দুনিয়াতে বেঁচে থেকে কেমন লাগছে আপনার ?
দুনিয়াতে বেঁচে থেকে কেমন লাগছে আপনার ?
দুনিয়া ব্যতীত অন্য কোনোস্থানে বেঁচে থাকার সুযোগ আপাতত নেই। থাকলে বিলক্ষণ চেষ্টাচরিত্র করে দেখতাম!! কিন্তু যতক্ষণ তা করে দেখা যাচ্ছে না, দুনিয়াতে বেঁচে থাকাই সহ্য করে নিতে হচ্ছে।
বেঁচে থাকা ছাড়া আর তো গত্যন্তর নেই!! না বেঁচে, থাকা সম্ভব হয় না, মহামানবদের জন্য স্বতন্ত্র হতে পারে কিন্তু আমাদের ন্যায় অ-মহা-নিতান্ত-মানবদের জীবৎকাল শেষ হলেই সবকিছু শেষ। সিরিয়াসলি, কখনও কোথাও কোনও একজন মানুষ – আপনার আত্মীয়বন্ধু অথবা হয়ত শত্রুই – কোনও একজন মানুষ – শেষবারের মত আপনাকে স্মরণ করবেন – তারপরে আপনি ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবেন।
যেমন হারিয়ে গিয়েছেন চাকা বা আগুনের আবিষ্কারক , অথবা সেরকম আরও শত শত নাম-না-জানা মানুষ।
তার আগে অবধিই বেঁচে থাকা।
রইল বাকি ‘কেমন লাগছে’ – তা ভালোয় খারাপে মিশিয়ে মন্দ লাগে না।
মন্দের কথা তুললে বেঁচে থাকা মানে হৃৎপিন্ড-যকৃত ইত্যাদির সুস্থতা নিয়ে ভাবনা; রক্তচাপ-শর্করা বা শেয়ার-বন্ডের ওঠানামা; কর্মস্থলে কারণে-অকারণে চাপ; হঠাৎ করে আরও একজন পরিচিতের মরণসংবাদ; রোগশোক – বন্ধুবিয়োগযন্ত্রণা।
কিন্তু শুধু কি তা-ই? কিছু শারীরিক অসুস্থতা, আত্মীয়বন্ধুদের নিয়ে কদাচিৎ উদ্বেগ, সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য উৎকণ্ঠা ইত্যাদি অবশ্যই রয়েছে, তবে কেবল সে সব দিয়েই জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে গোমড়াথেরিয়াম হয়ে বসে থাকব, এবম্বিধ বাতুল আমি নই।
বহুদিন আগেই এক দাড়িওয়ালা বুড়ো, সন্তানবিয়োগের যন্ত্রণা সহ্য করে বলেছিলেন – চারিদিকে দেখ চাহি হৃদয় প্রসারী – ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি –
তা ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি, হৃদয় প্রসারী চেয়ে দেখলেই চোখে পড়বে বেঁচে থাকা মানে রোগশোক দুঃখবেদনা ছাড়াও আরও অনেক কিছু। সকালের কফির ঘ্রাণ থেকে শুরু করে টক-ঝাল-মিষ্টি নানা স্বাদের আহার, মহম্মদ রফির সুরেলা আওয়াজ, শক্তি-সুনীলের গদ্য-পদ্য। বেঁচে থাকা মানে আর্সেনালের জিততে জিততে ফের হেরে যাওয়া, বুমরাহের সুইঙ্গিং ইয়র্কার – ম্যাগনাস কার্লসেনের অভাবনীয় দাবার চাল। বেঁচে থাকা মানে স্কচ হুইস্কির ঘ্রাণ, ফরাসী কনিয়াকের মিঠেকড়া স্বাদ বা ইতালিয়ান রেড ওয়াইন ছাপিয়ে চিরকালের ওল্ডমঙ্ক!!