কিভাবে নিজেকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করবো?
সাহিত্যশিল্পের চর্চার মাধ্যমে আমরা নিজেকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করতে পারব। প্রাণিত্ব নয় মনুষ্যত্বের সাধনা করতে হতে। দেহের সাথে সাথে আত্মার সমৃদ্ধির জন্যও চেষ্টা করতে হবে। আনন্দের চেয়ে সৌন্দর্যকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। লোভ আর প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
প্রাণাধারণের জন্য সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটনি, তা যতই প্রয়োজনীয় হোক না কেন, মনুষ্যত্ব নয়, প্রাণিত্ব। আর অবসর সময়ে সাহিত্যশিল্পের রস-আস্বাদন, তা যতই অপ্রয়োজনীয় হোক না কেন, তা মনুষ্যত্ব।
মুক্তচিন্তা মানেই নাস্তিকতা নয়। জ্ঞানের সকল শাখা থেকে জ্ঞান আহরণ করে তা যুক্তি-প্রশ্ন দিয়ে বিচার করে তা গ্রহণ করা। সংস্কারমুক্ত থাকা, সমাজের সবকিছুকে বিচার-বিশ্লেষণ করে মেনে চলা। কাউকে অন্ধভাবে অনুকরণ না করা।
আত্মাকে ভালোবাসা। আত্মার গভীর থেকে গভীরে যেয়ে সুখ-দুঃখ-বেদনা উপলদ্ধি করা। বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করা, মনের মধ্যে তীব্র প্রেম রাখা, গভীর অনুভূতি দিয়ে সবকিছুকে অনুভব করা। প্রকৃতির আর বই এই দুইকে পরম বন্ধু করা। লেখালেখি করার অভ্যাস তৈরি করা। সমালোচনা নয় আত্নসমালোচনা করা। সম্মানের চেয়ে আত্ম-সম্মানকে বেশি প্রাধান্য দেয়া।
সবাই যা করে তা না করে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করা। সবাই যে বই পড়ে তা না পড়ে ভিন্ন বই পড়া, ভিন্ন সিনেমা দেখা, ভিন্নভাবে স্বাধীনতার সহিত চিন্তা করতে পারা।
নিজেক ভিন্নভাবে নয় নিজের আসল সত্তার প্রকাশ করা। কারণ আমরা সবাই ভিন্ন। আমাদের পছন্দ ভিন্ন, রুচি ভিন্ন, অবস্থা ভিন্ন, চিন্তা ভিন্ন। তাই নিজের আত্মার বিকাশ করা, নিজের আত্নপ্রকাশ করা। নিজেকে বিকশিত করা।
অনেক কথার অনেক দোষ, ভেবেচিন্তে কথা কোস। তাই কথা বলার আগে চিন্তা করে বলা। কাউকে কথা দিয়ে কথা রাখা। ভালো শ্রোতা হওয়া।
নিজের অজ্ঞতা সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকা, জ্ঞানের গরিমায় অংহকারী হওয়া যাবে না কারণ সকলের জ্ঞান সীমাবদ্ধ, বিনয় গুণটা যেন নিজের মধ্যে থাকে। যখন সুযোগ পাওয়া যায় তখনই মানুষের সেবা করা, অপরের বিপদে এগিয়ে আসা, সবাইকে সাথে করে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
উপভোগ করো চারপাশের প্রকৃতি, রাতের তারা, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, বাতাসের শীতলতা, পাখির কলরব, পাতার ঝড়েপড়া, নতুন ফুল ফোটা, বৃক্ষের বেড়ে ওঠা, নদীর স্রোত, সমুদ্রের গর্জন, পাহাড়ের বিশালতা, আকাশে মেঘের পাহাড়, কৃঞ্চপক্ষ, জোৎস্না রাত। তখন দেখবেন জীবনের বিস্বাদও স্বাদ লাগবে। দুঃখকে উপভোগ করতে পারবেন। সুখী হতে পারবেন জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে।
সবশেষে বলব বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করা। লেখালেখি করা নিয়মিত ২০ মিনিট। প্রকৃতিকে বন্ধু বানাবো। নৈঃশব্দ, নির্জনতায় সময় কাটানো।
অবসরে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বিনোদন বই পড়া আর লেখালেখি করা। কারণ লেখালেখি করলে দুঃখ কমে, আয়ু বাড়ে। আর বই পড়লে চিন্তা শক্তি বিকশিত হয়। ভিন্নভাবে নিজের আত্ম প্রকাশ হয়।
