cআপনার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কোনটি?

    আপনার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কোনটি?

    Default Asked on November 17, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে। কিছু কিছু ঘটনা মানুষের জীবন একদম বদলে দেয়। ছাত্রাবস্থায় একরকম জীবন। বিশেষ করে কলেজে ভরতি হবার পর মনে হয়, অনেক বড় হয়ে গেছি। ভাব বেরে যায়। চাকরিতে ঢুকলে আরেক রকম জীবন শুরু হয়। বিয়ের পর নতুন একটা জীবন শুরু হয়। আবার সংসারে শিশু এলে আরেক রকম জীবন শুরু হয়। পুত্র কন্যা বড় হয়, তাদের বিয়ে হয়ে যায়, তারপর আরেক রকম জীবন শুরু হয়ে যায়। সুখে দুখে জীবনের অনেকটা সময় পার করে এসেছি। মাঝে মাঝে পেছনে ফিরে তাকাই। তখন কষ্ট হয়, নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আমার জীবনে স্মরনীয় ঘটনা অনেক গুলো। আমি দশটা স্মরনীয় ঘটনা বলতে চাই।

      ১। একদিন ভরদুপুরে নীলা আমাকে ফোন করে বলল, দুপুরে নিশ্চিয়ই এখনো খাওনি। বাসায় আসো। একসাথে দুপুরে ভাত খাবো। নীলা আমার বন্ধু। আমি গেলাম নীলার বাসায়। নীলা অনেক কিছু রান্না করছে। তৃপ্তি করে খেলাম। খাওয়া শেষ করে আমি ব্যলকনিতে গেলাম। সিগারেট খাবো। তখন নীলা আমার জন্য চা নিয়ে এলো। হঠাৎ তার কি হলো কে জানে, আমাকে জড়িয়ে ধরলো। চুমু দিতে শুরু করলো। নিজের অজান্তেই বিছানায় চলে গেলাম। তারপর যা হবার হলো। আমি কোনো জোরজবরদস্তি করি নাই। অথচ আজও আমার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করে। যদিও নীলার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। কি নিয়ে আমাদের দুরত্ব হলো, সেটা আজ আর মনে নেই।

      ২। তখন আমার একটা সাইকেল ছিলো। সারা শহর আমি সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াতাম। একদিন মিরপুর বেড়িবাঁধ গিয়েছি। তুরাগ নদী তখন পানিতে টইটম্বুর। ফেরার পথে সাইকেল নষ্ট হয়ে গেলো। অনেক খোজাখুজি করে সাইকেল সারাইয়ের দোকান খুজে পেলাম না। একলোক একটা ঠিকানা দিলো। ভুল ঠিকানা। সেখানে গিয়ে দেখি বাংলা মদ খাচ্ছে কিছু লোক। একজন বলল, সাইকেল সারাইয়ের লোক এখানে পাবেন না। কিন্তু এখানে যখন এসেছেন সামান্য বাংলা মদ খেয়ে যান। মদতদ আমি খাই না। তবু তারা এত করে বলছে, তাই পাচ পেগ খেয়ে নিয়ে নিলাম। তাদের সম্পূর্ণ অপরিচিত আমি। অথচ তারা নিজেদের টাকায় আমাকে মদ খাইয়েছে। সেই লোক গুলোর কথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে।

      ৩। অফিসের কাজে ফরিদপুর গিয়েছিলাম। এক ডাকবাংলোয় উঠেছি। নোংরা ঘর। তারচেয়েও বেশি নোংরা ওদের বাথরুম। রাত তখন দুটা। চোখে একটুও ঘুম নেই। মনে হচ্ছে কবে ঢাকা যাবো! বাথরুমে যাওয়া দরকার। প্রস্বাব করবো। রুমের বাইরে বাথরুম। দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি, ফকফকা জোছনা। জোছনা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, মাঠের মাঝখানে একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটাকে ঘিরে চারটা কুকুর। কুকুর গুলো যেন মেয়েটার পাহাড়াদার। মেয়েটা কে? এতরাতে মাঠে বসে আছে কেন? মেয়েটার ঘটনা কি? নাকি আমার চোখের ভুল? আমি স্বপ্ন দেখছি? আমার ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ডেকে আনি। দুজন মিলে গল্প করে সারারাত কাটিয়ে দেই।

