সাম্প্রদায়িক এবং অসাম্প্রদায়িক-এর মধ্যে পার্থক্য কী?
সাম্প্রদায়িক এবং অসাম্প্রদায়িক-এর মধ্যে পার্থক্য কী?
ভোটের বাজারে একটা মোক্ষম প্রশ্ন পেয়েছি!!!!
উত্তর লিখতে গিয়ে বছর ২ আগে এক কোরা ব্যবহারকারী বাংলাদেশের ফারহানা ইসলাম(বর্তমানে তিনি আসেন না, এবং তাঁর একাউন্ট-ও নিষ্ক্রিয়) একটি উত্তর লিখেছিলেন, যা আমি পাঠকদের পড়তে উৎসাহিত করব, উত্তরটি এবং তার সাথে মন্তব্যগুলি- কারণ, তা যথেষ্ট সরেস,যদি আপনি রাজশেখর বসুর পরশুরাম গল্পসমগ্রের ‘লম্বকর্ণ’ পড়ে থাকেন, তাহলে বলা যায় ‘সাম্প্রদায়িক’ এবং ‘অসাম্প্রদায়িকের’ পার্থক্যকে আপনি অনায়াসে ‘লম্বকর্ণ’ ভাবতে পারেন, মানে টোটেম আর কি!!!
অর্থাৎ ডিফারেন্স বিটুইন ‘সাম্প্রদায়িক’ এন্ড ‘অসাম্প্রদায়িক’ = লম্বকর্ণ!!
বংশলোচন, লম্বকর্ণ নামক পাঁঠাটি তাঁর খালের ধরে হাওয়া খেতে গিয়ে সেই যে চুরুট খেয়ে ফেলার পর থেকে তাকে ঘরে নিয়ে এলো, তারপর থেকেই গল্পের চরিত্ররা,মানে, বংশলোচনের শ্যালক নগেন এবং দূরসম্পর্কের ভাগ্না উদয়, অন্তরঙ্গ বন্ধু বিনোদ উকিল,বৃদ্ধ কেদার চাটুজ্যে, সকলেই কিন্তু লোলুপ দৃষ্টিতে কিভাবে সেটিকে ভোজনে ব্যাবহার করা যাবে,সেই চিন্তায় মশগুল, এদিকে বংশলোচন পড়েছে সেই পাঁঠার মায়ায়, তাকে কেটে খাবে,এমন চিন্তা সে কিছুতেই করতে পারে না। সকলেরই কালিয়া-কাবাব খাবার লোভ দেখে ব্যান্ডমাস্টার লাটুবাবুকে গছিয়ে দেন বংশলোচন—শর্ত,লম্বকর্ণকে যত্ন করে প্রতিপালন করবে, টাকার লোভে বেচবে না, মাংসের লোভে মারবে না।
এদিকে লম্বকর্ণ তার উৎপাত জারি রাখে, কখনো ঢোলের চামড়া কেটেছে, কখনো ব্যায়লার তাঁত খেয়েছে, কখনো হারমোনিয়ার চাবি চিবিয়েছে,কখনো টাকার নোট, শেষে বংশলোচন তাকে আবার সেই লেকের ধারে ছেড়ে দিয়ে এলেও লম্বকর্ণের কারণেই সংজ্ঞা হারিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা বংশলোচনকে খুঁজে পায় তার স্ত্রী মানিনী। লম্বকর্ণ থেকে যায় বংশলোচনের বাড়িতেই।
অনুরূপভাবে, এই ‘সাম্প্রদায়িক’ এবং ‘অসাম্প্রদায়িকের’ পার্থক্য দেখুন-
গোবিন্দ গোপালকৃষ্ণ ফারহানা ম্যাডামের ‘বিচারে’ একজন ‘অসাম্প্রদায়িক’- কেন? বিচারের ভিত্তি কি? ভারতে বসে,ভারতীয় হয়ে তিনি বিগত ছয় দশকে ১১০ টি মসজিদ, ৪টি গীর্জা এবং মাত্র ১ টি মন্দির নির্মাণ করেছেন।
তিনি বেজায় পুলকিত, তাঁর নিজের দেশের লোকেদের তিনি শিক্ষাও দিচ্ছেন-
ফারহানা ম্যাডাম একজন শিক্ষিতা ব্যক্তি, ছেড়ে যাওয়ার আগে অবধি আমরা জেনেছি তিনি আইনের ছাত্রী ছিলেন, সুতরাং, ওনারই উবাচ- ‘ শিক্ষিত মানুষের সাম্প্রদায়িকতা অশিক্ষিত মানুষের সাম্প্রদায়িকতার থেকে বেশী ভয়ঙ্কর’ তা আমরা উপাসনালয়ের নির্মাণ সংখ্যা থেকে যে জানতে হয়,তা জানতে পারলাম।
বেশ,!! পরের ধাপ, মন্তব্য-বাক্স:
লম্বকর্ণের গল্পে ফিরি। বংশলোচনের ঘরে নিয়মিত বিতর্ক সভার আয়োজন হতো, তো হয়েছে কি, সেদিনের বিষয়বস্তু ছিল বাঘের ‘মাপ'(সাইজ) নিয়ে। গল্পের চরিত্রগুলির নাম আগেই উল্লেখ করেছি, এইবারে সংলাপগুলি দেখুন,-
আজ যথাসময়ে আড্ডা বসিয়াছে। বংশলোচন এখনও বেড়াইয়া ফেরেন নাই। তাহার অন্তরঙ্গ বন্ধু বিনোদ উকিল ফরাশের উপর তাকিয়ায় ঠেস দিয়া খবরের কাগজ পড়িতেছেন। বৃদ্ধ কেদার চাটুজ্যে মহাশয় হুঁকা হাতে ঝিমাইতেছেন। নগেন ও উদয় অতি কষ্টে ক্রোধ রুদ্ধ করিয়া ওত পাতিয়া বসিয়া আছে, একটা ছুতা পাইলেই পরস্পরকে আক্রমণ করিবে।
আর চুপ করিয়া থাকিতে না পারিয়া উদয় বলিল—’যাই বল, বাঘের মাপ কখনই ল্যাজ সুদ্ধ হ’তে পারে না। তা হ’লে মেয়েছেলেদের মাপও চুল—সুদ্ধ হবে না কেন? আমার বউ এর বিনুনিটাই তো তিনফুট হবে। তবে কি বলতে চাও, বউ আট ফুট লম্বা?’
