ছেলেরা মেয়েদের প্রেম নিবেদন করে, কিন্তু মেয়েরা ছেলেদের প্রেম নিবেদন করে না কেন?
ছেলেরা মেয়েদের প্রেম নিবেদন করে, কিন্তু মেয়েরা ছেলেদের প্রেম নিবেদন করে না কেন?
একেবারেই যে করে না তা কিন্তু না। তবে তুলনামূলকভাবে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কম প্রেম নিবেদন করে ব্যাপারটা মানতেই হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন করে। চলেন জন্মের সময় ফিরে যাই। ঠিক জন্মের পর সর্বপ্রথম ডাক্তার সাহেব এসে কি বলেন? কংগ্রেচুলেশান্স আপনার “মেয়ে” বা “ছেলে” হয়ছে। কিভাবে বলে? নারী পুরুষের সেক্সুয়াল ওর্গান আলাদা হয় সেটা দেখে বলে তাই তো? আচ্ছা তারপর কি হয়? ছেলে হলে তারজন্য নীল তোয়ালে কিংবা অন্য কোনো বোল্ড কালার, মেয়ে হলে পিংক, নাকি? একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে ছেলেদের খেলনা হিসেবে কি কি দেয়া হয় মনে করে দেখুন। পিস্তল, গাড়ি, প্লেইন, ব্যাট বল এগুলো ছেলে বাচ্চার খেলনা, আর মেয়ে বাচ্চার খেলনা কি বারবি ডল তাও সেখানে পিংকের আধিক্য কিংবা লাল। আপনি একটু খেয়াল করে দেখবেন একটা মেয়ে বাচ্চা কিভাবে কথা বলবে আর একটা ছেলে বাচ্চা কিভাবে কথা বলবে সেই ব্যাপারটাও কিন্তু শিখিনো হয়। আস্তে আস্তে ছেলে বাচ্চাটা ছেলে হয়ে বেড়ে ওঠে, মেয়ে বাচ্চাটা মেয়ে হয়ে বড় হয়।
এবার একটু খেয়াল করে দেখুন কবি সাহিত্যিকরা কিভাবে মেয়েদের বর্ণনা করে আর কিভাবে ছেলেদের বর্ণনা করে।
খেয়াল করে দেখুন আমাদের নাটক সিনেমা কিভাবে মেয়েদের দেখায়, কিভাবে ছেলেদের দেখায়।
আমাদের সমাজের একটা এক্সপেক্টেড লাইন আছে।
পুরুষ মানেইঃ
- ম্যানলি হবে
- ডমিনেটিং হবে
- পিংক অপছন্দ করবে
- বাচ্চা বয়েসে পিস্তল দিয়ে খেলবে
- প্রপোজ করবে
- কান্না করতে পারবে না
- গালি দিবে
- অশালীন কথা বলবে
- অনেক মেয়ে বন্ধু থাকলে সে প্লেবয়, চ্যাম্প
মেয়ে মানেইঃ
- লজ্জাবতি লাজুক লতা
- কমনীয়, নরম
- পিংকের প্রতি নেশা থাকবে
- পুতুল নিয়ে খেলবে
- সংসার সংসার খেলবে
- গালি দিতে পারবে না
- জোড়ে হাসতে, কথা বলতে পারবে না
- অনেক ছেলে বন্ধু থাকতে পারবে না তাহলে সে স্লাট
সেই যে বডি পার্টস দেখে ডাক্তার ছেলে আর মেয়ে ঘোষণা করে দিলো, ছেলে আর মেয়ে কি শুধু বডি পার্টস দিয়ে আলাদা হয়? জুডিথ পামেলা বাটলার নামে একজন আমেরিকান ফিলোসফার এবং জেন্ডার থিউরিস্ট আছেন তিনি পারফর্মিটিভিটি নামক একটা তত্ত্ব দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন ছেলে এবং মেয়ে বডি পার্টস দেখে সৃষ্টি হয় না বরং এটা সোশ্যালি কন্সট্রাকটেড ব্যাপার।আপনি যাকে ছেলে হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছেন এবং ছেলে হয়ে বড় হতে শিখাচ্ছেন হতে পারে না যে সে ভিতরে অন্যকেউ কেবল তার জননাঙ্গ পুরুষের। একই ব্যাপার একটা মেয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে কিনা? বাটলার বলছেন জেন্ডার ইজ নট সামথিং ওয়ান ইজ ইট ইজ সামথিং দ্যাট ওয়ান ডাজ। জেন্ডার একটা পারফর্মেন্স। এটা নাউন না এটা একটা ভার্ব। আমার কিছু কথা কিংবা লেখা পড়ে কি বুঝা যায় না আমি ছেলে? একই ভাবে একটা মেয়ের লেখার মধ্যে কোথাও না কোথাও ফুটে ওঠে না সে মেয়ে? উঠবেই কারণ আমরা এভাবেই ট্রেইন্ড একদম জন্মের পর থেকে।
এবার আসা যাক প্রেম নিবেদনের ব্যাপারে। একটা মেয়ে প্রেম নিবেদন করলে আপনি একজন ছেলে হয়ে কি ভাববেন? জানি এখন স্বীকার করবেন না, কিন্তু ভাল ভাববেন না (আমি সবার কথা বলছি না)। সেরকম একটা মেয়ে প্রপোজ করা মানে জন্মের পর থেকে তাকে মেয়ে হয়ে ওঠার যে ট্রেইনিং পরিবার আর সমাজ দিয়েছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়া। সে নিজেও শিখেছে ভদ্র মেয়েরা প্রপোজ করে না। এত বছরের ট্রেইনিং কি সহজে ভাঙা যায়?
আমরা শিখে এসেছি ছেলেরা প্রপোজ করবে কারণ দে আর ম্যান। মেয়েরা প্রপোজ পেয়ে লজ্জায় লাল হবে কারণ তারা লজ্জাবতী।
সময় এসেছে এগুলোকে বুঝে বুড়ো আঙ্গুল দেখাবার। সময় এসেছে ভাববার আমি কে আমি কি? আমি কি আমিই নাকি সমাজের সৃষ্ট একটা মাংসপিন্ড। নেক্সট টাইম শার্টটা কিংবা জামাটা গায়ে দেওয়ার সময় ভেবে দেখবেন রঙটা আপনার পছন্দেরতো নাকি পুরুষালি কিংবা মেয়েলি হওয়ার জন্য সমাজ শিখিয়ে দিয়েছে।