      ৪। শরীয়তপুর গিয়েছি বড় ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি। বাড়ির পেছনে কবরস্থান। ঘুম আসছিলো না। নতুন পরিবেশে এবং অন্য কারো বিছানায় আমার ঘুম আসে না। মধ্যরাত। কার্লভাটের উপর বসে আছি। সামনে পেছনে বিশাল ধানক্ষেত। অন্ধকারে ধানক্ষেত দেখা যায় না। তবে বাতাসের কারনে ধানক্ষেত দুলে ওঠে। সরসর সর শব্দ হয়। অতি মনোরম পরিবেশ। চারিদিকে সুনসান নিরবতা। গাঢ় অন্ধকার। আমি সিগারেট খাচ্ছি। একাকীত্ব উপভোগ করছি। হঠাৎ কিছু একটা শব্দ পেলাম। কয়েকজন লোক আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমাকে দেখে থামলো। বলল, কবরস্থান টা কোন দিকে। একটা লাশ কবর দিতে হবে। আমি বললাম লাশ কোথায়? লোক গুলো অতি কুৎসিতভাবে হাসলো। আমি জ্ঞান হারালাম।

      ৫। জসিমউদদীন রোডে এক বাসায় দাওয়াত ছিলো। হেভি খাওয়া দাওয়া করলাম। সিগারেট খেতে নিচে নেমেছি। দুপুর বলেই রাস্তাঘাট কেমন ফাকা ফাকা। কোথা থেকে একটা মেয়ে এলো। আঠারো বিশ বছর হবে। ভালো স্বাস্থ্য। কিন্তু মেয়েটা সম্পূর্ণ উলঙ্গ। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। মেয়েটা বলল, সিগারেট দাও। মেয়েটা আমার হাত থেকে সিগারেট নিলো। সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে মুখ ভর্তি করে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলো। মেয়েটা বলল, আমাকে একটা শাড়ি কিনে দিবে প্লীজ? জীবনে প্রথম নগ্ন মেয়ে দেখে আমি ভীষণ অবাক! কি সুন্দর স্তন। ঝুলে যাওয়া স্তন নয়। সুন্দর নিতম্ব। আমি শিল্পী হলে এই মেয়েটার একটা ছবি একে দিতাম। যাইহোক, মেয়েটাকে বললাম, শাড়ি কিনে দিতে পারবো। তোমাকে টাকা দিচ্ছি তুমি শাড়ি কিনে নাও। আমার কথা শুনে মেয়েটা রাগ করলো। এবং চলে গেলো।

      ৬। খবর পেলাম আমার বন্ধু মিজানকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। মিজান মেসে থাকে। ঢাকায় মিজানের কেউ নেই। তাছাড়া মিজানের বাবা আমাকে বলেছেন, মিজানের দিকে খেয়াল রাখতে। মিজান অত্যাধিক ভালো ছেলে। লেখাপড়ায় খুব ভালো। কোনো খারাপ অভ্যাস নেই। গিলগাও পুলিশ ফাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি মিজান নেই। পুলিশ আমাকে বলল, থানায় যখন এসেই পড়েছেন। আমাদের চা নাস্তা খাওয়ার টাকা দিয়ে যান। আমি বললাম আমার কাছে কোনো টাকা নেই। পুলিশ বলল, তাহলে তোমাকে ছাড়া যাবে না। পুলিশ একজনকে ডেকে বলল, শালাকে ভিতরে ঢুকা। আমি অবাক। পুলিশ আমাকে সত্যি সত্যি লকাপে ঢুকিয়ে দিলো।

      ৭। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। সারারাত ভালো ঘুম হয়নি। শুধু এপাশ ওপাশ করেছি। ভোরের দিকে দারুণ ঘুম এলো। গভীর ঘুম। তখন বড় ভাই মোবাইলে আমাকে ফোন করলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোন ধরলাম। বড় ভাই বলল, আব্বা মারা গেছে। প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেলাম। বাবা বেচে নেই! আমার বাবা বেচে নেই! বেশ কিছু দিন ধরে আব্বা হাসপাতালে ভরতি। আলসেমি করে বাবাকে দেখতে পর্যন্ত যাইনি! আব্বার দুই একদিনের মধ্যে বাসায় ফেরার কথা ছিল। যাইহোক, আব্বাকে নিয়ে গ্রামে গেলাম। গ্রামে দাদার পাশে আব্বাকে কবর দেওয়া হবে। যখন আব্বাকে কবরে নামানো হচ্ছিলো আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। আপনাতেই চোখ ভিজে যাচ্ছিলো। আব্বাকে কবরে নামানোর দৃশটা কোনোদিন ভুলিব না।

