শরীর অনেক দুর্বল খালি অনেক ঘুম আসে, কিভাবে আমি শরীর দুর্বলতা ও ঘুমের সমস্যা দূর করতে পারি?

    শরীর অনেক দুর্বল খালি অনেক ঘুম আসে, কিভাবে আমি শরীর দুর্বলতা ও ঘুমের সমস্যা দূর করতে পারি?

    Default Asked on February 21, 2024 in মানবদেহ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      মাঝেমধ্যে আমরা লক্ষ্য করে থাকি সবসময় আমাদের ঘুম আসছে। শরীরে ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে আগেই সতর্ক হওয়া দরকার। কি কারণে ঘুম আসছে প্রথমে সে উত্তর খুঁজে বের করুন। আমাদের বুঝতে হবে যে আমাদের শরীরের সব কিছু সহ্য করার ক্ষমতা নেই। আপনি যদি এমন কিছু করেন যা প্রয়োজনীয় সীমা ছাড়িয়ে যায় তবে আপনি ক্লান্তিবোধ করবেন এবং সারাদিন আপনার ঘুম আসবে। অনেক গবেষণা পর বিশেষজ্ঞরা সবসময় ঘুম আসার ৮টি কারণ খুঁজে বের করেছেন।

      ডায়েট স্বাস্থ্যকর না:
      স্বাস্থ্যকর ডায়েট না হওয়ার অর্থ আপনি সালাদ এবং সিদ্ধ খাবারের প্রতি জোর দিচ্ছেন না। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হ’ল আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। যেমন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর কার্বস, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি।
      এছাড়াও, সঠিক সময়ে খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ ভারী রাতের খাওয়ার পরে অস্বস্তি বোধ হয় এবং এতে করে ঘুম আসে না এবং পরেরদিন আপনার ঘুম আসবে।

      ওজন বেড়ে যাওয়া:
      অতিরিক্ত ওজন হওয়ায় ক্লান্তি ও অবসন্নতা দেখা দেয়, যার কারণে সবসময় আপনার মাথা ঘুরে ওঠে। আপনার ওজন আপনার পেশী এবং জয়েন্টগুলিকেও চাপ দেয় এবং ব্যাথা হয়। স্লিপ হেলথ জার্নালটির গবেষণা অনুসারে ঘুম এবং ওজন সরাসরি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। এজন্য ঘুম জরুরী।

      ঘুমের ধরণ:
      আপনি ঠিক সময়ের বেশি ঘুমোচ্ছেন, আপনি রুটিন এড়িয়ে যাচ্ছেন, আপনার শরীরের ঘড়িটি সামঞ্জস্য করবে না। আপনি কখনই এভাবে বেশি ঘুমাতে পারবেন না। অতএব আপনি নিজের দিনটি এমনভাবে পরিকল্পনা করুন যাতে আপনার ঘুম পরিপূর্ণ হয়। সর্বোচ্চ আট ঘন্টা আপনি ঘুমান।

      আপনার পেশী ক্লান্ত:
      যাদের ডেস্ক জব নেই এবং কঠোরভাবে প্রতিটি দিনই ব্যায়াম হয় না, আপনার জন্য সংবাদ আছে। আপনার সক্রিয় জীবনধারা আপনাকে খুব বেশি সহায়তা করবে না, কারণ এটি আপনাকে উত্সাহিত করার পরিবর্তে ক্লান্ত করে তুলছে। অতিরিক্ত ব্যায়াম করা আপনার পেশীগুলিকে অপ্রয়োজনীয় চাপ দেয় যা আপনাকে ক্লান্ত ও দুর্বল করে তোলে। এতে করে ঘুম আসে সবসময়।

      খাবার এড়ানো:
      যদি আপনি আপনার খাবার এড়িয়ে চলেন এবং অনাহারে থাকেন তবে আপনি সব সময় নিদ্রাহীন বোধ করতে বাধ্য। ক্ষুধা আপনার শরীরকে শিথিল হতে দেয় না এবং হরমোনগুলো প্রকাশ করে যা আপনাকে বিরক্ত করে তোলে, যার কারণে আপনার ঘুম খারাপ হয়।

      শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রেট করছেন না:
      যদি আপনার শরীর হাইড্রেটেড হয় তবে এটি আপনাকে আপনার দেহের শক্তির স্তর বজায় রাখতে সহায়তা করে। ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে সামান্য ডিহাইড্রেশন শক্তির স্তর হ্রাস করতে পারে এবং এতে করে স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব পরে।

