কোন কোন ব্যাপারে কখনো লজ্জা পাওয়া উচিত নয়?

    কোন কোন ব্যাপারে কখনো লজ্জা পাওয়া উচিত নয়?

    Train Asked on March 13, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      অনেকে অনেকগুলো কারণ বলেছে। আর আমি জানি আপনারা কেউই এসবের একটাও মনে রাখবেন না। শুধু দেখবেন, খানিকের জন্য একটু মোটিভেট হবেন, একটা আপভোট দিবেন আবার স্ক্রল করতে করতে সব ভুলে যাবেন। এটা শুধু আপনাদের না সবারই হয়। আমরা খুব দ্রুতই ভুলে যাই।এজন্য আমি অনেকগুলো কারণ না বলে কেবল একটামাত্র কারণ বলবো যাতে মনে রাখেন আপনারা।

      আপনি ভবিষ্যতে কি হতে চান সেটা নিয়ে কথা বলতে, সেটার জন্য কাজ করতে কখনোই লজ্জা পাবেন না, থেমে যাবেন না।

      আসুন ব্যাপারটা নিয়ে একটু বিস্তারিত কথা বলা যাক।

      সিম্পলি দেখা যায় আমাদের বাবা মায়েরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে আশেপাশের পরিবেশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। অমুকের ছেলে ডাক্তার আমার ছেলেকেও ডাক্তার হতে হবে। অমুকের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আমার ছেলেকেও ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। বাবা হয়তো চা খাইতে গেছে। যাওয়ার পর শুনে চায়ের দোকানের কয়েকজন অমুকের ছেলের প্রশংসা করে কারণ অমুকের ছেলে ডাক্তার সে অনেক ভালো বেতনে চাকরি পাইছে। আর সেখানে ওই অমুক বাবা বসে বসে ছেলের গুনগান উপভোগ করে আর গর্বিত হয়। তো দেখা যায় সেখানে আমার বাবারও স্বপ্ন হয় তার ছেলেও একদিন এমন ডাক্তার হবে আর সেও এমন মানুষের প্রশংসা পাবে। এটা শুধু চায়ের দোকানে হবে এমন না। রাস্তা, স্কুল, বাসা, পাশের বাসার আন্টিরা, অফিসের কলিগেরা এরকম হওয়ার চান্স সব যায়গায় আছে। প্রায় সব যায়গায় দেখা যায় অমুকের ছেলের প্রশংসা করা হয় আর আমাদের বাবা মায়েরা সেখান থেকে অনুপ্রাণিত করে, সেটা না পারলে ফোর্স করে আমাদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য। কারণ তাদের স্বপ্ন ওই অমুকের বাবার স্থানে বসে সেও ওই প্রশংসা শুনতে চায়।

      ফলে সন্তানদের উপর শুরু হয় নির্যাতনের খরগ। এটা সবাই দেখে, কিন্ত কেউ দেখেনা। একটা মানুষের শৈশব কৈশোর হরন করে দিনরাত পাশবিক নির্যাতন। একটা নীরব মহামারী যা সব দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই দেখছে কিন্ত কেউ দেখছে না। সবাই এই মহামারীর ভুক্তোভোগী আবার এই মহামারীরই পক্ষপাতী।

      দেখা যায় মাত্র জীবনের শুরু, কিন্ত এই সামান্য বয়সে একটা অস্বাভাবিক জম্বির মতো হেটে স্কুল থেকে বাসা, বাসা থেকে প্রাইভেট, প্রাইভেট থেকে ওইখানে, ওইখান থেকে এইখানে কেবল ঘুরো আর ঘুরো। তোমাকে পড়তে হবে তোমাকে ডাক্তার হতে হবে। অথচ এই বয়সে আমাদের বাপ দাদা কিংবা তাদের পূর্বপুরুষ অধিকাংশ দের সময় কেটেছে কোন খেলার মাঠে কিংবা পাড়ার কোন কোনে আড্ডা দিতে দিতে। তারাও কিন্ত ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। কিন্ত আমাদের ক্ষেত্রে ভিন্নটাই হচ্ছে। রাত ১২ টার আগে ঘুমানো যাবে না। সকালে ভোরে উঠতে হবে। দিনে ৮-১০ ঘন্টা না পড়লে তুমি কিসের স্টুডেন্ট? ওমুকের ছেলে ওই যায়গায় আছে, ওমুকের ছেলে এত টাকা বেতন পায়। ও ফাস্ট হইলো ক্লাশে তুমি কেন হইলা না? ও তোমার থেকে এত মার্ক কীভাবে বেশি পেলো? ওইখানে যাওয়া যাবে না। এটা করা যাবে না। খেলাধুলা নিষিদ্ধ। ওর সাথে হাটলে খারাপ হয়ে যাবা। ক্লাশের ফাস্ট বয়ের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করো। এমন শত শত ফতোয়া জারি করে জাহেলিয়াতের জুগে আটকে থাকা মানুষের চেয়েও করুন একটা জীবন আমরা অধিকাংশই জাপন করছি।

      কিন্ত কখনোই আমাদের প্রশ্ন করা হয় না তুমি কি চাও? চিন্তা করুন শেষ কবে আপনার পিতামাতা এসে জিজ্ঞেস করেছে কেমন আছো? কিংবা আপনার সন্তান থাকলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, শেষ কবে তাকে জিজ্ঞেস করেছেন, তুমি কেমন আছো?

