অন্যান্য প্রাণীদের কি আত্মা আছে?
অন্যান্য প্রাণীদের কি আত্মা আছে?
মানুষের সব ক্রিয়াকাণ্ডের মূলে রয়েছে আত্মার সক্রিয় ভূমিকা। মানবাত্মা আল্লাহ তায়ালার এক বিস্ময়কর ও রহস্যময় সৃষ্টি। আত্মা দেহকে সঞ্জীবিত করে তোলে এবং দেহে গতি সঞ্চার করে। দেহ ছাড়াও আত্মা থাকতে পারে তবে আত্মা ছাড়া দেহ অচল। মানবদেহ আত্মার নির্দেশ পালনের হাতিয়ারস্বরূপ। হুকুম তামিল করার জন্য সে সদা প্রস্তুত। আত্মার দুটি প্রবৃত্তি রয়েছে। সুপ্রবৃত্তি এবং কুপ্রবৃত্তি। সুপ্রবৃত্তি মানুষকে ন্যায়, সৎ ও সঠিক পথ নির্দেশ করে। অন্যদিকে কৃপ্রবৃত্তি মানুষকে অন্যায়, অসৎ ও বিপথে পরিচালিত করে। কোরানে কারিমে মানবাত্মা বিষয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে। ইসলাম মানুষের আত্মাকে সাধারণত তিন স্তরে বিন্যস্ত করে। ক. নফসে আম্মারা বা কুপ্রবৃত্তিমূলক আত্মা, খ. নফসে লাওয়ামাহ বা বিবেকতাড়িত এবং গ. নফসে মুতমাইন্না বা প্রশান্ত আত্মা। কোরানে কারিমের সুরা ইউসুফের ২৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয় মানুষের মন মন্দকর্মপ্রবণ। দুনিয়ায় এমন অনেক কিছু রয়েছে, যা আপাতদৃষ্টিতে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বলে প্রতীয়মান। মানুষ সহজেই এ সবে আকৃষ্ট হয় এবং বিপথে পরিচালিত হয়। কিন্তু মানুষের বুদ্ধি-বিবেক বা সুআত্মা বিদ্যমান বিধায় সে হীন-নীচ-কদর্য পথ থেকে বিরত থাকতে সমর্থ হয়। পক্ষান্তরে কারো মাঝে পশুবৃত্তির আধিক্য থাকলে মানুষ সহজেই মন্দ-অশ্লীল, খারাপ অন্যায় কুপ্রবৃত্তি ও কুবাসনাজনিত কাজে প্রলুব্ধ হয় এবং নিজেকে পাপে নিমজ্জিত করে ফেলে। সুফি সাধকরা বলেন, নফস স্বভাবগত ও মজ্জাগতভাবে মন্দপ্রবণ তবে ঈমান, ইবাদত-বন্দেগী, কোরান তেলাওয়াত, জিকির-আজকারসহ অন্যান্য ভালো কাজ এবং সাধনার দ্বারা ক্রমাগত আত্মার উন্নতি সাধিত হয়। এভাবেই কুপ্রবৃত্তিমূলক আত্মা ধীরে ধীরে প্রশান্ত আত্মায় রূপ নেয়। প্রশান্ত আত্মা হচ্ছে সর্বপ্রকার কলুষতা থেকে মুক্ত বিশুদ্ধ পবিত্র ও খাঁটি আত্মা। পশুবৃত্তি ও জীববৃত্তি এবং সব ধরনের কুপ্রবৃত্তি এখানে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে যায়, বুদ্ধি ও বিবেকের প্রাধান্য এখানে অত্যন্ত প্রবল শুধু তাই নয়, ঐশী জ্যোতিতে এ আত্মা হয়ে ওঠে নির্মোহ আত্মা। আল্লাহর গভীর ধ্যান ও প্রেমই হচ্ছে এই আত্মার বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর জিকির ও স্মরণ ছাড়া এই আত্মায় আর কিছুই থাকে না। এ আত্মার অধিকারী থেকে কোনো ধরনের অনাচার-পাপাচার সম্ভব নয়