রিক পুরাণ অনুযায়ী, নারসিসাস একজন শিকারি ছিলেন। তিনি নদী দেবতা চেপিসাস এবং মৎস্য কন্যা লিরিওপির সন্তান। দেখতে ছিলেন সুদর্শন। এর জন্য চারদিকে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। একদিন পুকুর ধারে যেয়ে নারসিসাস দেখল নিজের চেহারা। তখন ঘটে গেল এক অদ্ভুত ব্যাপার। নিজের প্রেমে পড়ে গেল নারসিসাস। কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে চাইছিল না, ওটা আসলে তার প্রতিরূপ। তার প্রতিরূপকে না পাবার বিরহে পুকুর পাড়েই মৃত্যু ঘটে নারসিসাসের।
আর এই নারসিসাসের সাথে মিল রেখে একটি মনোরোগের নাম রাখা হয়েছে নারসিসিজম। অর্থাৎ অতিমাত্রায় আত্মমুগ্ধতা। বর্তমানের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেকেই সেলফি অর্থাৎ নিজের ছবি নিজে তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। কেউ কেউ বলছেন, এটা নারসিসিজমের লক্ষণ। আসলেই কি তাই?
কেস স্টাডিঃ
আমি গোসল করছিলাম। বাথরুমের জানালা দিয়ে আলো আসছিল। আলো পড়ছে আমার উপর। যেন আমার বয়স কমে যাচ্ছিল। অনেক উজ্জীবিত হচ্ছিলাম মনে মনে। স্বামীর ডাক শুনতে পেলাম- এই দেরি হচ্ছে কেন, কখন খেতে যাবো! বাথরুম থেকে বের হলাম। আমার স্বামী তখন খবরের কাগজে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে। না, মুখ তুলল না। অন্য ঘরে আমার আইপ্যাড রাখা ছিল।
অভিজ্ঞতাগুলো, মুহূর্তগুলো এখন আমরা নিজেরাই ধরে রাখতে পারি, শেয়ার করতে পারি। একটা পরীক্ষা করতে ইচ্ছে করলো আমার। নিজের ছবি তুলতে লাগলাম। শেয়ার দিলাম। আমার স্বামী আমাকে নারসিস্ট বলে অপবাদ দিলো। আমার মেয়ে আমার সততার প্রশ্ন তুলল। শেষে মেয়ে বলল, একটা দিতে পারতে, তাই বলে ২০ টা!
সিদ্ধান্তঃ
ব্যাপারটা আমাকে ভাবালো। সেদিন আমি অমন কেন করলাম? কারন, সেদিন নিজেকে অনেক বেশী সতেজ মনে হচ্ছিল। কেন বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে হয়েছিল? কারন, সান ড্রেসটা খুব পছন্দের ছিল আমার। কারন, গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন যেন আমার বয়স কমিয়ে দিয়েছিল। কারন, সেদিনের অনুভূতি দেখার জন্য, সংরক্ষণ করার জন্য কেউ ছিল পাশে না। নিজের কেউ ছাড়া এই দায়িত্ব আসলে কাউকে দেয়া যায় না।
কোন নির্দিষ্ট দিন কেমন যাচ্ছে তার উপর যদি ভিজুয়াল মেমরি রাখতে চাই, তবে সেলফি জরুরী। কেউ তো কখনো জিজ্ঞেস করে না, ডায়েরী কেন লেখা হচ্ছে! সেলফি এই ডায়েরীর মতই। টেকনোলোজির কারণে এর রূপটা ভিন্ন। তাই আমি গর্বের সাথে বলি, আমি সেলফি সমর্থন করি।
ডঃ বারবারা বেকার হলস্টিন, সাইকোলোজিস্ট-এর লেখা অবলম্বনে