লোভী মানুষকে চেনার কয়েকটি মনোবৈজ্ঞানিক উপায় বা লক্ষণ কী?
” লোভ “
একটি শিশুর একটু চকলেট আইসক্রিম হলেই সে খুশী।
কিন্তু বড় হয়ে গেলে কি মানুষ ওটুকুতে খুশী থাকে?
তেমনি প্রয়োজনের সংজ্ঞা ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়।
আজ যদি একটা বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, আর যেখানে সেখানে যখন তখন বোম পড়ে তাহলে যে লোকটি হয়তো একটি ছোটখাটো বাড়ী নিয়ে খুশী ছিল, যার মনে হচ্ছিল এর চেয়ে বড় বাড়ী আমার নিষ্প্রয়োজন, সেই লোকটির ই তখন আত্মরক্ষার জন্য মাটির তলায় একটি বাঙ্কারের খুব প্রয়োজন হয়ে পড়তে পারে।
তাই যে মানুষটি নিজের পরিশ্রম করে রোজগার করে সঞ্চয় করে রাখছেন, তাঁকে লোভী কি করে বলা যায়?
বরং বলা যেতে পারে তিনি বুদ্ধিমান, ও সতর্ক।
ভবিষ্যতে বিপদে কাজে লাগতে পারে এই ভেবে নিজের রোজগার করা টাকার যেটা কাজে লাগছে না, বা অতিরিক্ত বিলাস ব্যাসনের পিছনে খরচ না করে, নিজের ও নিজের পরিবারের সুরক্ষায় সঞ্চয় করছেন।
তাই তাঁকে লোভী বলা যায় না।
আত্মরক্ষা করতে চাওয়া প্রতিটি প্রজাতির বৈশিষ্ট্য ও সহজাত ধর্ম।
তিনি সেই সহজাত ধর্ম ই পালন করছেন।
একটি লোক আপনাকে খুন করতে এলে আত্মরক্ষায় তাকে বাধা দেওয়া যেমন আপনার প্রাকৃতিক ধর্ম, তেমনি ভবিষ্যতে আত্মরক্ষা র প্রয়োজনে সঞ্চয় করাও প্রাকৃতিক ধর্ম।
কোন লোভ নয়।
কেউ বললেন অতিরিক্ত চাহিদার নাম লোভ।
তার মানে স্বাভাবিক চাহিদা লোভ নয়, এটাই বোঝাতে চাইলেন।
স্বাভাবিক চাহিদা কি রকম?
ধরা যাক একটি মানুষ চাইছে যে সে খেতে পায় না।
দুবেলা দুমুঠো ডাল ভাত তার চাই।
সবাই বলবে হ্যাঁ, এটা সে চাইতেই পারে। এটা লোভ নয়।
কিন্তু যদি সে চায় প্রতিদিন তাকে বিরিয়ানি, পোলাও, মাংস, মিষ্টি, সব ভালো খাবার দিতে হবে।
তাহলে সবাই বলবে এটা তার লোভ।
এবারে একটু নিজেকে প্রশ্ন করা যাক।
ধরে নিচ্ছি আমি একজন যুবক, শরীরে রোগ তেমন কিছু নেই, যা ইচ্ছে খেতে পারি হজম শক্তি ভালো আছে।
এবারে কেউ আমাকে বললো তুমি রোজ কি খেতে চাও?
সাধারণ ডাল ভাত?
নাকি প্রতিদিন নিত্য নতুন ভালো ভালো খাবার?
আমি স্বাভাবিকভাবে ই বলবো প্রতিদিন নিত্য নতুন ভালো ভালো খাবার।
তার মানে আমি কি লোভী?
তাও কিন্তু নয়।
প্রতিদিন নিত্য নতুন খেতে চাওয়া, খেয়ে তৃপ্ত হতে চাওয়া, শুধু মানুষ নয় প্রতিটি প্রাণীর সহজাত বৈশিষ্ট্য ও ধর্ম।
আমার তেষ্টা পেয়েছে জল খাবো, খেয়ে খুব আরাম হবে।
সেটা কি আমার জল খাবার লোভ?
