আপনি জীবনে কখন বা কোন ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলেন?
আপনি জীবনে কখন বা কোন ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলেন?
১। তখন আমি একটা পত্রিকা অফিসে চাকরি করি। অফিসের কাজে গোপালগঞ্জ গিয়েছিলাম। একটা ডাক বাংলোয় উঠেছি। রাতে খাওয়ার জন্য ভাটিয়াপাড়া গিয়েছিলাম। খাওয়া শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। আমরা বেশ কয়েকজন ছিলাম। কি মনে করে শর্টকাট রাস্তা নিলাম। গ্রামের ভিতর দিয়ে ফিরছি। গ্রামের নাম পোনা গ্রাম।
পোনা গ্রামের লোকজন আমাদের ঘিরে ধরলো। আমাদের মারতে শুরু করলো। আমার সাথে থাকা লোকজন এদিক সেদিন পালাতে সক্ষম হলো। আমি আটকা পড়ে গেলাম। আমাকে সমানে মেরে যাচ্ছে। লাঠি দিয়ে। আমার শরীর থেকে রক্ত পড়ছে। জামা কাপড় ছিড়ে গেছে। গ্রামবাসী বলছে আমি নাকি ডাকাত। অফিসের আইডি কার্ড দেখালাম। গ্রামবাসী বলল, এটা নকল। আবার মাইর শুরু করলো।
আমাকে জানেই মেরে ফেলতো। কিন্তু পুলিশ এসে আমাকে বাচালো। আমাকে থানায় নিয়ে গেলো। কলাপে ঢুকিয়ে দিলো। আমি বললাম আমাকে দয়া করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। পুলিশ আমাকে ধকক দিলো। এক বোতল পানিও দিলো না। সারারাত লকাপে কাটালাম। ভয়াবহ এক রাত পার করলাম। সকালে অফিস থেকে ফোন করলো। পুলিশ আমাকে ছেড়ে দিলো। চা নাস্তা খাওয়ালো।
২। এই কাহিনী টা ভৌতিক। অফিসের কাজে ফরিদপুর গিয়েছিলাম। টানা সাত দিন থাকতে হবে। আমি ঘরকুনো মানুষ। নিজের গ্রামেই পারতপক্ষে যাই না। রাতের বেলা ভয় ভয় করে। থাকে না বিদ্যুৎ। বাথরুম হয় নোংরা। অফিসের কাজে যেতেই হবে, অন্য কোনো উপায় নেই।
একটা ডাকবাংলোয় উঠেছি। সারাদিন কাজ করি। রাতে ডাকবাংলোয় এসে ঘুমাই। একদিন রাতে ফিরতে দেরী হয়ে গেলো। বাইকে করে রফিক ভাই আমাকে ডাকবাংলোয় নামিয়ে দেন। সেদিন মাঝরাস্তায় হঠাৎ বাইক বিগড়ে গেলো। কিছুতেই বাইক ঠিক হয় না। রফিক ভাই বললেন, আমাকে একা চলে যেতে। একদম সহজ রাস্তা। হেটে যেতে সময় লাগবে পনের মিনিট। আমি বললাম, রফিক ভাই কোনো চিন্তা করবেন না। আমি চলে যেতে পারবো।
অন্ধকার রাস্তায় আমি হাটছি। পুরো রাস্তা খালি। আমি খুবই ভীতু প্রকৃতির মানুষ। ভয়ে আমি কাপছি। আমি পথ খুজে পাচ্ছি না। রফিক ভাই বলেছেন, পনের মিনিটের পথ ডাকবাংলোয়। অথচ আমি এক ঘন্টা ধরে হাটছি। অনেক গুলো কুকুর আমার পিছু নিয়েছে। তারা সমানে ঘেউ ঘেউ করছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এলো। তার হাতে একটা লাঠি। মাথার চুল এলোমেলো। আমাকে দেখে বিকট এক হাসি দিলো। আমি জ্ঞান হারালাম।
৩। মেয়েটার নাম মিলি। আমার বন্ধু। আমরা খুব ভালো বন্ধু। একই স্কুল কলেজে লেখাপড়া করেছি। অনার্সে মিলি ইডেন কলেজে ভরতি হলো, আর আমি ভরতি হলাম জগা বাবুতে। যাইহোক, অনার্স শেষ করার আগেই মিলির বিয়ে হয়ে গেলো। তারপর সে তার স্বামীর সাথে লন্ডন চলে গেলো। আমার সাথে আর যোগাযোগ রইলো না।
এক বছর পর মিলি একা ফিরে এলো। গেলাম মিলির সাথে দেখা করতে। সব ঘটনা জানলাম। মিলির স্বামী বাজে লোক। স্বভাব চরিত্র ভালো নয়। এমনকি সে মিলিকে রাতে মদ খেয়ে মারতো। মিলি স্বামী কে ছেড়ে চলে এসেছে। মিলুর সাথে আমার প্রতিদিন দেখা হয়। আমরা খুব আড্ডা দিচ্ছি। ঘুরে বেড়াচ্ছি। তবু মিলির মন খারাপ ভাব যায় না। মিলি বলল, আমাকে নিয়ে সমুদ্রে যাবে? সমুদ্র আমার ভালো লাগে।
আমরা কক্সবাজার গেলাম। মিলি সমুদ্রে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করলো। বার বার ঢেউ মিলিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। টানা তিন দিন থাকলাম। পরের দিন রাতে আমরা ঢাকায় ফিরবো। আমি মিলিকে বললাম, চলো আজ তোমাকে নিয়ে বার্মিজ মার্কেটে যাই। মিলিকে নিয়ে অনেক কেনাকাটা করলাম। শেষ বারের মতো দুজন মন ভরে সমুদ্র দেখে নিলাম। রাতে দুজন রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে হোটেলে ফিরলাম। রুমের দরজা খুলতেই দেখি মিলি মন খারাপ করে বসে আছে। মিলি বলল, আমাকে রেখে একা একা কোথায় গিয়েছিলে? সারা বিকাল আমি একা রুমের ভেতর বসা। আমি প্রচন্ড রকম অবাক হলাম। তাহলে আমি এতক্ষন কার সাথে ঘুরে বেড়ালাম।