কাজা রোজা আদায়ের বিধানাবলী কি কি?

কাজা রোজা আদায়ের বিধানাবলী কি কি?

Add Comment
1 Answer(s)

    আমাদের অবশ্যই শরয়ী কারণে যে রোজা ভঙ্গা হয় তা কাজা করার বিধান জানা থাকা জরুরী।

    আল্লাহ তাআলা বলেন:

    وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ 185

    ‘আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না।’

    এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা রোগী এবং মুসাফিরকে রমজানের রোজা ভঙ্গের অনুমতি দিয়েছেন। এবং এ সুযোগ গ্রহণ করলে পরবর্তিতে ঐ পরিমাণ রোজা আদায় করতে বলেছেন। তবে কেউ যদি এ সুযোগ গ্রহণ না করে রোজা রাখে তার রোজা হবে এটাই জামহুরে ওলামার মত। অনুমতি দানের হেকমত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: আল্লাহ বান্দার জন্য সহজ করতে চান, কঠোর করতে চান না। অসুস্থ আবস্থায় অথবা সফর অবস্থায় রোজার আদেশ বহাল রাখলে বান্দার কষ্ট হতো। আবার পরে তা পূরণ করার হেকমত ও তিনি বর্ণনা করেছেন। তা হলো রোজার জন্য নির্ধারিত দিনগুলো পূরণ করা অর্থাৎ ১মাস রোজা পালন যা আল্লাহ ফরজ করেছেন। এ সুযোগ গ্রহণ করলে সহজও হবে রোজার মাসও পূরণ হবে। তৃতীয় আরেকটি শ্রেণী আছে যাদের জন্য রোজা ভঙ্গের অনুমতি আছে। তারা হলো অতিশয় বৃদ্ধ যারা বাধর্ক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে অক্ষম। তারা রোজার পরিবর্তে প্রতিদিনের জন্য একজন অভাবী মানুষকে খাবার দেবে।

    وعلى الذين يطيقونه فدية طعام مسكين #البقرة 184

    আর যাদের কষ্ট হবে তাদের কর্তব্য মিছকীনকে ফিদয়া প্রদান করা।

    এ আয়াতের আওতায় গর্ভবতী এবং দুগ্ধ দানকারীনি নিজের এবং সন্তানের উপর আশংকাবোধ করলে রোজা ভঙ্গের অনুমতির কথা ওলামাদের এক জামাআত অনুমোদন করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি গর্ভবতী অথবা দুগ্ধ দানকারীনিকে বলেছেন আপনিতো ঐসব লোকের পর্যায় যারা অক্ষম।

    أنت بمنزلة الذين لا يطيقون الصيام،

    ইবনে ওমর রা. কে প্রশ্ন গর্ভ অবস্থায় রোজা রাখা সম্পর্কে তার এক মেয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন: আহার গ্রহণ কর এবং প্রতি দিনের জন্য একজন মিসকিনকে খাবার দাও।

    সার কথা হল: এদের সকলের জন্য অসুবিধার কারণে রমজানের দিনে খাবার গ্রহণ বৈধ। তবে এদের আবার তিন প্রকারে ভাগ করা হয়।

    (১) শুধু কাজা ওয়াজিব ফিদয়া দিতে হবে না। যেমন, অসুস্থ, মুসাফির এবং গর্ভবতী ও ধাত্রীদ্বয় যদি তাদের জীবনের উপর আশংকা করেন ।

    (২) ফিদয়া ওয়াজিব কাজা করতে হবে না। যেমন, অতিশয় বৃদ্ধ অথবা এমন রোগী যা আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

    (৩) কাজা এবং ফিদয়া উভয়টি ওয়াজিব তারা হলেন গর্ভবতী এবং ধাত্রী তারা যদি শুধু মাত্র তাদের সন্তানের ক্ষতির আশংকা করেন। সে ক্ষেত্রে রোযা না রেখে ফিদয়া দেবেন। এখানে ফিদয়া হলো প্রতি দিনের জন্য এক ফিতরা পরিমাণ খাবার কোন মিসকিনকে খাইয়ে দেয়া বা দান করা।

