স্বামী প্রচন্ড কামুক স্বভাবের, শিক্ষিত হলেও আচরণ গ্রাম্য..
আমার সমস্যা বরাবরই হৃদয় ঘটিত। আমি স্বচ্ছল পরিবারের তবে সীমিত আয়ের একটি পরিবারের মেয়ে। নিউক্লিয়ার পরিবার,দাদা দাদী, বাবা মা ছোট ভাই। বাবা মা দু জনই কাজ করেন, সাথে রাজনীতিও। বাবা মা ব্যস্ত থাকতেন। বেশির ভাগ সময় দাদা দাদীর কাছে থাকতাম। আমার ছোট ভাইটা হওয়ার পরে মা কে খুব একটা কাছে পেতাম না। বাবা দাদা আমাকে অনেক আদর করত। দাদী বেশি আদর করত আমার ভাইকে। কেমন যেন একা একাই চলতে ফিরতে পারতাম। একলা কিছু করতে ভয় পেতাম না। তবে ভূতের ভয় পেতাম মাঝে মাঝে। আমি বিড়াল ভয় পাই। অথচ তেলাপোকা হাতে নিয়ে ঘুরতে পারি।
শৈশবে বেশ কয়েক বার যৌন নির্যাতনের শিকার হই। পরিচিত মানুষের দ্বারা। যাই হোক, ছোট বেলায় সবচেয়ে ভাল লাগত দাদার সাথে থাকতে। যখন ফাইভে পড়ি দাদা মারা গেল। সিক্সে উঠে বেঢপ মোটা হয়ে গেলাম। এখনো মোটা। মোটা হওয়ার জন্য যেখানেই গিয়েছি খোটা শুনেছি। হাসির পাত্রী হয়েছি। কোন ছেলে আমাকে পছন্দ করত না। আমি বই পড়তে ভালবাসি, নাচ গান, বিতর্ক, অভিনয়, টেবিল টেনিস সবই পছন্দ আমার। কিন্তু কোন ছেলের চোখে আমি সুন্দরী না। অনেকেই পছন্দ করত, কিন্তু বলত শুকাতে। একবার কী হল জানেন? একটা ছোট মেয়েকে কোলে নিতে গিয়েছিলাম, বাচ্চা মেয়েটা সবার সামনে বলে উঠল, তুমি মোটা তোমার কোলে যাবো না, এই বলে আমার পাশের বান্ধবীর কোলে উঠল।
একটা ছেলেকে পাগলের মত ভালবেসে ফেলেছিলাম। তখন ক্লাস টেনে পড়ি। ছেলেটা না অনেক সুন্দর ছিল। কিন্তু সে আমাকে কোনোদিনই ভালবাসে নি। আমি খুব স্বাধীন চেতা। সব কাজ নিজে করতে পছন্দ করি। যাকে একবার মনে বসিয়ে ফেলি, তাকে কোনদিন মন থেকে মুছি না। জীবনে অনেকবার রিলেশন হয়েছে, তবে ব্যাপারটা হচ্ছে ইউজড হয়েছি। আমি কেমন জানি টমবয়, বোহেমিয়ান। এখন একটা চাকরি করছি। চলে ভালই। আমার বিয়ে হয়েছে। ছেলে দেখে মোটেই পছন্দ হয় নি। কিন্তু প্রথমে মনে হয়েছিল, মানুষ হিসেবে খুব ভাল। তাই রাজী হই।
বিয়ের পর প্রথমে ভাল যায়, কিন্তু পরে কিছু জিনিস ভাল লাগত না। সে, মানে আমার স্বামী প্রচন্ড কামুক। আমার চেয়ে ১১ বছরের বড়। অনেকটা ডমিনেটিং আর ঠ্যাশ দিয়ে কথা বলে। মাঝে মাঝে নিজের অনিচ্ছায় শারিরীক সম্পর্ক করেছি। কেমন জানি ঘেন্না লাগে। উনার একগুঁয়েমি স্বভাব আমার ভাল লাগে না। উনি অনেক শিক্ষিত কিন্তু আচরণের দিকে কেমন জানি গ্রাম্য। প্রথমে কেউ বুঝবে না। আমি কাছ থেকে দেখেছি। অনেক হিসেবি। বড় বড় গল্প দেয়, কিন্তু কথার সাথে কাজের মিল নাই। এক দিন তর্ক করেছিলাম তাই আমার গায়ে হাত তুলল। আগে একটু রেস্পেক্ট ছিল, এখন কিচ্ছু নাই। বিয়ে হয়েছে কয়েক মাস। অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমি তাকে ভালবাসতে পারি নি। ভালবাসি না। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গেছি। মরতে ইচ্ছে করে। কিংবা মনে হয় দূরে চলে যাই। আমার কী করা উচিৎ এখন?