      অতিরিক্ত রিফাইনড ফুড খাওয়া:
      রিফাইনড ফুডে অনেক চিনি থাকে এবং এতে শরীরে শক্তিও যোগায়। তবে এই শক্তি স্থায়ী হয় না বেশি এবং আপনার ক্লান্তিবোধ অনুভব হবে।

      মানসিক চাপ:
      মানসিক চাপ কেবল মানসিক অবসন্নতায় ডেকে আনে না, তবে শারীরিক ক্লান্তিও বটে। আন্তর্জাতিক গবেষণা জনস্বাস্থ্যের জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে স্ট্রেস আপনার ঘুম কমিয়ে দেয়, যা পরের দিন আপনার ঘুম ঘুম লাগে।

      শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর ঘরোয়া উপায়:

      1. টমেটোর স্যুপ পান করা। এতে ক্ষুধা বেড়ে যায়। খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা জাগে। তাছাড়াও টমেটোর স্যুপ পান করলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এভাবে দুর্বলতা কেটে যায়।
      2. কফি পান করলে মানসিক চিন্তা দূর হয় এবং শরীরের সতেজতা চলে আসে। খাবার গ্রহণের পর কফি পান করলে পেট হালকা অনুভূত হয়। এটি পানে পেটের ছোট-খাট সমস্যা থাকলে তা দূর হয়।
      3. গাভী অথবা ছাগলের দুধ পান করলে শরীরে শক্তি হয়। পুরুষত্বহীনতা দূর করতে দুধ পান করুন। স্ত্রী সহবাসের পর দুধে ৩-৪ টা বাদাম পিষে মিশিয়ে পান করলে দুর্বলতা কেটে যাবে।
      4. মাংসপেশীর দুর্বলতা কাটাতে সামান্য লবণে ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে শরীরে মালিশ করুন। পেশী দুর্বলতা নিমিষেই শেষ হবে!
      5. যৌন দুর্বলতা কাটাতে ফানসা ফল (Asiatic greevia) ফল খুবই উপকারী। পেস্তাদানা পিষে মধুর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সেবন করলে দুর্বলতা দূর হয়।
      6. অসুখ ও রোগভোগের কারণে শরীর দুর্বলহলে নিম ছাল সিদ্ধ করে খেতে পারেন।
      7. খেজুর শক্তিবর্ধক। খেজুরের সাথে মাখন মিশিয়ে খেলে প্রচুর শক্তি পাবেন। শুক্রাণু বৃদ্ধি, নতুন রক্তকোষ তৈরির জন্য প্রত্যহ ৮-১০ টি খেজুর খাবেন।
      8. ভাল মানের খাবার খেলে শক্তি বাড়ে।
      9. শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল বা খনিজের ঘাটতি রোধকল্পে বাঙ্গীর সালাত খান।
      10. গাজরের হালুয়া শক্তিবর্ধক। দুর্বলও অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতিদিন গাজর খাওয়া উচিৎ। দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে গাজরের উপকারীতা সবারই জানা আছে।
      11. প্রতিদিন সবুজ মেথী সেবন করলে দুর্বলতা দূর হয়। স্ত্রীলোকের গর্ভপাত, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হলে শরীর দুর্বলহয়ে যায়। এসময় মেথী সেবন করলে দুর্বলতা দূর হয়।
      12. প্রত্যহ সকালে দুধের সাথে একটি কলা খেলে শক্তি বাড়ে।
      13. আনার রক্ত পরিষ্কারক।
      14. নারিকেল খেলে শরীর মোটা হয়। এটি শক্তিবর্ধকও। চুল ঘন ও মজবুত করতে নারিকেল খাবেন। দিনে কমপক্ষে ৩০-৫০ গ্রাম নারিকেল খাওয়া উচিৎ।
      15. প্রতিদিন ঘি খেলে ওজন বাড়ে। ওজন বাড়াতে ঘি ও চিনি একসাথে মিশিয়ে খাবেন।
      16. আখ খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পেটের তাপ দূর হয়। শরীরে শক্তি আসে।
      17. জয়ফল ও জয়ত্রী ১০ গ্রাম করে একত্রে নিয়ে তাতে ৫০ গ্রাম অশ্বগন্ধা মিশিয়ে প্রতিদিন দু’বার এক চামচ দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে রক্ত বৃদ্ধি পায়।
      18. কাজু বাদাম ও দুধের লেপ পায়ের দুর্বলতা কাটিয়ে তোলে। এই লেপ দিনে ২-৩ বার লাগাতে হয়।
      19. কিশমিশ শক্তিবর্ধক। দিনে দু’বার কিশমিশ খাবেন।
      20. ভিটামিনে পরিপূর্ণ পুদিনা পাতা শরীর সুস্থ ও সবল রাখে।
      21. দুধ, চিনি এবং লজ্জ্বাবতী এই তিনটি একত্রে গরম করে কিছুটা ঠাণ্ডা করে পান করলে দুর্বলতা কেটে যায়।

