কোন বালা মুসীবত বা জিনভুতের কবল থেকে বাঁচার জন্য তাবিয ব্যবহার করা বৈধ কি?

কোন বালা মুসীবত বা জিনভুতের কবল থেকে বাঁচার জন্য তাবিয ব্যবহার করা বৈধ কি?

Add Comment
1 Answer(s)

    তাবীয কবচ তিন প্রকারঃ (১) গায়রুল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে লেখা তাবীয, ফিরিশতা, জিন, নবী, অলি প্রভৃতির নাম লিখে তৈরি তাবীয, বিভিন্ন সংখ্যা বা হিজিবিজি লিখে তৈরি তাবীয। (২) কোন ধাতু, মাটি, গাছের ছাল বা শিকড়, পশুর লোম বা পাখির পালক, হাড়, কড়ি, কাপড় বা সুতো ইত্যাদি মাদুলিতে ভরে তৈরি তাবীয। এই দুই শ্রেণির তাবীয ব্যবহার শিরক।

    কারণ ইবনে মাসউদ (রঃ) এর পত্নী জয়নাব (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক বুড়ি আমাদের বাড়ি আসা যাওয়া করত এবং সে বাতবিসর্প – রোগে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমাদের ছিল লম্বা খুরো বিশিষ্ট খাট। (স্বামী) আব্দুল্লাহ বিন মসউদ যখন বাড়িতে প্রবেশ করতেন, তখন গলা সাড়া বা কোন আওয়াজ দিতেন। একদিন তিনি বাড়িতে এলেন। (এবং অভ্যাস মত বাড়ি প্রবেশের সময় গলা সাড়া দিলেন।) বুড়ি তার আওয়াজ শোনামাত্র লুকিয়ে গেল। এরপর তিনি আমার পাশে এসে বসলেন । তিনি আমার দেহ স্পর্শ করলে (গলায় ঝুলানো মন্ত্র পড়া) সুতো তার হাতে পড়ল। তিনি বলে উঠলেন, ‘এটা কি?’ আমি বললাম, ‘সুতা পড়া, বাতবিসর্প রোগের জন্য ওতে মন্ত্র পড়া হয়েছে।’ একথা শুনে তিনি তা টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘ইবনে মসউদের বংশধর তো শিরক থেকে মুক্ত।’ আমি রাসুল (সঃ) কে বলতে শুনেছি যে, “নিশ্চয় মন্ত্র তন্ত্র, তাবীয কবচ এবং যোগ যাদু ব্যবহার করা শিরক।”

    জয়নাব (রঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘কিন্তু একদা আমি বাইরে বের হলাম। হটাৎ করেই আমাকে অমুক লোক দেখে নিল। অতঃপর আমার যে চোখটা ঐ লোকের দিকে ছিল সেই চোখটায় পানি ঝরতে লাগলো। এর পর যখনই আমি ঐ চোখে মন্ত্র পড়াই, তখনই পানি ঝরা বন্ধ হয়ে যায়। আর যখনই না পড়াই, তখনই পানি ঝরতে শুরু করে। (অতএব বুঝা গেল যে, মন্ত্রের প্রভাব আছে।)’

    ইবনে মসউদ  (রঃ) বললেন, “ওটা তো শয়তানের কারসাজি। যখন তুমি ( মন্ত্র পড়িয়ে ) ওর অনুগত্য কর, তখন সে ছেড়ে দেয়। (এবং তোমার চোখে পানি আসে না)। আর যখনই তুমি তার অনুগত্য কর না, তখনই সে নিজ আঙ্গুল দ্বারা তোমার চোখে খোঁচা মারে ( এবং তার ফলে তাতে পানি আসে, যাতে তুমি মন্ত্রকে বিশ্বাস কর এবং শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়)। তবে যদি তুমি সেই কাজ করতে, যা আল্লাহর রাসুল (সঃ) করেছেন, তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম ও মঙ্গল হতো এবং অধিকরূপে আরোগ্য লাভ করতে। আর তা এক যে, চোখে পানি ছিটাতে এবং বলতে,

    “আযহিবিল বা’স, রাব্বানা-স, ইসফি আন্তাস শা- ফী, লা সিফা-আ ইল্লা সিফ-উক, সিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাকামা।”  (ইবনে মাজাহ ৩৫৩১ নং, সিলসিলাহ সহিহাহ ৩৩১ নং) 

    “আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর নিকট (বাইয়াত করার উদ্দেশ্য) ১০ জন লোক উপস্থিত হল। তিনি ন’জনের নিকট থেকে বাইয়াত নিলেন। আর মাত্র একজন লোকের নিকট হতে বাইআত নিলেন না। সকলে বলল, ‘হয়ে আল্লাহর রাসুল! আপনি ন’জনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এর করলেন না কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, “ওর দেহে কবচ রয়েছে তাই।” অতঃপর সে নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেলল। সুতরাং তার নিকট থেকেও বাইয়াত নিলেন এবং বললেন, “যে ব্যক্তি কবচ লটকায়, সে ব্যক্তি শিরক করে।”  (  আহমাদ, হাকেম, সিলসিলাহ সহিহাহ ৪৯২ নং)

    (৩) কুরআনের আয়াত বা হাদিসের দুয়া লিখে বানানো তাবীয। এই শ্রেণীর তাবীয শিরক না হলেও ব্যবহার বৈধ নয়। কারণ (ক) মহানবী (সঃ) ব্যাপকার্থ বোধক ভাষায় বলেছেন, ‘তাবীয শিরক।’ (খ) এর বৈধতা ও ব্যবহার প্রচলিত হলে শিরকী তাবীযের চোরা পথ খোলা যাবে।  (গ) এই তাবীযের মাধ্যমে কুরআন ও আল্লাহর নামের অসম্মান হবে। যেহেতু ব্যবহারকারী তা দেহে রেখেই  প্রস্রাব পায়খানা ও সঙ্গম করবে এবং মহিলারা মাসিক অবস্থায় তা বেঁধেই রাখবে। (লাজনাহ দায়েমাহ)

    Professor Answered on March 28, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.