,মনে হয় আপনার মাঝে নিজের ফিগার বা সৌন্দর্য নিয়ে কোথাও একটা হীনমন্যতা কাজ করছে । আগে এটা থেকে নিজের মনটাকে মুক্ত করুন । সৌন্দর্য কোন একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে আটকানো যায় না । আর এর সংজ্ঞাও দেশ ,কাল ,সমাজ ভেদে অনেক পাল্টে যায় । আমাদের বাঙালি সমাজে একসময় শুধু গাত্রবর্ণ দিয়েই একটি মেয়ে সুন্দর বা অসুন্দর বিচার করা হত । আজও তা আছে ,তবে নতুন যুক্ত হয়েছে ফিগার এবং হাইট নিয়ে অতিমাত্রায় ফেসিনেশন । কোনোভাবেই রঙ , ফিগার বা মুখশ্রী নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি ধরনের মনোযোগ সমাজের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না ।সুন্দর শুধু রোগা হলেই লাগবে তা নয়,একজন কার্ভি মানুষ ও সুন্দর হতে পারেন । টেস হলিডে নামের এক প্লাস সাইজ মডেল(সাইজ ২২, অর্থাৎ তিনি মোটাই শুধু নন ,বরং বলা ভাল তিনি ওবিজ বা ভীষন স্থুল ) কিন্তু পুরো পশ্চিমা ফ্যাশন জগত কাঁপাচ্ছেন ।তিনি এখন শুধু জনপ্রিয়ই নন,অনেক ওভারওয়েট মানুষের কাছেই তিনি একটা পজিটীভিটি বা ইন্সপিরেশন এর উৎস ।
আসলে এদেশে ত বটেই ,সারা পৃথিবীতেই অনেক সমাজেই (বা বলা ভাল সমাজের অনেক মানুষই ) মেয়েদের তাদের রুপ (তাদের ডেফিনেসন অনুযায়ী ) দিয়েই মূল্যায়ন করতে চায় । কারন তাদের মন মানসিকতা টাই এমন পঙ্গু ।এদের কে পাত্তা দেবেন না । বরং যে শিশুটির মাথায় এমন সস্তা ভাবনা চিন্তা ছোট বেলাতেই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তার জন্য আমার করুনা হচ্ছে। ফ্যাট শেমীং খুব নির্বোধের কাজ , এখন আমেরিকা বা ইউরোপের রুচিশীল ,শিক্ষিত অনেক মানুষ এটা বুঝেছেন এবং এই নিয়ে অনেক মুভমেন্ট পর্যন্ত শুরু হয়েছে। কিন্ত এদেশে এমন ভাবনা চিন্তা আসতে হয়ত আরও দেরি হবে ।
তবে যদি অতিরিক্ত ওজন আপনার কর্মদক্ষতা ,প্রানশক্তি এবং মোস্ট ইম্পরটেন্টলি ,আপনার সুস্থতাকে বাধাগ্রস্ত করে দেয় ,তখন আপনি একটু সচেতনভাবে ডায়েট বা এক্সারসাইজ করলে ফল পাবেন বলে আশা করা যায় । আর অনেক মেয়েই একটু টমবয় টাইপ হয়েই থাকে , এটা মোটেই দোষের কিছু নয় । আবার এটাও ঠিক আজকালকার সমাজে একটু প্রেজেন্টেবল হয়ে থাকা নারী পুরুষ সবার জন্যই মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে । তাই সেদিকে একটু দৃষ্টি দিলে আশেপাশের সবাই যেমন আপনার রুচির , পারসোনালিটির একটা ধারনা পাবেন ,তেমনি আপনিও আরেকটু কনফিডেন্স পাবেন ।
এখন আসি পরের প্রসঙ্গটিতে । দেখুন কোন দুই জন মানুষের সব বিষয়ে রুচি বা খাদ্যাভ্যাস যেমন পুরোপুরি এক নয় ,তেমনি জৈবিক বিষয়টিতেও মানুষে মানুষে ভিন্নতা থাকে । তাছাড়া তিনি তাঁর কামুকতা মিটাতে আপনার কাছেই আসছেন ,অর্থাৎ তিনি আর যাই হোক লম্পট নন কিন্তু । আর তিনি দেখতে কেমন বা বয়স কত ,এটা নিয়ে বিয়ের পর আর নতুন করে ভাবাটা খুব লজিকাল নয় ভাই । তাঁর বাড়াবাড়ি হিসাব বা কৃপণতা ,কিংবা বাগাড়ম্বরের বদভ্যাস আপনি কিন্তু ঠিক বদলাতে পারবেন না এই বয়সে।তাই একটু মানিয়ে নেয়ার বা ইগনোর করার সাথে সাথে নিজের খরচ নিজেই করা ছাড়া আর তেমন কোন পথ নাই।কিন্তু যদি সত্যি তাঁর অভ্যাস থাকে আপনাকে কারণে অকারণে মানসিক কস্ট দেয়ার ,তবে তা চুপ করে সহ্য করে লাভ নেই ,বরং তাতে অত্যাচার এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে । আর গায়ে হাত তোলা আরও কদর্য বিষয় ,এটা একদম মেনে নেয়া যায় না যদি ন্যূনতম আত্মমর্যাদা একটা মানুষের থেকে থাকে । তাই আপনি স্বামীর সাথে ঠান্ডা মাথায় কিন্তু খুব দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিন আপনি এসব ব্যবহার একদম মেনে নেবেন না । তবে তিনি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইলে এবং এমন আচরণ পরিহার করলে আপনি তাঁকে আর দুরে না ঠেলে বরং মানসিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা আপনার দিক হতেই করুন ।
তবে তারপরেও যদি এমন ঘটনা তিনি আবার ঘটান ,তাহলে সেই সম্পর্কের বোঝা আর বাড়িয়ে লাভ হবে না বলেই আমার বিশ্বাস । আপনার জন্য আমার শুভকামনা থাকল ।