জীবনে শৃঙ্খলার অভাব, অনিয়ম ঠিক করব কীভাবে?
জীবনে শৃঙ্খলার অভাব, অনিয়ম ঠিক করব কীভাবে?
আজকে আপনাকে সম্পূর্ণ নতুন একটা ধারণার সাথে পরিচিত করিয়ে দিবো। ধারণাটির নাম মিনিমালিজম। এখন বলবেন মিনিমালিজম মানে কী? আসুন বলতেছি
বেচে থাকার জন্য আপনার আসলে কী কী প্রয়োজন? আপনার রুমের আশেপাশে একটু দেখুন। যা যা আছে সব কি আপনার বেচে থাকার জন্য আদৌ দরকারি? খুজে পাচ্ছেন না? আমি হেল্প করি
চিন্তা করুন চোখ বন্ধ করে। আপনি একটা রুমে আছেন। এখানে সকাল থেকে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত আপনি কি কি করবেন?এসব কাজের জন্য আপনার কী কী জিনিস দরকার? একটু কষ্ট করে চিন্তা করুন। দেখবেন অধিকাংশ জিনিস যা আপনার রুমে আছে তা আপনার কোন কাজে লাগে না। অপ্রয়োজনীয় জিনিস। আর দেখুন এই অপ্রোয়জনীয় জিনিসেই আপনার রুম অগোছালো হয়ে আছে।
তো এখানে মিনিমালিজমের কাজ কী? মিনিমালিজম ধারণা এখানে কীভাবে বাস্তবায়ন করবো? এখানে মিনিমালিজম ধারণা বাস্তবায়ন করতে হলে আপনাকে বেশিকিছু করা লাগবে না, জাস্ট যেসব জিনিস অপ্রোয়জনীয় সেসব জিনিস সরিয়ে ফেলুন।কেবল ওইসকল জিনিস রাখবেন যেগুলো না হলে আপনার একেবারেই চলবে না। এটুকু করতে পারলেই আপনার মিনিমালিজম বাস্তবায়িত করা হয়ে যাবে।
এখনো আপনার প্রশ্ন থাকতে পারে মিনিমালিজম আসলে কি ?
মিনিমালিজম হল জীবন থেকে অতিরিক্ত বা বাহুল্য সব কিছু কমিয়ে ফেলা। এবং ঠিক যেইটা লাগবে, সেইটা নিয়ে থাকা। খুব কম জিনিস নিয়ে জীবনযাপন করা। এইটা শুধু কাপড় বা ঘরের আসবাবপত্রের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমাদের জীবনে সময়টাকে যে সব ক্ষেত্রেই আমরা ব্যবহার করি সব কিছুর জন্যই প্রযোজ্য যেমন বন্ধু বান্ধব ,খাওয়া -দাওয়া,কাজ-কর্ম ,চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি। মিনিমাল লিভিং এর প্রধান ধারণাই হল আমার জীবনের ইচ্ছা গুলিকে বা শখ গুলিকে কমিয়ে এনে আমাদের মনকে নির্দিষ্ট এক দুইটা কাজে ফোকাস করতে সাহায্য করা। আর এই এক দুইটা কাজের ধরণ হল জীবনের আত্মিক ,মানুষিক বা শারীরিক উন্নয়ণের প্রয়াজনে জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
আসলে খুব সহজ একটা কন্সেপ্ট। দেখতে যতটাই নর্মাল ততটাই শক্তিশালী। প্রায় সকল মানুষ যারা মিনিমালিজম লাইফ বেছে নিয়েছে তাদের সবার মতে তারা আগের লাইফ থেকে এই মিনিমালিজম লাইফে বেশি হ্যাপি আছে আর তারা এই লাইফেই থাকতে চায়।
এখানে বলা হয়নাই মিনিমালিজম লাইফ আবার কী? আমি জানি আপনারা বুঝে গেছেন এটা কী, আমার আর বিস্তারিত বলা লাগবে না।
মিনিমালিজম লাইফঃ
Minimalism Life লিখে যদি আপনি গুগলে সার্চ করেন তাহলে দেখা যায় খুব সুন্দর গুছানো পরিপাটি ঘর এর ছবি।
একটা খাট একটা টেবিল , পাশে একটা ফুলের টব।