আমার মনে হয় নিজেকে ভিন্নভাবে প্রকাশ আপনি করতে পারবেন। কারণ আমরা মানুষ হিসেবে সবাই ভিন্ন। আমাদের সত্তা ভিন্ন, আত্মা ভিন্ন। শুধু অবসরে ভালো বিনোদন বাছাই করবেন। যেমনঃ বই পড়া, লেখালেখি করা, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা, নৈঃশব্দ, নির্জনতায় সময় কাটানো।
আত্মা বলতে আমি যা বুঝিঃ
আত্মা আমাদের সবার শরীরে থাকে কিন্তু আমরা তার জাগরণ ঘটাতে পারি না বা অস্তিত্ব উপলদ্ধি করতে পারি না। এজন্য আত্মাকে সৃষ্টি করে নিতে হয়। সুখ-দুঃখ-বেদনা তীব্র উপলদ্ধির মাধ্যমে আমাদের অন্তর যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তার ফলে আত্মার জন্ম হয়। তারপর আত্মার পরিশুদ্ধি এবং সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয় খাবাবের। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, ধ্যান বা গভীর অনুভূতি এবং প্রচুর প্রেম এই তিন হচ্ছে আত্মার খাবার।
নিজের আত্মার যত্ন নিবেন। জগতে সৌন্দর্য সৃষ্টি করবেন নিজের কর্মের মাধ্যমে।
ছোটো মুখে বড় কথা। আমার অভিজ্ঞতা অল্প স্বল্প। অবচেতনে যা আসে তাই লিখি। লেখা বিচার-বিশ্লেষণ করে তারপর গ্রহণ করবেন। আদেশপন্থী নয় অনুপ্রেরণাপন্থী হবেন।
আচ্ছা আদেশপন্থী আর অনুপ্রেরণাপন্থী নিয়ে একটু কথা বলি——
আদেশপন্থীঃ
যারা অন্যের কথা বা লেখা বিনা প্রশ্নে বা বিনা বিচারে মেনে নেয় এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনা করে তাদের আদেশপন্থী বলে।
অর্থাৎ আমি আপনাকে আদেশ করলাম যে প্রতিদিন এই এই ……… কাজগুলো করবেন তাহলে জীবনে ভালো কিছু করতে পারবেন। এবং আপনি আমার কথামতো হুবুহু সে কাজগুলো কোনো বিচার না করে করে গেলেন। তাহলে আপনি হচ্ছে আদেশপন্থী লোক।
আদেশপন্থীদের দেহ থাকলেও আত্মা বলে কিছু থাকে না। আদেশপন্থীরা অন্যকে হুবুহু অনুকরণ করতে করতে তাদের অন্তরাত্মাকে মেরে ফেলে। তারা নিজের জন্য বাঁচে না। অন্যের আদেশ নিজের জন্য বিপদজনক হলেও তারা তা বিনা প্রশ্নে বিনা সন্দেহে মেনে নেয়। এতে তাদের ঘটে চূড়ান্ত পরাজয় অথচ তারা নিজেরা তা বুঝতে পারে না।
অনুপ্রেরণাপন্থীঃ
যারা অন্যের কথা বা লেখা বিশ্বাস বা মেনে চলার আগে তা বার বার যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর অন্তর দিয়ে উপলদ্ধি করে যদি নিজের জন্য ভালো মনে হয় তবে তা বিশ্বাস করে বা মেনে চলে তাদের অনুপ্রেরণাপন্থী বলে।
অর্থাৎ আমি আপনাদের বললাম এই এই ………… কাজগুলো করলে আপনি জীবনে ভালো কিছু করতে পারবেন। কিন্তু আপনি আমার কথা বা লেখাগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখলেন যে আমার কথা বা লেখা আপনার জন্য বিপদজনক, তখন আপনি আমার কথা বা লেখা অনুযায়ী কাজ না করে আপনার অন্তরাত্মা যা বলে তার কথা অনুযায়ী কাজ করলেন, তাহলে আপনি একজন অনুপ্রেরণাপন্থী লোক।
অনুপ্রেরণাপন্থীদের দেহ এবং আত্মা দুই-ই পরিশুদ্ধ থাকে। তারা সবকিছুকে বিনা প্রশ্নে, বিনা যুক্তিকে মেনে নিতে রাজি নয়। তারা সংস্কারমুক্ত, আচার মুক্ত, সমাজের নিয়ম-কানুন যুক্তি দিয়ে বিচার করে তারপর তা মেনে চলে। তারা আত্মার কথা শোনে, আত্মার পথে চলে।
…………………………।
আশা করি এখন থেকে নিজেকে বিকশিত করতে পারবেন নিজের মতো করে। এতেই আপনার ভিন্নপ্রকাশ হবে। আত্ম প্রকাশ হবে। গলায় যেন গান থাকে, মনে যেন কবিতা থাকে, হাতে যেন লেখা থাকে আর চোখে যেন বই থাকে।