শিলংয়ে দেখার মত কী কী আছে?

শিলংয়ে দেখার মত কী কী আছে?
Train Asked on May 21, 2015 in ভ্রমণ.
Add Comment
1 Answer(s)

    শিলং (ইংরেজি:Shillong), উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। এটি মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। শিলং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং ভুটান-ভারত সীমান্তের প্রায় ১০০ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত। এটি খাসি পাহাড়ে প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এখানে রয়েছে পাইন অরণ্য, জলপ্রপাত এবং পার্বত্য জলধারার সমারোহ। একসময় এটি “প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড” নামে পরিচিত ছিল। কেউ কেউ বলেন, দার্জিলিং যদি হয় রূপের রানী তা হলে শিলং হচ্ছে রাজা।

    ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পে শহরটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং এরপর এটিকে পুনরায় গরে তোলা হয়। ভারতের স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ পরিবারদের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় পাহাড়ি রিজর্ট ছিল। এখানে এখনও প্রচুর ব্রিটিশ ধাঁচে নির্মিত কান্ট্রিহাউজ দেখতে পাওয়া যায়। শিলং-এ আশেপাশের এলাকায় উৎপাদিত কমলা, তুলা, আলু, ইত্যাদি কেনাবেচা হয়। এখানে মাইকা, জিপসাম এবং কয়লার মজুদ থাকার সম্ভাবনা আছে, তবে এগুলি এখনও তেমন করে উত্তোলিত হয়নি। এখানে তেমন কোন বড় শিল্পকারখানা নেই। বনাঞ্চল উজাড়ের প্রবণতা বাড়ছে।

    যেভাবে যাবেন :

    ঢাকা থেকে সিলেট, সেখান থেকে বাসে কিংবা সিএনজি স্কুটারে তামাবিল। ভারতের পাহাড়গুলোর ঠিক পাদদেশে বাংলাদেশের এই প্রান্তে সমতলভূমিতে ইমিগ্রেশন-কাস্টম অফিস।

    সীমান্ত পার হলেই জায়গাটার নাম ডাউকি। ইমিগ্রেশন-কাস্টমের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ভাড়া করতে হবে ট্যাক্সি। শুরুতে শিলং যাওয়াই ভালো। শিলং শহর আর তার আশপাশের জায়গাগুলো ঘুরে বেড়িয়ে তারপর সেখান থেকেই এক দিনের জন্য চেরাপুঞ্জি ঘুরে আসা যাবে।

    আর যারা শুধু চেরাপুঞ্জি যেতে চান, তারা ডাউকি থেকেই ট্যাক্সি ভাড়া করবেন চেরাপুঞ্জিতে। তবে সেখানে থাকার মতো বেশি হোটেল এখনও গড়ে ওঠেনি, ফলে আগে থেকে হোটেল বুকিং না থাকলে বিপাকে পড়ে শিলং চলে যেতে হতে পারে। শিলঙে ভালো মানের হোটেলের ভাড়া ১৫০০-২০০০ রুপি/দিন।

    শিলং শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি থাকার জন্য চমত্কার একটি ব্যবস্থা আছে; নাম চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্ট। এটিও আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে।

    পাহাড়ের নির্জনে এই রিসোর্টের আশপাশেও রয়েছে ভ্রমণের অনেকগুলো জায়গা। শিলংয়ে হোটেলে বসেই আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোয় বেড়ানোর জন্য হরেকরকম প্যাকেজ পাবেন। এ ছাড়া চেরাপুঞ্জি বেড়ানোর প্যাকেজও পাবেন এখান থেকেই।

