আজ আমি আপনার কাছ থেকে শিক্ষণীয় কী জানতে পারি?
আজ আমি আপনার কাছ থেকে শিক্ষণীয় কী জানতে পারি?
টাটা ( TATA) ব্র্যান্ডের নাম শোনেনি বা এদের তৈরি কোনো জিনিস কখনো ব্যবহার করেনি, এমন ভারতীয় মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুস্কর। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই ছড়িয়ে আছে এই সংস্থার তৈরি জিনিসপত্র। এই টাটা ব্র্যান্ডের অধীনে থাকা, টাটা মোটরস হল একটি যানবাহন তৈরির সংস্থা যারা, জাগুয়ার এবং রেঞ্জ রোভারের মতো অভিজাত ও বিলাস বহুল গাড়ির মালিক ও অন্যান্য গাড়ি তৈরি করে।
এই সংস্থার তৈরি একটি বিখ্যাত গাড়ির নাম হল, টাটা সুমো। এই গাড়ি দেখেননি বা এই গাড়িতে চড়ে যাতায়াত না করা এমন ভারতীয়র সংখ্যাও হাতে গোনা! ১৯৯০ এর দিকে যখন এই গাড়ি প্রথম ভারতের বাজারে আসে তখন থেকেই ক্রেতাদের মন জয় করে নেয় এবং ভারতীয় বাজারের অন্যতম বহুল বিক্রীত গাড়ির তালিকায় এটি জায়গা করে নেয়। কিন্তু জানেন কি, এই গাড়ির নাম টাটা সুমো কিভাবে হলো??? চলুন এবার সেই কাহিনী জেনে নেওয়া যাক।
এখন যদি আপনি কাউকে জিজ্ঞাসা করেন, যে এই নাম এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে, তাহলে তিনি এটা বলবেন যে গাড়ির আকার, দক্ষতা এবং সর্বোপরি এই গাড়ির শক্তি দেখে টাটাদের এই গাড়ির নাম ” টাটা সুমো ” রাখা হয়েছে। অথবা জাপানি কুস্তি প্রতিযোগিতার সুমো পালোয়ানদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হয়তো নেওয়া হয়েছে
আসল কারণ হলো এই গাড়ির নাম রাখা হয়েছে তৎকালীন টাটা মোটরসের অধীনে কর্মরত একজন ব্যক্তির নাম থেকে। যার নাম ছিলো, সুমন্ত মুলগাওকর! কেন তাঁর কথা মাথায় রেখে গাড়িটির এমন নাম রাখা হল, তার পিছনে একটি আকর্ষণীয় কাহিনি রয়েছে ৷
( সুমন্ত মুলগাওকর)
এক সময় দেখা যাচ্ছিল সুমন্ত মুলগাওকর দুপুরের লাঞ্চের সময় অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন এবং লাঞ্চের পর আবার অফিসে ফিরে আসছিলেন । স্বভাবতই শীর্ষ ম্যানেজমেন্ট কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিল, যে, কেন তিনি দুপুরের খাবারের সময় অফিসে অনুপস্থিত থাকছিলেন ৷ এমনকি সন্দেহ করা হচ্ছিল টাটার কিছু ডিলাররা বোধহয় তাঁকে হয়তো ফাইভ স্টার হোটেলে লাঞ্চ খাওয়ায় তাই তিনি ওই সময় অফিসে বসে দুপুরের খাবার না খেয়ে বাইরে বেরিয়ে যান ৷ শুধু সন্দেহ নয় , ওই সময় তার কার্যকলাপের উপর নজর রাখতে লুকিয়ে তার উপর গোয়েন্দাগিরি শুরু করে ছিল ম্যানেজমেন্ট । এজন্য শীর্ষ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা ওই সময় তিনি কোথায় যাচ্ছেন তা জানতে তার পিছু নেওয়া শুরু করে ৷
তার পিছু করতে গিয়ে দেখা যায় – আদৌ কোনও পাঁচতারা হোটেলে তিনি যাচ্ছিলেন না ৷ শীর্ষ ম্যানেজমেন্ট জানতে পারে তিনি লাঞ্চের সময় অফিস থেকে বেরিয়েই সোজা চলে যেতেন, বিভিন্ন হাইওয়ের পাশে থাকা কোনও ধাবায় ৷ আর সেখানে বসে খাবার খেতে খেতে ট্রাক ড্রাইভারদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে চান, তাদের উৎপাদিত গাড়ির দোষ ত্রুটি ৷ ওই সব গাড়ি চালকদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝে নিতে চাইতেন, যে তাদের তৈরি গাড়ির মান উন্নয়ন করতে হলে আর কি কি করতে হবে , এবং কোন কোন জায়গায় এখনো উন্নতি সাধন করার অবকাশ রয়েছে। অর্থাৎ গাড়ি চালকেরা ঠিক কেমন গাড়ি চাইছেন ৷ সেইসব কথা নোট করে এনে তিনি উন্নয়ন ও গবেষণা বিভাগের লোকেদের কাছে তা জানান , যাতে ওই ভাবে গাড়ির মান আরো উন্নত করা যায় ৷ এটাই ছিল সুমন্ত মুলগাওকারের কর্ম জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান যা টাটা গ্রুপকে তাদের তৈরি যানবাহন গুলিকে ভবিষ্যতে এই ফিডব্যাক এর মাধ্যমে আরো উন্নত করতে সাহায্য করেছিল ।
সুমন্ত মুলগাওকারের এরকম কাজের নীতি এবং অবদানকে সম্মান জানাতে টাটা মোটরস যথাযথভাবে তার নাম ও পদবীর ( Sumant Moolgaokar ) প্রথম দুটি করে অক্ষর ( Su এবং Mo ) ব্যবহার করে তাদের প্রথম মাল্টি-ইউটিলিটি গাড়ি TATA Sumo-র নামকরনে ৷ যা অবশ্যই কর্পোরেট তথা যানবাহন তৈরির ইতিহাসে একটি অতুলনীয় স্বীকৃতি । এবং এই পর্যায়ের স্বীকৃতি খুব কম জনই অর্জন করতে পেরেছেন।
শিক্ষণীয় বিষয় – আপনি আপনার কাজের প্রতি সম্পূর্ণরূপে দায়িত্ববান হলে আপনার কাজই আপনাকে অমর করে রাখবে।