জীবনে দুঃখ আসে কেন? জীবনে এর তাৎপর্য কী?
জীবনে দুঃখ আসে কেন? জীবনে এর তাৎপর্য কী?
আলহামদুলিল্লাহ্। ইন্টারনেটের যুগে লেখালেখি করার অনেক ধরনের সুযোগ হয়েছে। তবু, আজকের প্রজন্ম লেখালেখি করতে চায় না। তারা মুখস্ত করে অভ্যাস করেছে। আমরা যখন হাই-স্কুলের ছাত্র ছিলাম তখন কবিতা লেখার প্রচলন ছিলো। নিজেই রচনা লিখতাম।
এক ধরনের রচনা আমার বেশ ভালো লাগতো; সেটা হলো – আত্মকাহিনী। কারন, তেমন রচনায় ইচ্ছামতন কল্পনার সুযোগ ছিলো। একটি কলমের আত্মকাহিনী নামক রচনায়, কলম নিজেই নিজের কাহিনী বর্ণনা করছে। এমন – আমাকে অমুক দোকান থেকে কিনে আনলো ; টেবিলের অমুক ড্রয়ারে রাখলো। আমাকে দিয়ে অমুক পরীক্ষায় লিখলো, ইত্যাদি। একটি ছাতার আত্মকাহিনী রচনাতে, ছাতা এভাবে বর্ননা করছে – আমাকে অমুক স্থানে ভুলে রেখে এসেছে ; তারপর অমুক নিয়ে গেছে। পরে আবার অমুকের কাছে দিয়েছে, ইত্যাদি।
উপরে ফুটবলের ছবি দিয়েছি কেন জানেন? আজকে আপনাকে দিয়ে ফুটবলের আত্মকাহিনী লেখাবো।
- ফুটবল নিজের ঘটনা এভাবে বলছে –
আমাকে মাঠের মাঝখানে রাখা হলো ; একজন দৌড়ে এসে জোরে লাথি দিলো। আমি ছিটকে অনেক দূরে পৌছে গেলাম। সেখানে আরো একজন আমাকে লাথি দিতে দিতে গড়িয়ে নিয়ে গেল। আরেকজন এসে তার পায়ের কাছ থেকে আমাকে কেড়ে নিয়ে, নিজে গড়িয়ে নিয়ে গেলো। এভাবে গড়িয়ে গড়িয়ে একজনের পায়ের থেকে আরেকজনের পায়ে যাচ্ছি। আমাকে নিয়ে কয়েকজন কাড়াকাড়ি করছে। মাঝে মাঝে আমাকে লাথি মেরে কোন এক জালের দিকে ছুড়ে দিচ্ছে।
পাঠক লক্ষ্য করুন – ফুটবল কিন্তু জানে না, কয়েকজন মানুষ তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করে কেন। ফুটবল জানে না, তারা কাড়াকাড়ি করে, তাকে ওই জালের দিকে ছুড়ে মারে কেন। ফুটবল এটাও জানে না, জালে ছুড়ে মারার পরে, লোকজন এতো আওয়াজ করে কেন।
আসলে ফুটবল খেলাটা হলো ফুটবলের স্থান পরিবর্তন ; অবস্থান বদল। ফুটবল একজনের পায়ে লাগলে – কিক ; একজনের মাথায় লাগলে – হেড ; কারো হাতে লাগলে – হ্যান্ডবল। ফুটবল জালে লাগলে – গোল। সবই ফুটবলের অবস্থানের ভিন্ন নাম।
কি বুঝলেন?
ফুটবল খেলার প্রতিটি অংশই বলের অবস্থানের বিভিন্ন নাম। জালের কাছে বলের অবস্থানকে “গোল” নাম দিয়ে, আপনি দুঃখ বা আনন্দ পান। বলটা যখন নিজের দলের লোকের পায়ের কাছে অবস্থান করে, তখন আনন্দ পান। বলটা যখন বিপক্ষ দলের কারো পায়ে থাকে, তখন দুঃখী হন। আপনার আনন্দ বা দুঃখের জন্য বলের কোন ভুমিকা নেই। মুল ব্যাপারটা হলো – আপনি বলের কোন অবস্থানকে পছন্দ করেন।
মানুষের জিবনটাও ঠিক তেমন। পরিস্থিতি একবার আপনার পক্ষে থাকে আরেকবার আপনার বিপক্ষে থাকে। বিষয়টা আপনার দলের পায়ে বল এবং আপনার বিপক্ষ দলের পায়ে বল থাকার মতন। বিপক্ষ দলের পায়ে বল থাকলে আপনি যেমন দুঃখী হন ; ঠিক তেমনই জীবনের পরিস্থিতি আপনার বিপক্ষে থাকলে দুঃখী হন।
এভাবেই একের পর এক সুখ ও দুঃখ আপনার জীবনে আসে। বল কতক্ষণ আপনার দলের পায়ে আছে, সেটা দেখে হার জিত হয় না। বল কতবার জালে পৌছেছে, সেটা দেখে হার জিত হয়।
বল কতক্ষণ আপনার পায়ে আছে, সেটা না দেখে দুঃখী না হয়ে, পুরো মাঠে দৌড়ে, বলকে জালে পাঠানোর চেষ্টা করুন। জীবনের পরিস্থিতি কতক্ষণ আপনার পক্ষে আছে, সেটা দেখে দুঃখী না হয়ে, জীবনে সফল হবার চেষ্টা করুন।