    আমাদের দীনে ইসলাম হলো সহজ ও সহনীয়। মানুষের অবস্থার প্রতি এর রয়েছে সজাগ দৃষ্টি। তাই যা মানুষ করতে অক্ষম তা তাকে চাপিয়ে দেয়া হয় না। দেখুন মুকিম, মুসাফির, সুস্থ ও রোগীর জন্য রয়েছে উপযোগী বিধান। এতে করে মুসলিম ব্যক্তি সব সময়ই আল্লাহর এবাদতের সাথে জড়িত থাকতে পারে, এবং কোন ফরজ আদায় তার থেকে একেবারে বাদ হয়ে যায় না। তবে তা অবস্থার আলোকে বিধান পরিবর্তন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি তোমার রবের বন্দেগী কর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। (সূরা আল হিজর: ৯৯) ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেন, আমাকে আমার রব আদেশ করেছেন নামাজ এবং যাকাত আদায়ের জন্য যতদিন বেচে থাকি। (সূরা মারিয়াম: ৩১) অনেকে ইসলামের এ উদারতার কথা বলে হারাম, নাজায়েয কাজ করে থাকে এবং ফরজ কাজ ছেড়ে দেয় আর বলে থাকে, আরে ধর্মতো সহজ এর মাঝে কোন বাড়াবাড়ি নেই। আসলে ইসলাম ধর্ম পালন করা সহজ। তবে এর অর্থ এ নই যে, মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং মন যে রকম চায় সে রকম জীবন যাপন করবে। বরং সহজের অর্থ হচ্ছে বান্দা এবাদত পালনে কষ্টের পথ পরিহার করে অসুবিধা জনিত অবস্থায় সহজ পথ অনুসরণ করবে। সকল প্রশংসা আল্লাহরই।

    কাজা রোজার বিধান প্রসঙ্গ

    এরশাদ হচ্ছে :

    ومن كان منكم مريضا أو على سفر فعدة من أيام أُخر #البقرة 185

    আর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তারা অন্য সময় তা পূর্ণ করে নেবে। (সূরা বাকারা : ১৮৫)

    কোন ব্যক্তি জায়েয কারণে মাহে রমজানে রোজা ভঙ্গ করলে, যেমন- শরয়ী ওযর যা তার জন্য রোজা ভাঙ্গা মোবাহ করে দেয়, অথবা কোন হারাম কারণে, যেমন- কেউ স্ত্রী সহবাস বা অন্য কোন উপায়ে রোজা ভঙ্গ করল, তার উপর কাজা করা ওয়াজিব হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

    فعدة من أيام أخر #البقرة 184

    সে অন্য দিনে তা আদায় করে নেবে। (সূরা বাকারা : ১৮৪)

    তবে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি কাজা আদায় করা মুস্তাহাব, কারণ এটা তার জিম্মাদারি। লাগাতার কাজা আদায় করা মুস্তাহাব। কেননা কাজা প্রথম আদায়েরই স্থলাভিষিক্ত। যদি সাথে সাথে কাজা না করে, তাহলে অন্ততঃ কাজা করার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতে হবে। দেরীতে কাজা করাও জায়েয। কেননা এর সময় প্রশস্ত। আর যে সব ওয়াজিবের ব্যাপারে প্রশস্ত সময় থাকে সেগুলো দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে দেরী করে করা জায়েয। অনুরূপভাবে বিরতি দিয়েও রোজা কাজা করা জায়েয। কিন্তু যদি শাবান মাসের মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকে যে কয়দিনের রোজা তার কাজা হয়েছে, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে তার উপর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কাজা আদায় করা ওয়াজিব হবে সময়ের সংকীর্ণতার কারণে। কোনরূপ ওজর ছাড়া পরবর্তী রমজানের পর পর্যন্ত কাজা রোজা পিছিয়ে দেয়া জায়েয নয়। কেননা আয়েশা রা. বলেন-

    كان يكون عليّ الصوم من رمضان فما أستطيع أن أقضيه إلا في شعبان لمكان رسول الله صلى الله عليه وسلم (متفق عليه. أخرجه البخاري رقم 1950 ومسلم رقم 1146

    আমার মাহে রমযানের রোযা কাজা হত, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতির কারণে শাবান মাস আসা পর্যন্ত রোজা কাজা করতে পারতাম না। (বুখারী : ১৯৫০, মুসলিম : ১১৪৬) অত্র হাদীসের মাধ্যমে বুঝা গেল কাজার সময়টি শাবান মাসের সে কয়েকদিন অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়, যে কয়দিন তার উপর রোজা রাখা ফরজ ছিল। এমতাবস্থায় পরবর্তী রমজান মাস প্রবেশ করার পূর্বে কাজা আদায় করা ওয়াজিব। যদি পরবর্তী রমজান মাস প্রবেশ করা পর্যন্ত কাজা রোজা বিলম্বিত করে , তাহলে প্রথমে রমজানের রোজা পালন করবে, এবং পরে কাজা আদায় করবে।