      দিনরাত এসব ফতোয়া জাড়ি করতে করতে কখনোই ভাবার সময় পান না আপনার সন্তান আসলে কেমন আছে? সে কি সত্যিই ভালো আছে? আপনি যা করছেন তা কি ঠিক? তার এই এক জীবনে তার কি অধিকার নেই ইচ্ছে মতো জীবন যাপন করার? তার কি অধিকার নেই ইচ্ছেমতো ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার? আপনারা কী তার অধিকার ক্ষুন্ন করছেন না? সে যেদিন বুঝতে শিখবে সে কি আপনাকে মাফ করবে?

      আপনার সন্তান হয়তো ভালো ক্রিকেট খেলে। কিন্ত আপনার ইচ্ছে তার উকিল হতে হবে। খেলার মাঠ থেকে জোর করে এনে বসিয়ে দেন পড়ার টেবিলে। সামনে মেলে ধরেন নতুন এক দুনিয়া। কিন্ত তার মন পড়ে থাকে তার ওই খেলার মাঠের দুনিয়ায়। দেখা যায় সে আর ভালো উকিল কখনোই হতে পারে না। কিন্ত সেই অমুকের ছেলে ঠিকই উকিল হয়ে। আপনার ছেলেকেও বাইরে অনেক মানুষের কথা শুনতে হয় এই ব্যার্থতার জন্য। এরপর বাসায় আসে হয়তো বাবা মা থেকে শান্তনা পাবার উদ্দেশ্যে কিন্ত বাসায় এসে দেখে তার বাবা আগেই লাঠি নিয়ে বসে আছে তাকে উত্তম মধ্যম দেওয়ার জন্য। প্রচন্ড অপমান আর উত্তম মধ্যম দেওয়ার পরেও আপনার মনে শান্তি মিলে না, আপনি ভাবেন আপনার সন্তান আপনার মুখ রাখেনি, আপনাকে প্রশংসা পাওয়ার সেই যায়গায় যাওয়ার সুযোগ দেয় নি। তখন আপনার সন্তান হয়তো জীবনে বেচে থাকার শেষ আশাটুকু হারিয়ে ফেলে। আস্তে করে সমাপ্তি ঘটিয়ে দেয় নিজের এই ব্যার্থ জীবনের। আপনাদের ভাষায় সে ব্যার্থ। সফল কীভাবে হবে? তার সফলতা তো আপনারাই শেষ করে দিয়েছেন। আজ হয়তো সে খেলার মাঠে থাকলে ভালো একজন খেলোয়াড় হয়ে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারতো। কিন্ত তার সেই সফলতা তো নিজ হাতেই ধংশ করেছেন। পরদিন পেপারে হয়তো ছাপবে যে ওকালতি পরীক্ষায় খারাপ করায় একজন ছাত্রের আত্মহত্যা। কিন্ত কেউ কখনো এটাই ছাপাবে না যে আপনারা নিজেরা ধীরে ধীরে নিজেদের সন্তানকে নিজ হাতে হত্যা করেছেন।

      এজন্যই প্রথমে থেকে বলতেছিলাম

      তোমরা ভবিষ্যতে কি হতে চান সেটা নিয়ে কথা বলতে, সেটার জন্য কাজ করতে কখনোই লজ্জা পাবে না, থেমে যাবে না।

      প্রথমেই বেরিয়ে আসো এই র‍্যাট রেস থেকে। নিজের কি ভালো লাগে খুজে বের করো। নিজের ভালোলাগার জন্য কাজ করো। হয়তো তোমার ঘুরতে ভালো লাগে, ট্রাভেলার হয়ে যাও।তোমার রান্না ভালো লাগে, শেফ হয়ে যাও। যা ভালো লাগে তাই করো। নিজের জন্য কাজ করো অন্যের স্যাটিসফেকশন এর জন্য নয়। পাড়া পড়সি কি বলে তা কানে নিবে না। কাজ করে যাও। তোমার সফলতাই উত্তর দিবে। বলা হয়ে থাকে Success is the best revenge

      Professor Answered on March 13, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.