নগেন বলিল—’দেখ উদো, তোর বউ—এর বর্ণনা আমরা মোটেই শুনতে চাই না। বাঘের কথা বলতে হয় বল।’
চাটুজ্যে মহাশয়ের তন্দ্রা ছুটিয়া গেল। বলিলেন—’আঃ হা, তোমাদের এখানে কি বাঘ ছাড়া অন্য জানোয়ার নেই?’
এমন সময় বংশলোচন ছাগল লইয়া ফিরিলেন। বিনোদবাবু বলিলেন— ‘বাহবা, বেশ পাঁঠাটি তো। কত দিয়ে কিনলে হে?’
বংশলোচন সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিলেন। বিনোদ বলিলেন—’বেওয়ারিস মাল, বেশী দিন ঘরে না রাখাই ভাল। সাবাড় করে ফেল—কাল রবিবার আছে, লাগিয়ে দাও।’
তারমানে, প্রশ্ন করলো বাঘের সাইজ নির্ধারণে ‘লেজ’ কে গণনায় নেওয়া হবে কি-না এবং তার সঙ্গে ওই একই যুক্তিতে বৌয়ের বিনুনিও উচ্চতা মাপতে ব্যাবহার হবে কিনা- সেই তর্ক থেকে সোজা ‘লম্বকর্ণের’ প্রবেশমাত্র সাবাড় করার চিন্তা!!!
পরের মন্তব্য:
এইবারে কিন্তু ফারহানা ম্যাডাম ১০০ মসজিদ ‘বনাম’ ৪ টি গীর্জা, ১টি মন্দির তত্ত্ব থেকে সরে এসে গোবিন্দবাবাজির ‘স্থাপত্যবিদ্যার ঝোঁকে’র তত্ত্ব শোনালেন। যদিও জানাতে ভোলেননি, নকশার সাথে ধর্ম পালন এবং অবহেলার সম্পর্ক নিয়ে বিশেষভাবে গবেষণা করা হয়ে ওঠেনি।
এইবারে এই নরাধমের আগমন, পরের মন্তব্য:
নাগাল্যান্ডের কোহিমায় War Memoria-এ লেখা আছে অদ্ভুত মর্মস্পর্শী কয়েকটি লাইন , ’ When you go home, tell them of us and say, for your tomorrow, we gave our today ‘
নাথুরাম জীবিত থাকলে দেখতেন যে তাঁরা যাকে সংখ্যালঘু তোষন বলতেন বিজেপি ছাড়া আর সব রাজনৈতিক দল তা অব্যহত রেখেছে । দেখতেন মুসলিমদের পয়গম্বরের জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি ঘোষনা করা হয়েছিল , মুসলিম সেন্টিমেন্ট আহত হওয়ার ভয়ে সলমন রুশদির ‘ স্যাটানিক ভার্সেস ’ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছিল , মুসলিম ব্যাক্তিগত আইনকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের আদালতের নাগালের বাইরে রাখা হয়েছিল ।
লক্ষ্য করুন, আমার মন্তব্যটি কোরা মুছে ফেলেছিলো, ‘সাম্প্রদায়িক’ এবং ‘অসাম্প্রদায়িকের’ পার্থক্য লম্বকর্ণের মতোই এ সমাজে রয়ে যাবে, ঘুচবে না, বংশলোচনরা যদি বেঁচে থাকে তবে লম্বকর্ণ শশীকলার মতো বাড়িতে থেকেই বাড়বে, তার আধ হাত দাড়ি গজাবে, কিন্তু বংশলোচনরা আর তার খোঁজ করবে না, তারা থাকবেন ‘ইলেকশন’ নিয়ে ব্যস্ত।
বুঝলেন তো? বুঝলেন না? বুঝলেন তো?!?!