কিভাবে আমি আমার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে পারি?
কিভাবে আমি আমার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে পারি?
এই মহামারি পরিস্থিতিতে আমরা সবাই সারাক্ষণই বাড়িতে থাকছি। পরিবারের সদস্যদের সাথে কি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দিন কাটাচ্ছি? নাকি মাঝে মধ্যেই ঝগড়াঝাটি লেগে যাচ্ছে? দেখিতো এই দুঃসময়ে ঝগড়াঝাটি মিটিয়ে একসাথে মিলে-মিশে থাকার কোনো উপায় আছে কি-না।
একটা পরিস্থিতি কল্পনা করা যাক। ধরুন, আপনার গৃহকর্মী এখন নেই, ফলে বাড়ির সব কাজের ভার এসে পড়েছে আপনার ওপর। আপনার স্বামী বা স্ত্রী কেবল নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে তার সাথে যোগাযোগের জন্য আপনার হাতে চারটি অপশন বা বিকল্প আছে-
১। আক্রমণাত্মকঃ আপনি রেগে মেগে আগুন হয়ে বলছেন, “সব কাজ কি আমি একাই করবো? তুমি শুধু বসে বসে খাবে? কত বড় জমিদার তুমি! ব্লা ব্লা ব্লা…”।
২। অবনতঃ কাজগুলো আপনার একা করতে কষ্ট হলেও সাহায্য চাইছেন না। যদি সে কিছু মনে করে! আপনি কোনো ঝামেলায় যেতে চান না এবং সবসময় অন্যদেরকে খুশি করতে চান। তাই গদগদ হয়ে জীবনসঙ্গীকে বলছেন, “আমি একাই পারবো। তুমি বরং তোমার কাজে মন দাও। তোমার খুশিই আমার খুশি”। অথচ মনে মনে আফসোস করে বলছেন, “উফ এত কাজ! কেউ যদি একটু সাহায্য করতো! কেউ বোঝে না আমার কষ্ট”।
৩। অবনত-আক্রমণাত্মকঃ আপনি চিৎকার চেঁচামেচি করছেন না, কিন্তু বিরক্ত ও গোমড়ামুখো হয়ে আছেন। কালেভদ্রে রেগেও যাচ্ছেন, বিশেষ করে একজনের রাগ আরেকজনের ওপর ঝাড়ছেন।
৪। দৃঢ়প্রত্যয়ীঃ আপনি নিজের আবেগ-অনুভূতি সামলে নিতে পারেন। কচ্ছপ কৌশলটি হয়ত আপনার জানা আছে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি শান্ত ও দৃঢ়ভাবে আপনার জীবনসঙ্গীকে বলছেন, “বাসার সব কাজ একা করতে আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে। কি করা যায় বলো তো? তুমি কি কিছু কাজে আমাকে সাহায্য করতে পারো?”
চারটি অপশনের মধ্যে কি আপনি ৪ নম্বরটিকেই পছন্দ করছেন? হ্যা, সবচেয়ে সুন্দর এবং ফলপ্রসূ অপশন আসলে এটিই। শুধু বাড়িতেই নয়, রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে, চায়ের দোকানের আড্ডায় সবখানে এই ধরনের যোগাযোগই আপনাকে অধিকার আদায়ে সাহায্য করবে এবং শান্তি এনে দেবে। অবশ্য এর বাস্তবায়ন কিছুটা কঠিন। অর্থাৎ এই ধরণের যোগাযোগে সফল হবার জন্য নিজের আবেগ-অনুভূতি ও আচরণ সম্পর্কে বেশ সচেতন থাকতে হয়। ধৈর্য্য ও ধারাবাহিকতা রাখতে হয়। তবে আপনি যদি শুরু করেন এবং অল্প কিছু পরিস্থিতি হলেও এভাবে সামলে নিতে পারেন, সেটাও কিন্তু বড় সফলতা। তারপর ধীরে ধীরে চর্চার মাধ্যমে না হয় অভ্যাস করে ফেলবেন!
আপনার কাজটিকে সহজ করে দেবার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী যোগাযোগ সম্পর্কে আরো কিছু কথা।
দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করতে করতে আমি খেয়াল করেছি, চারটি বিষয় মাথায় রাখলে দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে ওঠা অনেকখানি সহজ ও সম্ভব হয়। এই চারটি বিষয়ের প্রত্যেকটি ‘আ’ দিয়ে শুরু, অর্থাৎ দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে চারটি ‘আ’ মাথায় রাখুন-
১। আত্মবিশ্বাসঃ আমি নিজের আবেগ অনুভূতিকে সামলে নিতে পারি। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমি কি অনুভব করি এবং আমি কি চাই তা আমি জানি।
২। আন্তরিকতাঃ নিজের অনুভূতি ও চাহিদার পাশাপাশি অন্যদের অনুভূতি ও চাহিদার ব্যাপারেও আমি আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল।
৩। আত্মপ্রকাশঃ আমি আমার অনুভূতি ও চাহিদার কথা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারি।
৪। আলোচনাঃ কোন সমস্যা সমাধানে আমি অন্যের মতামতকেও গুরুত্ব দিয়ে শুনি এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি।
তাহলে আসুন, ঝগড়া-কাইজ্জা মিটিয়ে বাড়ির সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থাকি, একসাথে করোনা সঙ্কট মোকাবেলা করি!
লেখা ও আঁকাঃ রাউফুন নাহার, শিক্ষক, এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়