যে কোন কিছুর ভয় থেকে মুক্তির পাওয়ার উপায় কী?
যে কোন কিছুর ভয় থেকে মুক্তির পাওয়ার উপায় কী?
কোরা আমাকে কনসাল্ট্যান্ট বানিয়ে ছাড়বে দেখছি। 😁
কোন এক ধরণের ভয় প্রতিটা মানুষেরই থাকে। কেউ ভুত ভয় পায়, কেউ লিফটে চড়তে ভয় পায় ..তো কেউ কুকুর বেড়ালকে ভয় পায়। অন্ধকারকে ভয়..ব্রেকআপে ভয়..উঁচুতলায় উঠলে ভয়..এস্কেলেটরকে ভয়..স্পীডকে ভয়.. পরীক্ষার ভয় ..টিকটিকিকে ভয় ..রক্ত দেখলে ভয় আর সবচেয়ে বড় হলো বৌকে ভয়।
অনেকের আছে সবকিছুতে শঙ্কা। মনগড়া বিপদের শঙ্কা..মরে যাওয়ার শঙ্কা..রাস্তায় নামলে শঙ্কা। আমার চেনাজানা একজনের ভয় হলো ট্রাকেকে। বিরাট বিরাট ট্রাক দেখলে তার প্রায় অজ্ঞানের অবস্থা হয়ে যায়। আমার মাসীর ছিল বাইরে কোথাও বেরোতে হলে ভয়। ওনার মতে বাইরে বেরোলেই ওনার পটি পেয়ে যাবে। আমার হলো হাসপাতাল শঙ্কা। হাসপাতালে গেলেই আমার বমি পায়, প্রেসার প্রচন্ড বেড়ে যায়, বুক ধড়ফড় করে, রোগীকে দেখতে গিয়ে প্রায় রোগী হয়ে যাই আরকি। ধুঁকতে ধুঁকতে বাড়ী ফিরি।
এখন এই ভয়গুলো কাটানো কিভাবে ? এসব ফালতু ভয় নিয়ে বসে থাকা তো কাজের কাজ নয়। তাহলে উপায় ? উপায় অনেক আছে। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। আমার বেলায় যেমন হাসপাতালেই একখানা চাকরি নিয়ে ফেললে ভয়টা কেটে যাবে। রোজ হাসপাতালে যাবো। দুদিন চারদিন বমি করবো..বুক ফরফর করবে..কাহিল হবো। কিন্তু ক’দিন আর আমার নমুনা লোকে সহ্য করবে ? একদিন ঠিকই আমি গটগট করে হাসপাতালে ঢুকবো আবার কাজ শেষে গটরগটর করে বেরিয়ে আসবো।
তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো ? ভয়টাকে জয় করতে হলে ভয়ের সামনে বারেবারে দাঁড়াতে হবে।সাধারণভাবে বাঘ- ভাল্লুককে সবাই ভয় পায়। এই ভয় আর সেই ভয় কিন্তু আলাদা। ভয়কে জয় করতে বারেবারে বাঘ ভাল্লুকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ার তাল করলে কিন্তু বিপদে পড়বেন আগেই বলে রাখলাম।
যা আপনি ভয় পান সেটা পৃথিবীর অনেক অনেক মানুষ হয়তো ভয় পায় না। তাহলে ভয়টাকে চ্যালেঞ্জ করুন না ? ধরে নিন..জলে ভয়। জলকে ভয় পান বলে আপনি সাঁতার শিখতে পারলেন না। আপনার মনে হলো জলে নামলেই আপনার দমবন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি ভাবেন একটা শিশুও সাঁতার কাটতে পারে তাহলে জল ব্যাপারটা নিশ্চয়ই তেমন একটা ভয়ঙ্কর নয় ? এরপর হয়তো আপনার মনে একটু সাহস আসবে। আপনি পুকুরে বা সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসলেন। পরে একদিন কোমরজলে দাঁড়ালেন। কিছুদিন পর গলা জলে। আপনি যখন দেখবেন আপনি দমবন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছেন না তখন হয়তো আপনার আত্মবিশ্বাস আর সাহস আরেকটু বাড়বে। আর একদিন আপনি সাঁতার শিখে যাবেন।
ভয় কাটানোটা ধাপে ধাপে করতে হয়। প্রথমেই ঝাঁপিয়ে পড়লে মুশকিল হবে। স্টেপ বাই স্টেপ এগোন। লিফটে চড়ার ভয় ? লিফট যদি বন্ধ হয়ে যায়, যদি ভেঙে পড়ে এই ভয়ে হয়তো আপনি সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠেন। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে নিজে বোঝান যে লিফট বন্ধ হয়ে গেলে আমি অ্যালার্ম বাজাতে পারি..মোবাইলে ফোন করে কাউকে জানাতে পারি , লিফটম্যানের অপেক্ষা করতে পারি। আপনার হাতে তিনটে অপশন আছে। বুকে বল এনে লিফটে উঠে পড়ুন। প্রথমদিন লিফটে করে একতলা থেকে দোতালায় গিয়ে নেমে পড়ুন। পরেরদিনও দোতালাতেই নামুন। একদিন সোজা চারতলাতে চলে যান। এভাবে কিছুদিন অভ্যেস করলেই দেখবেন আপনার ভয় দুর হয়ে যাচ্ছে। লিফটে দুর্ভোগ রোজ কারো হয় না.. ঠিক সেইভাবে প্লেন দুর্ঘটনাও কস্মিনকালে হয় ( যাদের ফ্লাইটে ভয় ) সেটা মনকে বোঝান।
এই ভয়গুলোকে আসলে আমরা তেমন পাত্তা দিই না। ভয় নিয়েই জীবন যখন চলে যাচ্ছে তাহলে যাক না। লিফটে না উঠলেই বা কি আর সাঁতার না জানলেই বা কার কি এসে যায় ? কিন্তু আমাদের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য তৈরি থাকা উচিত…নিজের জন্য এবং অন্যদের সাহায্য করার জন্য। কখন কি ঘটে গেল আর আপনি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পাশে পড়ে থাকলেন সেটা কোন কথা হলো ? কোন কথা হলো না।
তাহলে চলুন আজ থেকেই ভয় তাড়ানোতে আমরা তৎপর হই। আমিও যাই, দেখি কোন হাসপাতালে একটা চাকরি জোগাড় করতে পারি কি না ? 😁