      ৮। এক মেয়ে আমার জন্য প্রায় পাগল। আমাকে বিভিন্ন জায়গায় খুজে বেড়ায়। মাঝে মাঝে আমার দেখা পায়। দূর থেকে আমাকে দেখে। আমি তাকালেই আড়ালে চলে যায়। মেয়েটাকে নিয়ে আমি চিন্তিত নই। অনেক মেয়েই আমাকে পছন্দ করে। যাইহোক, মেয়েটা একদিন আমাকে ফোন করলো। বলল, নীল শার্টে আপনাকে খুব সুন্দর লাগে। সেদিন দেখলাম রাস্তায় দাড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছেন। একদিন দুপুরবেলা হুট করে আমি মেয়েটার বাসায় চলে যাই। সে আমাকে দেখে ভীষণ অবাক হয়। টেবিলে খাবার রেডি ছিলো। কথা না বাড়িয়ে আমি খেতে বসে গেলাম। খাওয়া শেষ হবার আগেই মেয়েটার বাবা চলে আসে। আমি একটুও ভয় পাইনি।

      ৯। একদিন আমার খুব রাগ হলো। কার উপর রাগ? দুনিয়ার সবার উপরই আমার রাগ। মার উপরে রাগ হলো। কারন তাকে রান্না করতে বলেছি, পোলাউ আর মাংস। সে রান্না করছে ধুন্দুল দিয়ে রুই মাছ। আব্বার উপরে রাগ হয়েছে। আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব, পরিচিত অপরিচিত সবার উপরই রাগ হয়েছে। এক বইতে পড়েছিলাম, রাগ হলে হাটাহাটি করলে রাগ পানি হয়ে যায়। আমি হাটতে হাটতে চলে গেলাম এয়ারপোর্ট। টানা তিন ঘন্টা হেটে আমি ক্লান্ত, বিধস্ত, হতাশ।

      ১০। তখন আমি সৌদি থাকি। একদম বর্ডার এলাকায়। জায়গাটার নাম হাফার আল বাতেন। ভয়াবহ কষ্ট। থাকার কষ্ট, খাওয়ার কষ্ট, পানির কষ্ট। এবং প্রচুর গরম। টাকার কষ্ট। সারারাত ছটফট করি। থ্রি স্টার হোটেলের ম্যানেজারের চাকরির কথা বলে, আমাকে কাজ দিয়েছে কাঠমিস্ত্রীর হেলপার। মরুভূমির গরম বালু এসে সারা শরীরে মেখে যায়। মরুভূমির অনেক গভীরে কিছু বেদুইন থাকে। তাবুতে তাদের বসবাস। তারা মূলত পতিতা। ঘটনা চক্রে এক বেদুইন নারীর সাথে আমার পরিচয় হয়ে যায়। মেয়েটার নাম ফাতিমা। দু:খী মেয়ে। মেয়েটা আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়েটাকে আমি ফাকি দিয়ে দেশে ফিরে আসি।

      ঠিক এরকম ঘটনা আরেকটা ঘটেছিলো। তখন আমি মালোশিয়া থাকি। একটা কোম্পানিতে লেবার হিসেবে কাজ করি। আমি থাকতাম পানাং নামে এক এলাকায়। পাচ তলা এক বিল্ডিং এর দোতলায় আমি থাকতাম। মেয়েটা থাকতো পাচতলা। মেয়েটার নাম নাতাশা। নেপাল থেকে এসেছে মালোশিয়া লেখাপড়া করার জন্য। একদিন মেয়েটা লিফটের মধ্যে অসুস্থ হয়ে যায়। আমি তাকে কোলে করে তার রুমে নিয়ে যাই। তারপর থেকে মেয়েটার সাথে আমার ভাব হয়ে যায়। হুটহাট নাতাশা আমার রুমে আসে, কখনো কখনো আমি নাতাশার রুমে যাই। ছুটির দিনে আমরা মালোশিয়ার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। একদিন নাতাশার জ্বর। সারারাত আমি জেগে নাতাশার পাশে বসে ছিলাম। তার সেবা করেছি। ভোরের দিকে নাতাশা আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমরা মিলিত হই। নাতাশা আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি দেশে ফিরে আসি।

      Professor Answered on November 17, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.