আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কোনটি?
জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় তখন, যখন বেকার ছিলাম।
এই বেকারত্ব, জীবনের জন্য মহামূল্যবান শিক্ষা দিয়ে গেছে,
বেকার থাকা অবস্থায়, আমি শিখেছি,
১। চাকরী, বাকরী, ব্যবসা, রোজগার না করতে পারলে, যোগ্য হয়েও, অযোগ্য উপাধিতে ভূষিত হতে হয়, পদার্থ হয়েও, অপদার্থের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়, বারেবারেই।
২। ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, শ্লেষ, এসবের প্রতিবাদ করে কোনো লাভ হয় না,
হয় হজম করতে হয়, নয় অগ্রাহ্য করার কৌশলটি রপ্ত করতে হয়।
৩। কী করো ?
এই প্রশ্নটির সন্তোষজনক জবাব নিজের কাছে না থাকলে, বিয়ে বাড়ী, অনুষ্ঠান উৎসব বাড়ীতে গিয়ে, অতি সন্তর্পণে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হয়।
৪। অযাচিত উপদেশের ফল্গুধারায় নিজেকে স্নাত হতে হয়।
৫। প্রেমিকা আমাকে চাইলেও, আমার শুভার্থীরা আমার প্রেম কে একটা ঘোরতর অন্যায় হিসাবে বিচার করে, আত্মতুষ্টি লাভ করতেই থাকেন।
৬। বেকার হওয়ার কারণে, একদমই অকাট্য যুক্তির কথা, অযৌক্তিক হয়ে উঠে।
৭। বেকারত্বের দহনে নিজের জ্বালা, কারোর সাথে শেয়ার করা যায় না, নিজেকেই দগ্ধ হতে হয়, প্রতি পলে, পলেই।
৮। বেকারত্ব শিক্ষা দিয়ে গেছে, নিজের যোগ্যতা, শিক্ষা, দক্ষতা, কোনোকিছুই মূল্যবান নয়, যদি নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলা না যায়, যদি পরমুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হয়।
৯। বেকারত্ব শিখিয়েছে, জগতে খারাপের পাশাপাশি, অনেক ভালো মানুষ আছেন, অনেক উপকারী মানুষ রয়েছেন। কিন্তু, নিজে স্বাবলম্বী না হতে পারলে, তাঁরা সহানুভূতি দেখালেও, সাহায্য করলেও, সেটা স্থায়ীভাবে সম্ভব নয়।
১০। বেকারত্ব জানিয়েছে, হতাশাই জীবনের শেষ কথা নয়,
কোনোদিন, কোনোভাবে এই হতাশা জীবন থেকে পালিয়ে যেতেই পারে, বেকার শব্দটি, জিভ থেকে লাফিয়ে ঠোঁটে এসে থমকে যেতেই পারে, মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতেই পারে,
“আমি নিজের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের জন্য, কারোর উপর নির্ভর করি না।”
এই নির্ভর করি আর করি না, এ দু’য়ের মাঝে যে লক্ষ যোজন দূরত্ব, সেটার শিক্ষা দিয়ে গেছে, বেকারত্ব।
জীবনে স্বাবলম্বী হওয়া যে কতো প্রয়োজন, পদে, পদে, সে শিক্ষা দিয়ে গেছে, বেকারত্ব।
সুতরাং, এই বেকারত্ব, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, আমার জন্য,
কারণ, জীবনের এই সময়টুকু যে শিক্ষা দিয়ে যায়, সে শিক্ষা, জীবনের জন্য ইতিবাচকতার শিক্ষা হয়ে বেঁচে থাকে, আমৃত্যুকাল অবধি।
বেকারত্ব যতবারই যন্ত্রণায় বিদ্ধ করে বুকের ভেতরে রক্ত ঝরায়, ততবারই জানিয়ে দিয়ে যায়…,