রান্না ঘরে মাত্র কয়েকটা ক্রোকারিজ।
কাপড়ের আলমারিতে হাতে গোনা কয়েকটা কাপড়।
সব কিছু ঝকঝকে পরিপাটি।
আসলে এই মিনিমালিজম জীবন মানে আরো অনেক কিছু জীবন থেকে পরিপাটি করা।
যেমন আমার ফেসবুকে বন্ধুদের সংখ্যা ৩ হাজার প্লাস সঠিক মানুষ গুলোকে চিনে নেওয়া বাকী গুলোকে ডিলিট করে দেওয়া।
ছেড়ে চলে যাওয়া খুব কাছের বন্ধুর প্রোফাইল লক করে রাখা।
প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় দিয়ে এখানে সেখানে লাইক কমেন্ট করা বন্ধ করতে হবে।
আমি যা পছন্দ করি বা আমার জীবন উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন আছে এমন কিছু সাইট প্রতিদিন দেখা।
এতে করে অস্তিরতা কমবে।
হাতের এন্ড্রয়েড ফোন অপ্রোজনীও সব এপস দিয়ে ভর্তি।
নিজেকে প্রশ্ন করা ,আসলেই এগুলো আমার কোন কাজে লাগে।
না শুধুই ইন্সটল করেছি। যদি উপকারেই না আসে তাহলে আনস্টল করে দেওয়া।
এইভাবে আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই এই মিনিমালিজম জীবন যাপন করাই হল Minimalist Living .
মিনিমালিজম জীবনযাপনের উপকারিতা :
এইটা একটা চিন্তা পদ্ধতি, যেইটা হতে অনেক কিছুই বাদ দিতে হবে ,হয়ত অনেক কষ্ট হবে প্রথম কিন্তু হিসাবের খাতা যখন কমে আসবে জীবনে ততই স্বাধীন অনুভব করা যাবে ।
জীবনের স্বাদ গ্রহণ করা , জীবনকে ইতিবাচক ভাবে উপভোগ করার মজা পাওয়া যাবে।
এই দুনিয়ায় ভাল থাকা যাবে সাথে পরকালের হিসাবও কম থাকবে।
বর্তমানের জন্য মিনিমালিজম জীবন বেঁচে নেওয়া উত্তম সময়।
কারণ এই একটা গ্যাজেট ফোন আমাদের অনেকটা সময় কেড়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এর-ওর জীবন দেখে নিজের সাথে তুলনা করে আমরা অস্থির হয়ে পড়ছি।
শুধু তাই নয় হতাশার মত ভয়াবহ রোগ আমাদের ভিতরে দানা বাঁধছে।
আমরা এখন এক্সেস বা অতিরিক্ত কিছুতে অভ্যাস্ত হয়ে গেছি যে কাউকে সাধারণভাবে চলতে দেখলে ব্যাক্তিগত ভাবে এমন কি সামাজিক ভাবেও অপমান করি।
এখন বিয়েতে অতিরিক্ত খরচ , অতিরিক্ত আড়ম্বর করা একদম গরিব থেকে বড়লোক পর্যন্ত কমন দৃশ্য ।
যখন একটা কাজ সংখ্যালঘু মানুষ করতে থাকে তখন বিষয়টা অনেক স্বাভাবিক হয়ে যায়।
একবার ভেবে দেখেন ,যে টাকা এতে খরচ হয় তা যদি বিয়ের পরবর্তীতে খরচ করার জন্য নব দম্পত্তিকে দেওয়া যায় , এইটা কি ভাল নয়?
লোকদেখানো কিছু কাজ যা অনেক সময় আমরা সামর্থ্য না থাকলেও করি , যোগ্যতা না থাকলেও আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগুতে চাই।
এই বিষয়গুলা আমাদের এক সময় নিজের মনের ভিতর বিরক্তি ,রাগ,ক্ষোভ ,হতাশার সৃষ্টি করে।
মিনিমালিজম অর্থাৎ নূন্যতম জিনিস নিয়ে জীবন যাপন করার অনেক ভাল দিক আছে।
সর্বোপরি মিনিমালিজম লাইফ ফলো করুন দেখবেন জীবনে শৃঙ্খলা এমনিতেই চলে আসবে।