সমুদ্রের পানি লোনা কেন?

    সমুদ্রের পানি লোনা কেন?

    Vice Professor Asked on December 6, 2016 in সাধারণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      সমুদ্রের পানিতে মিশে থাকা লবণের কারণে সমুদ্রের পানি লোনা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সেই আদিকাল থেকে ডাঙার ওপর থেকে পানি গড়িয়ে নদী বেয়ে সাগরে গিয়ে পড়ছে। তার সঙ্গে আসছে পলি ওই পলি সমুদ্রের তলায় জমছে। জমে জমে নদীর মুখের কাছে চড়া জেগে উঠছে। এই চড়া জমির সামল হয়ে ডাঙার পরিমাণ বাড়ছে আর সমুদ্রের আয়তন যাচ্ছে কমে।

      ডাঙার মাটি-পাথরে যা যা আছে, পলির সঙ্গে এসে পড়ছে সমুদ্রের পানিতে। তার সঙ্গে এসে পড়ছে প্রচুর লবণ। তাই সমুদ্রের পানি এত লোনা যে তা খাওয়াই যায় না। সমুদ্রপথে কোথাও যেতে হলে খাবার পানি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়।

      প্রতি লিটার সাগর জলে নানা ধরনের লবণের পরিমাণ প্রায় ৩৫ গ্রাম। এর মধ্যে ২৭.২ গ্রাম খাবার লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে ৩.৮ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম সালফেড ১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়ম সালফেড ১.৩ গ্রাম, আর পটাসিয়াম সালফেড ও ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের মোট পরিমাণ ১ গ্রাম-এরও কম।

      মহাসাগরগুলি সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করার প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে ১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশ জাহাজ ‘চ্যালেঞ্জার’ সমুদ্রের মোট ৭৭টি বিভিন্ন জায়গা থেকে জলের যে নমুনা সংগ্রহ করেছিল, তা বিশ্লেষণ ক’রে ব্রিটিশ রসায়নবিদ ডিটমার (১৮৮৪) দেখেছেন, প্রতি লিটার সমুদ্রের জলে নানা জাতের লবনে র পরিমাণ প্রায় ৩৫ গ্রাম। অথচ প্রায় একশো বছর পরেও দেখা যাচ্ছে সমুদ্রজলে লবনে র পরিমাণ প্রায় একই আছে। যদিও আটলান্টিক মহাসাগরে জলে লবনে র পরিমাণ (লিটারে ৩৪.৯০ গ্রা), ভারত (লিটারে ৩৪.৭৬ গ্রাম) ও প্রশান্ত (লিটারে ৩৪.৬২ গ্রাম) মহাসাগরের চেয়ে সামান্য বেশি। তবে নদীগুলো যতোই লবন এনে ফেলুক না সাগরের জলে, সমুদ্রের নোনতা ভাব তাতে বাড়ছে না। ভূ-বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বলেছেন, সমুদ্রের জলে মোট ৫ x ১০১৮ কিলোগ্রাম লবণ মিশে আছে।

      পরীক্ষা করে দেখা গেছে সমুদ্রের জলে সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইডের পরিমাণ নদীর জলের তুলনায় অন্ততঃ ১৭গুণ বেশি। এসব সত্ত্বেও নিজস্ব প্রক্রিয়ায় সমুদ্রজল তার নোনতা ভাব একই জায়গায় ধরে রাখছে। এই প্রক্রিয়ার একটা ব্যাপার হলো, মহাদেশগুলি থেকে অসংখ্য নদী নালা মারফৎ নানা ধরনের লবণ সমুদ্র যতোটা নেয় তার অনেকটাই আবার ফিরিয়ে দেয় মহাদেশকে। যেমন জোয়ারের সময়ে সাগরজলে মিশে থাকা লবণটুকু থিতিয়ে যায় মাটির শরীরে। সমুদ্রের জলকণা বাষ্প হয়ে মহাদেশগুলির দিকে ছুটে যাওয়ার সময়তেও সঙ্গে করে অনেকটা লবণ নিয়ে যায়। এই লবণের কিছুটা অংশ অবশ্য করে আবার নদী জলের সঙ্গে মিশে সমুদ্রে ফিরে আসে। তবে বেশ কিছুটা পড়ে থাকে ডাঙার মাটিতে। এছাড়া সমুদ্রের জলে বিভিন্ন ধরনের লবণের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অধঃক্ষেপ (Precipitate) তৈরী হয়, যা থেকে সামুদ্রিক স্তর অথবা খনিজ নুড়িও (Nodule) তৈরী হতে পারে।

      সমুদ্রে লবণের পরিমাণ সব সময়ে মোটামুটি একই রকম থাকলেও মাঝে মাঝে তারতম্য হয়। যেমন বৃষ্টিপাতের অঞ্চলে প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের ফলে সমুদ্রের নোনতা ভাব সমসাময়িকভাবে যেমন কমে, তেমনি প্রচণ্ড গ্রীষ্মের সময়ে সমুদ্রের জল বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে গেলে, সমুদ্রের জলে নোনতা ভাব খানিকটা বেড়ে যায়। এছাড়া সমুদ্রের জল ঠান্ডায় জমে হিমশৈল তৈরী হলেও যে সমুদ্রে শতকরা মাত্র ৩০ ভাগ লবণই বরফের ভেতরে যেতে পারে, বাদবাকী ৭০ ভাগই পড়ে থাকে সমুদ্রের জলে।

      Professor Answered on December 6, 2016.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.