সাধারণ ডায়েরী বা জিডি কি?

সাধারণ ডায়েরী বা জিডি কি?

Train Asked on March 16, 2015 in আইন.
Add Comment
1 Answer(s)

    জীবনে চলার পথে আমাদের নানা প্রতিকুলতা অতিক্রম করে চলতে হয়। সম্ভাবনা যেমন আমাদের দুয়ারে হাতছানি দেয় তেমনি প্রতিনিয়ত বাধা বিপত্তি ও কম আসেনা। অনেক সময় হুমকি বা নানাবিধ ভয়ভীতির সম্মুখিন হতে হয় অথবা কোন ফৌজদারী অপরাধ সংঘটনের উপক্রম হয় যা প্রতিরোধ করতে না পারলে সমাজে সংঘাত অপরিহার্য হয়ে উটবে। অথবা আপনার কোনো মূল্যবান জিনিস, কাগজপত্র বা কোনো দলিল হারিয়ে গেছে বা আপনার পরিচিত কেউ নিখোঁজ রয়েছেন।
    এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে নিকটবর্তী থানাকে জানানোর দায়িত্ব আপনার। আর এটি জানাবেন একটি সাধারণ ডায়েরির মাধ্যমে, যাকে আমরা সংক্ষেপে জিডি বলে থাকি। এ ধরনের জিডি করার অর্থ হলো বিষয়টি সম্পর্কে থানাকে জানানো, যাতে থানা কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য অপরাধটি সংঘটিত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে পারে। আবার অপরাধ সংঘটিত হলেও সহজেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। জিডি কোনো এজাহার বা মামলা নয়। এটি একটি ঘটনার বিবৃতি। তবে অপরাধ সংঘটিত হলে আগে করা জিডি অনেক সময়এজাহারে রূপান্তরিত হতে পারে। এ ধরনের জিডি কোনো এজাহার বা মামলার সমর্থনমূলক দলিলগত সাক্ষ্য হিসেবে অপরাধীর বিরুদ্ধে গৃহীত হয়ে থাকে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে একটি জিডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান দলিল।
    বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় সাধারণ ডায়েরী নামে একটি বই সংরক্ষণ করা থাকে। ইংরেজিতে একে General Diary বলা হয়। সংক্ষেপে আইনি ভাষায় G.D বলা আখ্যায়িত করা হয়। কোন ফৌজদারী অপরাধ সংঘটনের উপক্রম হলে বা আশঙ্কা দেখা দিলে অথবা কেউ কাউকে কোনরূপ হুমকি প্রদান করলে উক্ত ব্যাক্তি থানায় গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের কাছে ঘটনাটি মৌখিক বা লিখিত ভাবে অবগত করতে পারে। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার উক্ত ঘটনাকে গুরুত্তপুর্ন বিবেচনা করলে সাধারণ ডায়েরীতে ঘটনাটি সংক্ষিপ্ত আকারে লিপিবদ্ধ করে নেবেন। আইনগত ভাবে এরুপ পদ্ধতিকেই জিডি দায়ের করা বা জিডি করা বা জিডি এন্ট্রি করা বলা হয়। জিডি এন্ট্রি করার পর কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার জিডির একটি নির্দিষ্ট নম্বর ও তারিখ প্রদান করবেন।
    সাধারণত লিখিত ভাবে জিডির দরখাস্ত করতে হয়। দরখাস্তের তিনটি অনুলিপি করে দাখিল করা হলে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার এগুলোর একটি অনুলিপি থানায় রেকর্ড হিসাবে সংরক্ষণ করেন এবং অপর একটি অনুলিপি জিডি এন্ট্রির একটি নির্দিষ্ট নম্বর ও তারিখ প্রদান মোতাবেক সিলমোহর দিয়ে দরখাস্তকারীকে ফেরৎ প্রদান করেন। অবশিষ্ট অনুলিপিটি তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য রাখা হয়। প্রত্যেক জিডি এন্ট্রির গুরুত্তভেদে স্থানীয় ভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করার নিয়ম রয়েছে। উল্লখ্যে যে, জিডি এন্ট্রির ঘটনা সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে তদন্ত করা হয় তবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কোন দুর্ঘটনার বা ভবিষ্যতে ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হবার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়।
    জিডিতে যে বিষয় উল্লেখ করতে হবেঃ
    ঘটনার তারতম্যের কারণে জিডির উপাদানের পার্থক্য ঘটতে পারে। তবে কিছু সাধারণ উপাদান আছে, যেগুলো একটি জিডির মধ্যে থাকা প্রয়োজন। জিডি নিজে লেখা যায় আবার থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তাও লিখতে পারেন। নিচের কয়েকটি উপাদান জিডির মধ্যে থাকতে হবে।
    ১. থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সম্বোধন করে লিখতে হবে এবং থানার নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে।
    ২. বিষয় : ‘জিডি করার জন্য আবেদন’ এভাবে লিখতে হবে।
    ৩. অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা করলে জিডিতে আশঙ্কার কারণ উল্লেখ করতে হবে।
    ৪. হুমকি দিলে হুমকি দেওয়ার স্থান, তারিখ, সময়, সাক্ষী থাকলে তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
    ৫. হুমকি প্রদানকারী পরিচিত হলে তার/তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
    ৬. অপরিচিত হলে তাদের শনাক্তকরণের বর্ণনা দিতে হবে।
    ৭. অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কার ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন ব্যক্তি, সন্দেহের কারণ উল্লেখ করে তাদের নাম, পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে।
    ৮. জিডি নথিভুক্ত করে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে।
    ৯. সর্বশেষ জিডিকারীর নাম, স্বাক্ষর, পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা ও তারিখ দিতে হবে।
    জিডি এন্ট্রি সম্পর্কে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে যে বিষয়টি স্মরণ রাখা প্রয়োজন তা হল, কোন ফৌজদারী অপরাধ ঘটে গেলে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে থানায় এজাহার দায়ের করতে হয়। তবে যে ঘটনা বা অপরাধ এখন ও সংঘটিত হয়নি কিন্তু ঘটবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে কিংবা কোন রুপ হুমকি প্রদান বা শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবার আশংকা রয়েছে সে ক্ষেত্রে জিডি এন্ট্রি দায়ের করা আবশ্যক হয়ে পড়ে।

    Professor Answered on March 16, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.