ভালো থাকার জন্য বিজি থাকা প্রয়োজন,আপনি কি মনে করেন?

    ভালো থাকার জন্য বিজি থাকা প্রয়োজন,আপনি কি মনে করেন?

    Train Asked on March 12, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      সহমত নই । একটু ভাবলেই বোঝা যায় এটা একটা চিন্তাবিরোধী নীতি, কারণ বিজ়ি বা ব্যস্ত থাকা বলতে মানুষ মূলত বোঝে নিজেকে অন্যমনস্ক রাখা । এর নেপথ্যে “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা”র ধারণা একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে (এই মুহূর্তে কোনো রেফারেন্স নেই, তাই জোরের সাথে দাবী করতে পারছি না) আবার দুঃখ ও মনোকষ্ট ভুলতেও মানুষ নিজেকে ব্যস্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে (এই ক্ষেত্রে আমার দাবির ভিত্তি ব্যক্তিগত ও অন্যান্য পরিচিতদের অভিজ্ঞতা) । দুটোর কোনোটাই “ভালো থাকা”র সমার্থক বলে আমার মনে হয়না ।

      মানুষকে কম ভাবতে অনুপ্রেরণা দিলে তাঁর মাথায় ক্ষতিকারক চিন্তা-ভাবনা আসার সম্ভাবনা কমানো যেতে পারে হয়তো, কিন্তু এখানে সমস্যা দু’রকমের— একদিকে মানুষেকে চিন্তার অবসর কমিয়ে দিতে বলে আমরা তাকে আত্মদর্শনে সহায়তা করছি না । আত্মদর্শনের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে জানতে পারে, বুঝতে শেখে । আত্মদর্শনের জন্য চিন্তার ফুরসৎ প্রয়োজন । কিন্তু তার পরিবর্তে কেউ নিজেকে সর্বক্ষণ ব্যস্ত রাখলে সেই ফুরসৎ তাঁর হবে না । আর আত্মদর্শনের সুযোগ না হলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তিলাভের উপায় হিসেবে অজ্ঞতা দূর করার যে বিধান ভারতীয় দর্শনে আছে তাকে কার্যকর করা যাবে না । দুঃখ-কষ্ট থেকেই মুক্ত না হতে পারলে তা কী ধরণের “ভালো থাকা” হবে?

      অন্যদিকে আরেকটা সমস্যা হল নিজেকে ব্যস্ত রেখেও কিছু ক্ষেত্রে চিন্তা ঠেকিয়ে রাখা যায় না । যারা কোনো-না-কোনো মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন, তাঁরা নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন যন্ত্রণাবিদ্ধ অবস্থায় নেতিবাচক চিন্তা মনে আসা আটকানো প্রায়-অসম্ভব হয়ে ওঠে । ফলে নিজেকে অন্যমনস্ক রেখে মূলত সেই চিন্তাগুলো থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্যই মানুষ তখন নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করে । আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে এটা পদক্ষেপ হিসেবে খুব স্বাস্থ্যকর নয় । বরং এসব ক্ষেত্রে নিজের মনোকষ্টের সঙ্গে সরাসরি যুঝলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব । আর তার জন্য প্রয়োজন অবসর ও নিঃসঙ্গতা । ব্যস্ততা এক্ষেত্রেও মানুষকে ভালো থাকতে সহায়ক হচ্ছে না ।

      এবারে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে চিন্তা করার ফুরসৎ দিলেই মানুষ আত্মদর্শনে মগ্ন হবে? দুঃখ ভুলতে মদ্যপান কিংবা অন্য নেশাদ্রব্য সেবন করে সময় নষ্ট করবে না? তেমন নিশ্চয়তা শুধুমাত্র চিন্তার অবসর দিতে পারে না অবশ্যই; অবসরের সাথে-সাথে মানুষের আত্মদর্শনে উৎসাহী হওয়া দরকার, কষ্টের উপলব্ধিকে স্বীকৃতি দেওয়ার সাহস থাকা দরকার । কিন্তু সেই কাজে মানুষকে সহায়তা করাই কি ধর্ম ও দর্শনের কাজ নয়? সেক্ষেত্রে ধর্মকথা ও দর্শনকে মানবজীবনে কার্যকরী হতে দেওয়ার সুযোগটুকু করে দেওয়াই চিন্তার অবসরের উদ্দেশ্য বলা যেতে পারে । এর বেশি আর কোনো দায় তার নেই । কিন্তু মানুষকে চিন্তার জন্য সময় না দিতে উৎসাহিত করলে তাঁর সাথে একটা শ্রমজীবী পশুর খুব বেশি পার্থক্য হয়তো অবশিষ্ট থাকবে না ।

      Professor Answered on March 12, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.