স্ট্রোক হওয়ার লক্ষণ কী অর্থাৎ কী করে বুঝব যে একজন স্ট্রোক করেছে?

স্ট্রোক হওয়ার লক্ষণ কী অর্থাৎ কী করে বুঝব যে একজন স্ট্রোক করেছে?
Add Comment
1 Answer(s)

    হার্ট অ্যাটাককে আমরা অনেকেই ভুল করে স্ট্রোক বলে থাকি। কিন্তু হৃৎপিণ্ডের সাথে স্ট্রোকের যতটা না সম্পর্ক তার চাইতে বেশি সম্পর্ক হলো মস্তিষ্কের সাথে। মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্ত সরবরাহ অনেক কমে গেলে হয় স্ট্রোক। রক্ত প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে রক্তপিণ্ড বা ব্লাড ক্লট। অথবা অনেক সময় দেখা যায় মস্তিষ্কের ধমনীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে গেলেও দেখা যায় স্ট্রোক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও হতে পারে এর আরেকটি কারণ।

    বয়সের সাথে সাথে বাড়ে স্ট্রোকের আশঙ্কা কিন্তু তাই বলে কমবয়সে স্ট্রোক হবে না এর কোনও নিশ্চয়তা নেই কিন্তু। ৫৫ বছর বয়সের পর এর ঝুঁকি বেশি থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ফলেও এর প্রকোপ বাড়তে পারে। স্ট্রোক হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। আর মৃত্যু না ঘটলেও পক্ষাঘাত থেকে শুরু করে মারাত্মক সব শারীরিক জটিলতার উৎপত্তি হতে পারে। স্ট্রোক হবার তিন ঘণ্টার মধ্যে যদি এর যথাযথ চিকিৎসা করা সম্ভব হয় তবে বেঁচে যেতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তিটি। এ কারণে স্ট্রোকের উপসর্গ চিনতে পারা খুবই জরুরি।

    স্ট্রোক করার লক্ষণ :

    – হঠাৎ করে সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়া।
    – জ্বর এবং বমি হওয়া।
    – মুখমন্ডল,হাত, পা বিশেষ করে শরীরের একটি দিকের অবশতা।
    – অন্যান্যদের কথা বুঝতে অসুবিধা হওয়া বা বিভ্রান্তি।
    – কথা বলতে কষ্ট হওয়া।
    – এক চোখে বা উভয় চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া।
    – হাঁটাচলা করতে সমস্যা হওয়া এবং টলতে থাকা।
    – হঠাৎ করে প্রচণ্ড মাথাব্যাথা।

    এগুলোর যে কোনও একটি বা কয়েকটি উপসর্গ যদি টের পান তবে অতিসত্বর নিকটবর্তী কাউকে জানান এবং চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

    অনেক সময়ে দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তিটি নিজের অসুস্থতাকে আমল দিচ্ছেন না। আপনার সামনে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং আপনার আশঙ্কা হয় যে তার স্ট্রোক হয়েছে, তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন খুব সহজেই।

    তাকে এ কাজগুলো করতে বলুন :

    – আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে হাসতে বলুন। যদি দেখেন তার হাসতে সমস্যা হচ্ছে অথবা হাসার সময় মুখের একাংশ বাঁকা হয়ে আসছে এবং অপর অংশ শক্ত হয়ে আছে, তবে স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশ প্রবল।

    – তাকে বলুন সাধারণ একটি বাক্য বলতে। যদি দেখেন যে তার কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে তবে বুঝতে পারবেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা আছে।

    – তাকে বলুন দুই হাত মাথার ওপর উঁচু করে তুলতে। এতে যদি তার কষ্ট হয় এবং দুই হাত বা যে কোনও এক হাতে ব্যাথা লাগে তবে এটা হবে স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ।

    – আরেকটি পরীক্ষা করতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বলুন জিহ্বা বের করতে। যদি দেখেন জিহ্বা এক পাশে বাঁকা হয়ে আছে তবে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিন।

    এসব উপসর্গের যে কোনটি দেখলেই সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করুন এবং আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিন। প্রতি মিনিট দেরি হওয়া মানেই তার জীবনের ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাওয়া। আর একটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেন কিছু খাওয়ানো বা পান করানো না হয়। এ সময়ে গিলতে অসুবিধা হয় বলে তার শ্বাসনালীতে খাদ্য বা পানীয় আটকে গিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।

    স্ট্রোক নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বেশ কিছু কুসংস্কার। আসুন জেনে নেই সত্যিটা কি :

    – স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায় না এটা আসলে ভুল ধারনা। ৮০ শতাংশ স্ট্রোকই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
    – স্ট্রোক হয়ে গেলে এর কোনও চিকিৎসা নেই, এটাও ভুল ধারনা। স্ট্রোক হলে অতিসত্বর চিকিৎসা করতে হয়।
    – স্ট্রোক শুধুমাত্র বয়স্ক মানুষের হয়, এটাও ঠিক নয়। যে কোনও বয়সে, যে কারও স্ট্রোক হতে পারে।
    স্ট্রোক হয় হৃৎপিণ্ডে, এটা বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন। স্ট্রোক আসলে মস্তিষ্কে হয়।

    স্ট্রোক যে কারও হতে পারে তাই আমাদের সবারই উচিত খুব সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলা আর তাহলেই স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে আসবে। এর জন্য ধূমপান বর্জন করুন, উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনুন, ওজন রাখুন পরিমিত এবং ডায়াবেটিস রাখুন নিয়ন্ত্রনে। আর অসুস্থতা বোধ করলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না ।

    Professor Answered on July 6, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.