    যদি ওজরের কারণে ঐ সময় কাজা আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে তার উপর শুধু কাজা আদায়ই ওয়াজিব থাকবে। আর যদি ওজর ছাড়া এমন দেরী হয়ে থাকে তাহলে কাজাসহ প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে ঐ শহরের প্রচলিত খাদ্য থেকে অর্ধ সা’ খাবার দিতে হবে। যার ওপর কাজা ওয়াজিব, এমন ব্যক্তি যদি পরবর্তী রমজান আগমনের পূর্বে ইন্তেকাল করে, তাহলে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। কেননা যে সময়ের মাঝে সে মারা গিয়েছে সে সময় পর্যন্ত দেরী করা তার জন্য বৈধ ছিল। আর যদি নতুন রমজানের পর মারা যায়, তাহলে যদি তার দেরী করাটা অসুস্থতা ও সফরের কারণে হয়ে থাকে তাহলেও তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। আর যদি ওজর ছাড়া দেরী হয়ে থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে প্রতি দিনের জন্য একজন মিসকিনের খাবার দান করে দিতে হবে।

    আর যদি কোন মৃত ব্যক্তির উপর কাফফারার রোজা ওয়াজিব থাকে, যেমন- জেহারের কাফ্ফারার রোজা, তাহলে প্রতি দিনের জন্য একজন মিসকীনকে খাবার খাওয়াবে, তার পক্ষ থেকে রোজা রাখলে চলবে না। আর এ খাবার হবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে। কেননা জীবিত থাকা অবস্থায়ই রোজার ব্যাপারে নায়েব বানানো চলে না। অতএব, মৃত্যুর পর কিভাবে তা হতে পারে? এটা হল, অধিকাংশ আলেমের অভিমত। মান্নতের রোজা ওয়াজিব থাকা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে ওয়ারিশদের জন্য মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেতে রোজা রাখা মুস্তাহাব। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে- জনৈক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল: আমার মাতা মান্নতের রোজা পালন না করে মারা গেছেন, আমি কি তার পক্ষ থেকে রোজা পালন করতে পারি? তিনি বললেন : হ্যাঁ। (বুখারী : ১৯৫৩, মুসলিম : ১১৪৭) মৃত ব্যক্তির ওলিগণ হল তার ওয়ারিশ।

    ইমাম ইবনে কাইয়েম রহ. বলেন : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে মান্নতের রোজা রাখ যাবে। তবে ফরজ রোজা রাখা যাবে না। ইমাম আহমদ রহ. প্রমুখের এটিই অভিমত। ইবনে আব্বাস রা. ও আয়েশা রা. থেকে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে। যুক্তি -কিয়াসও তাই বলে। কেননা মান্নত করা শরীয়তের নির্দেশ নয়। এটি বান্দা তার নিজের উপর নিজে ওয়াজিব করে নেয়। এটি অনেকটা ঋণের মত। আর এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মান্নতের তুলনা ঋণের সাথেই দিয়েছেন। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা যে রোজা ফরজ করেছেন এবং সেটি ইসলামের রোকনসমূহের একটি। সে রোজার ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা চলবে না, যেমনিভাবে নামাজ ও কালেমার ক্ষেত্রে কাউকে নায়েব বানানো চলে না। কারণ কালেমা ও নামাজের উদ্দেশ্য হলো বান্দা যে দাসত্বের আদিষ্ট হয়েছে তা স্বয়ং নিজে পালন করা। অন্য কেউ এটি আদায় করলে চলে না। অনুরূপভাবে অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে নামাজ আদায় করলে চলবে না।

    শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রতি দিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খানা খাওয়াবে। ইমাম আহমদ, ইসহাক রহ. প্রমূখ এ অভিমতটি গ্রহণ করেছেন। এর স্বপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। কেননা মান্নত তার দায়িত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। অতএব, মৃত্যুর পর তা পূর্ণ করা হবে। আর রমজান মাসের রোজা এর ব্যতিক্রম। কেননা আল্লাহ তাআলা অপারগ ব্যক্তির উপর রোজা ফরজ করেননি। বরং তাকে একজন মিসকীনকে খাওয়ানোর মাধ্যমে ফিদয়া দেয়ার আদেশ করেছেন। কাজা রোজা ঐ ব্যক্তির উপরই সাব্যস্ত হয়, যার রোজা রাখার শক্তি আছে। অপারগ বা অক্ষম ব্যক্তির উপর রোজা কাজা করা ফরজ করা হয়নি। অতএব, কেউ তার পক্ষ থেকে কাজা আদায় কারার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু মান্নত অথবা এ জাতীয় রোজা মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সর্বসম্মতভাবে আদায় করা যাবে। কেননা সহীহ হাদীস দ্বারা এটি প্রামানণত হয়েছে।

    Professor Answered on July 7, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.