পদ্ধতিটিই রিয়া হতে অধিক মুক্ত। প্রথম মতটিই অধিক যুক্তিযুক্ত। দ্র : ইবনে আব্দুল বার রচিত তামহিদ ১৯/৫৭, আইনি রচিত উমদাতুল ক্বারী ১৬/৩৮৪।] —কারণ, হাদিসটির অর্থ হচ্ছে, রোজাদারের মুখের এ গন্ধ, যাকে তোমরা দুর্গন্ধ বলে অবহিত কর, আল্লাহ তাআলার নিকট মেশকের চেয়েই উত্তম, ভালো ও প্রিয়—যাকে তোমরা সুগন্ধি বল। কারণ, এ গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে তার ইবাদত পালন ও আল্লাহ তাআলার হুকুমের অনুবর্তী হওয়ার ফলে। মুখের গন্ধ মৌলিকভাবে প্রিয় ও ভালো নয়, এবং তা দূর করার ব্যাপারে বান্দার উপর কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই।

    ভেজা ও শুকনো মেসওয়াকের মাঝে রাসুল পার্থক্য করেছেন, এমন কোন প্রমাণ আমরা পাই না। তাই, সালাফের অধিকাংশই এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য করতেন না। ইবনে সীরীনের নিকট আগমনকারী জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন : …এতে কোন অসুবিধা নেই, এ কেবল খেজুরের ডাল, এর স্বাদ রয়েছে। যেমন স্বাদ রয়েছে পানির, অথচ তা দিয়ে তুমি কুলি কর। [ইবনে আবি শায়বা : ৯১৭১।] ইবনে উলয়া বলেন : রোজাদার কিংবা পানাহারকারী—উভয়ের জন্যই মেসওয়াক করা সুন্নত। শুকনো কিংবা ভেজা মেসওয়াক—দুটোই এ ক্ষেত্রে বরাবর। [ইবনে আব্দুল বার : তামহিদ ৭/১৯৯]

    Professor Answered on June 28, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.