    পরিবহণ

    ভাড়া করা ট্যাক্সিই শিলং ও চেরাপুঞ্জিতে বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো বাহন। তবে বড় দল হলে শিলং থেকে বাস ভাড়া করেও চেরাপুঞ্জি বেড়িয়ে আসা যায়। যারা অহরহ কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য এলাকায় বেড়াতে যান তাদের জন্য বলে রাখি, শিলং বা চেরাপুঞ্জিতে থাকা, খাওয়া এবং গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর খরচটা পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে কিছুটা বেশি। তামাবিল সীমান্তে ট্রাভেল ট্যাক্স দেওয়ার মতো ব্যাংক নেই, এ জন্য বেশ খানিকটা দূরে যেতে হতে পারে। তাই ঢাকা থেকেই ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করে যাওয়া ভালো।

    এছাড়া সীমান্ত পার হওয়ার পর বেনাপোল কিংবা চেংড়াবান্ধার মতো মুদ্রা বিনিময়ের সুযোগও খুব সীমিত। এমনকি শিলংয়ের মতো শহরেও ডলার ভাঙানো সহজ নয়, টাকা ভাঙানো প্রায় অসম্ভব। তাই প্রাথমিক ঘোরাফেরার জন্য যতদূর সম্ভব সীমান্ত এলাকাতেই বেশ কিছু ডলার ভাঙিয়ে নিন। এরপর শিলংয়ে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে ডলার ভাঙাতে হবে।

    আবহাওয়া

    শিলংয়ে সারাবছর মনোরম আবহাওয়া মেলে। তবে মার্চ ও জুন মাস বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ মরসুম। গ্রীেষ্ম হাল্কা উলের পোশাক ও শীতে ভারি গরমজামার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৃষ্টিপাত এ অঞ্চলে যখন-তখনই হতে পারে। তাই, ছাতা আর বর্ষাতির বেন্দাবস্তও রাখা চাই।

    মেলা-পার্বণ

    এই অঞ্চলে বিভিন্ন উপজাতির বাস, তাই উৎসবেরও আধিক্য। খৃস্টান ধর্মাবলম্বীরা মহা সমারোহে পালন করেন বড়দিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার, ইত্যাদি। ইংরেজি নব বর্ষেও আনন্দমুখর হয়ে ওঠেন পাহাড়িরা। খাসি উপজাতির মানুষ পালন করেন শাদ সুকমিনসিয়েম পরব। কা পমব্ল্যাং নংক্রেম অথবা নংক্রেম নৃত্যও অতি প্রসিদ্ধ খাসি উৎসব। জয়ন্তীয়া উপজাতীয়দের পার্বণ বেহদিয়েংখ্লাম পালিত হয় প্রতি বছর জুলাই মাসে। গারোরা পালন করেন ওয়াংগালা উৎসব যা আদতে সূর্যের উপাসনা।

    টুকিটাকি

    শিলংয়ে খাবার জায়গা দেদার। রকমফেরও অঢেল। বার্গার, পিৎজা, মিল্কশেক, স্যাণ্ডউইচের দোকান রাস্তার মোড়ে হামেশাই পাওয়া যায়। চীনে খাবার ও তিব্বতি মোমো-থুকপাও পাওয়া যায় বেশ কিছু রেস্তরায়। স্থানীয় খাবারের দোকান তেমন না থাকায় খোজ নিতে পারেন ট্যুরিস্ট লজের ক্যান্টিনে। মনে রাখা দরকার, ভারতের এই অংশে সাধারণত আমিষ খাদ্যের প্রচলন আছে। নিরামিষ খাবারের সন্ধান পাওয়া যাবে মারওয়াড়ি ভোজনালয়ে ও শিলংয়ের কিছু বাঙালি রেস্তরায়।

    বেড়ানো শেষে কেনাকাটা করতে হলে শিলংয়ের পুলিশ বাজারের দোকানগুলোয় যাওয়া যায়। এখানে দরদাম করাটাই দস্তুর। এ ছাড়া শহরে আছে বেশ কিছু অত্যাধুনিক শপিং মল। স্থানীয় উপজাতির মানুষের হাতে তৈরি জিনিসপত্রের সম্ভার পাওয়া যায় এখানে। ধন্যবাদ

    Professor Answered on May 21, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.