লেবুর উপকারিতা কি কি?
লেবু Rutaceae গোত্রের কাঁটা যুক্ত উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় Citrus গনের সকল উদ্ভিদই মুলত লেবু নামে পরিচিত। আমরা সাধারণ ভাবে Citrus lemon কে লেবু বলে থাকি। Citrus গনের অন্য যে সকল উদ্ভিদ আমাদের কাছে পরিচিত তা হল জাম্বুরা, মৌসুম্বি (মাল্টা) ও কমলা । বেশিরভাগ চাষযোগ্য লেবু গাছ আকারে ছোট ঝোঁপের মত হয়ে থাকে। লেবুর পাতা যৌগিক ও আকারে ছোট হয়। পাতার বোঁটা অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। পাতা সবুজ, চকচকে, উপবৃত্তাকার। পাতায় সুগন্ধ রয়েছে। কান্ড শাখা প্রশাখা য়ুক্ত। কান্ডে অসংখ্য কাঁটা বিদ্যমান। ফুল গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে থাকে। ফুলের বর্ণ সাদা। ফুলে পাপড়ি রয়েছে চারটি করে। ফল আকারে ছোট এবং গোলাকার। তবে কাগজি লেবুর আকার লম্বাটে হয়ে থাকে। একটি পুর্নাঙ্গ লেবু গাছে একই সাথে ফুল এবং পাকা ফল থাকতে পারে।
লেবুর আদি নিবাস দক্ষিন-পূর্ব এশিয়াতে। উদ্ভিদতাত্ত্বিকদের মতে আদি চীন ভূখন্ড ও মালয়েশিয়াতে লেবুর উৎপত্তি হয়েছিল। জন বেন্থাম হুকার ভারতীয় উপমহাদেশে একটি উদ্ভিদ জরিপ পরিচালনা করেন। সেই জরিপে লেবুর জম্মস্থান হিসেবে ভারতের গাড়োয়াল ও খামিয়া পাহাড়ের কথা বলেন। সেই মতে, লেবু জন্ম সূত্রে আদি ভারতীয় উদ্ভিদ। লেবু গাছের নানাগুনে আকৃষ্ট হয়ে পারস্যে-র অধিবাসীরা সেদেশে এটি নিয়ে যায়। সেখান থেকে লেবু ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। সেই সময়টি ছিলো দ্বিতীয় শতাব্দির শুরুর ভাগ। গ্রীস ও ইতালিতে লেবুর রস ব্যবহিত হতো ঔষধ হিসাবে। মূলত স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে লেবু ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হতো।
লেবু ভেষজগুনে ভরপুর একটি ফল । লেবুতে যথেষ্ট পরিমানে ‘ভিটামিন-সি’ রয়েছে। তবে সামান্য পরিমান ‘ভিটামিন-এ’ এবং ‘ভিটামিন-বি’ পাওয়া যায়। এছাড়াও লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে খনিজ লবন ও শর্করা। এন্টিব্যাকটেরিয়া ও এন্টিভাইরাল উপাদান লেবুতে আছে। ফলে মৌসুমি নানা সংক্রমক রোগে, যেমন ঠান্ডা, কাশি, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে লড়তে পারে এই ফলটি। তাই মৌসুমি রোগগুলো প্রতিরোধে লেবু একটি পরীক্ষিত ভেষজ ফল। এতে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকায় উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রন রাখতে লেবুর জুড়ি নেই। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৎপিন্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অকাল বার্ধক্য ও মুটিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে লেবুর ধন্বন্তরি কার্যক্ষমতা রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় আপনার দেহের কোষ ও ত্বককে অকাল বার্ধক্যের হাত থেকে রক্ষা করে। এতে ভরপুর ভিটামিন সি থাকায় দেহের ক্যালমিয়াম শোষন করে খুব সহজেই। ফলে হাড়ের গঠন ও দৃঢ়তা বজায় থাকে। দেহের ক্যালসিয়াম শোষন করে ফেলায় মুত্রথলি ও কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না। লেবু একদিকে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে। অন্যদিকে লেবুতে থাকা ফ্লাভোনয়েড বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে সহজেই।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে রয়েছে লেবুর বহুমাত্রিক ব্যবহার। যকৃত পরিশোধনে একটি ছোট কাগজি লেবুর রস এককাপ পরিমান গরম পানির সাথে খেলে উপকার মেলে। আমাদের দেশের গ্রামীন নানা চিকিৎসায় লেবুর ব্যবহার রয়েছে। দাঁতের মাড়ির প্রদাহ, দাঁতের ব্যথা ও মাড়ির রক্ত পড়া বন্ধে লেবু ব্যবহৃত হয়।
লেবুর খোসারও রয়েছে নানা গুন। খোসা থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তেল আহরন করা যায়। এই তেলের সুগন্ধি মানসিক বিষন্নতা, উদ্বেগ ও মনের চাপ দুর করে। মনকে সতেজ করে তোলে। সাম্প্রতিক সময়ে এই সুগন্ধি সাবান, এয়ারফ্রেশনার ও নানা সুগন্ধি দ্রব্যে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ঔষধশিল্পেও এর ব্যবহার রয়েছে। চুলের খুশকি সমস্যায় লেবুর তেল বেশ কার্যকরি।