নাকি সেটা শরীরের বৈশিষ্ট্য।
রোদ হলে ছায়া খুঁজবো, সেটা কি লোভ, নাকি সহজাত বৈশিষ্ট্য?
সবাই ভাবছেন, বেশ বলছেন তো আপনি। সব ই যদি সহজাত বৈশিষ্ট্য হয় তাহলে লোভ আর কোথায়, লোভ বলে কিছু নেই।
তা কিন্তু নয়।
লোভ আছে।
প্রবল ভাবে আছে।
কথায় বলে “লোভের দাসত্ব করা”।
অথবা ” শ্রেষ্ঠ রিপু হল লোভ”
তাহলে লোভ টা কি?
খুব সহজ এটা বুঝতে পারা।
আমি ডাল ভাত খাচ্ছি আবার কোন কোনদিন বিরিয়ানি পোলাও খাচ্ছি।
কিন্তু যেদিন পোলাও পাচ্ছি না, ডাল ভাত খেতে হচ্ছে সেদিন কি আমার খুব দুঃখ হচ্ছে?
কিম্বা আমাকে কেউ রোজ ভালো মন্দ খাওয়াচ্ছে, হঠাৎ একদিন বললো তুমি পথ দেখ, তাহলে কি প্রবল দুঃখে পড়ে যাবো।
হ্যাঁ তা তো হবেই।
তাই মনে হচ্ছে তো।
ঐটি, ঐটিই হচ্ছে লোভের প্রকাশ।
অর্থাৎ লোভ ছিল বলেই আজ দুঃখ হচ্ছে।
যিনি লোভী নন, সম্পূর্ণ নির্লোভ, তিনি প্রতিদিন ভালো মন্দ খেতে পারেন, কিন্তু যেদিন পাবেন না সেদিন তাঁর দুঃখ হবে না।
অর্থাৎ তিনি জগৎ সম্পর্কে সচেতন।
তিনি জানেন আজ যা পাচ্ছি কাল তা নাও পেতে পারি।
একটি গরুকে রোজ ভালো মন্দ খাওয়ালে একদিন ভালো খাবার না দিলে সে না খেয়ে চিৎকার করবে।
একটি লোভী মানুষ ও তাই।
ঐটিই পশু-স্তর।
সে সচেতন নয় এই জগতের নিয়ম সম্পর্কে।
আর লোভের সর্বনিম্ন অবস্থান কি?
সেটি হল লোভের দাস হয়ে অপরাধ করে ফেলা।
লোভের জন্য চুরি, খুন।
এটি হল লোভের সর্বনিম্ন স্তর।
অপরাধী রা এই লোভের দাস।
সবাই নয়।
তাহলে বেশীর ভাগ মানুষ কোন লোভের দাস?
চলুন দেখা যাক।
সম্পদ আহরণ লোভ নয়।
ততক্ষণ নয়, যতক্ষণ সে অন্তরে জানে এসব একটি জীবনের ধর্ম মাত্র।
যতক্ষণ সে জানে সারা জীবন ধরে সঞ্চয় করা সম্পদ এক নিমেষে বিনষ্ট হলেও আমার মধ্যে কোন দুঃখ হবে না।
কারণ আমি এর অসারত্ব জানি।
প্রাসাদ তৈরী করে তাতে বাস করাটা লোভ নয়।
যদি সে জানে এক নিমেষে ঐ প্রাসাদ ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হলে আমার মনে একটু দুঃখের ছায়াও জন্ম হবে না।
ঐ সচেতনতা ই নির্লোভ অবস্থান।
বাকী সব জাগতিক অবস্থান ই লোভের দাস।
যে সম্পদ আহরণ করে, সম্পদ বিনষ্ট হলে বুক চাপড়ায় সেই লোভী।
অমিতাভ তথাগত বুদ্ধ, রাজার প্রাসাদে আশ্রয় নিয়ে রাজভোগ খেয়েছেন রাজ পরিচর্যা গ্রহণ করেছেন।
পরের দিন আবার গাছতলায় থেকেছেন।
দরিদ্রের ঘরে খুদ কুঁড়ো ভিক্ষা করে খেয়েছেন।
ঐ সচেতন নির্লিপ্ততা ই নির্লোভ অবস্থান।।