      শরীর দুর্বলতা কাটাতে প্রাকৃতিক ও আয়ুর্বেদিক উপাদান খুবই কার্যকরী।

      দুর্বল হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে?? শরীর দুর্বল লাগে। ক্লান্তি আসে। শক্তি পাই না। অনেকেই বলেন, একটা স্যালাইন নিলে বোধ হয় ভালো হতো। কিংবা কয়েকটা ভিটামিন খেয়ে নেব কি? আসলে দুর্বলতার চিকিৎসা কিন্তু ভিটামিন বা স্যালাইন নয়। হঠাৎ ক্লান্তি ও দুর্বলতা চেপে বসলে আগে তার কারণ নির্ণয় করা জরুরি। বড় কোনো রোগ হয়তো পেছনে ঘাপটি মেরে আছে, আপনার অসচেতনতার কারণে রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়ে যেতে পারে।

      আবার দুর্বলতা কমানোর জন্য না বুঝে স্যালাইন খাওয়া বা শিরাপথে স্যালাইন নেওয়ার কারণে জটিলতাও হতে পারে। যেমন কিডনির সমস্যায় রক্তশূন্যতা হয়, শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হার্টের সমস্যাও মানুষকে দুর্বল করে তুলতে পারে, একটু পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠেন হার্টের রোগী। এখন কিডনি বা হার্টের রোগীকে স্যালাইন দেওয়া হলে উল্টো শরীরে পানি জমে যায়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফলে জটিলতা আরও বাড়ে।

      বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আকস্মিক দুর্বলতার কারণ রক্তশূন্যতা। রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা চিহ্নিত না হওয়ার ফলে এর পেছনে দায়ী মূল কারণটিও অজানা রয়ে যেতে পারে। রক্তশূন্যতা হলে আয়রন বড়ি খাওয়া বা রক্ত ভরা কোনো সমাধান নয়, এর পেছনের কারণটা জানা জরুরি। হয়তো এর পেছনে পাকস্থলী বা অন্ত্রে কোনো আলসার, ক্ষত, এমনকি ক্যানসার লুকিয়ে আছে। রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়ে গেলে চিকিৎসায় সফলতার সম্ভাবনাও কমে যেতে থাকে।

      থাইরয়েডের সমস্যা ও ডায়াবেটিসের কারণে রোগী দুর্বল অনুভব করতে পারেন। যাঁদের কখনো ডায়াবেটিস ছিল না, তাঁদের ক্ষেত্রে স্রেফ দুর্বলতার মতো লক্ষণ থেকে ডায়াবেটিস ধরা পড়তে পারে। রক্তে প্রয়োজনীয় লবণ কমে গেলে কিংবা কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হলেও দুর্বলতা হতে পারে। হালকা জ্বর, ওজন হ্রাস থাকলে দুর্বলতার কারণ হিসেবে যক্ষ্মার কথা ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। এর জন্য কোনো ওষুধও দায়ী হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, হতাশা বা ঘুমহীনতার কারণেও কেউ কেউ দুর্বল হয়ে পারেন। অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকেও হতে পারে এই সমস্যা। কারণ যা-ই হোক, হঠাৎ শরীরে স্ট্যামিনা হারানো, দুর্বল লাগা ইত্যাদি উপসর্গে ভিটামিন খাওয়া বা স্যালাইন খাওয়াটা জরুরি নয়, জরুরি হলো কারণ অনুসন্ধান করা। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভাল

      পরিশেষে বলা যায় দুর্বলতাকে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন I

      Professor Answered on February 21, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.