ক্ষুরা রোগ কী?
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এ রোগ নানা নামে পরিচিত। যেমন- বাতা, জ্বরা, ক্ষুরপাকা, এঁসো, খরুয়া, তাপরোগ ও খুরাচল। দুই ক্ষুরওয়ালা সব প্রাণিরই এ রোগ হতে পারে। বাতাসের সাহায্যে রোগের ভাইরাস দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। . ক্ষুরা রোগের লক্ষণ :
১। প্রাথমিক অবস্থায় গবাদি পশুর জ্বর হয়। তাপমাত্রা ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
২। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, মুখের ভিতর এবং পায়ের মাঝখানে ফোস্কা উঠে, পরে ফোস্কা ফেটে লাল ঘায়ের সৃষ্টি হয়।
৩। মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। ঠোঁট নাড়াচাড়ার ফলে সাদাসাদা ফেনা বের হতে থাকে এবং চপচপ শব্দ হয়।
৪। ক্ষুরের ফোস্কা ফেটে ঘা হয় এবং পা ফুলে ব্যথা হয়। ঘা বেশি হওয়ায় চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। মাছি ঐ ঘায়ে ডিম পাড়ে। মাছির উপদ্রব ও রোগ জীবাণুর আক্রমণে ঘায়ের ব্যথায় পশুর জীবন বিষিয়ে ওঠে। ফলে পশু এমনভাবে পা ছুঁড়তে থাকে যেন মনে হয় পায়ে কিছু লেগে আছে।
৫। গাভীর ওলানেও ফোস্কা হতে পারে যার ফলে ওলান ফুলে উঠে এবং দুধ কমে যায়।
৬। ছোট বাছুরের হৃৎপিণ্ড এ রোগে আক্রান্ত হলে কোনো লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ মারা যায়।
করণীয় :
১। ক্ষুরা রোগ হওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে পরিষ্কার শুকনা জায়গায় রাখতে হবে।
২। আক্রান্ত পশুকে অন্যত্র নেয়া বা বাইরের কোনো পশুকেও আক্রান্ত এলাকায় আনা ঠিক হবে না।
৩। আক্রান্ত পশুকে কচি ঘাস ও তরল খাবার যেমন, ভাতের ফেন বা জাউ ভাত খেতে দিতে হবে।
৪। আজকাল বাজারে গবাদি পশু পালনের জন্য মশামাছিরোধী নেট পাওয়া যায়, যার ব্যবহার উপযোগী হতে পারে।
৫। আক্রান্ত প্রাণির মুখ ও পায়ের ঘা পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট মেশানো পানি বা খাওয়ার সোডা মেশানো পানি দিয়ে দিনে ৩/৪ বার ধুয়ে দিতে হবে।
৬। মুখের ঘায়ে সোহাগার খৈ গুড়া করে মধু বা ঝোলাগুড়ের সাথে মিছিয়ে লাগানো যেতে পারে।
৭। ওষুধ মেশানো পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধোয়ার পরে সাফলা নিলামাইড বা এ ধরনের পাউডার লাগাতে হবে।
৮। চার ভাগ নারকেল তেলের সাথে ১ ভাগ তারপিন তেল মিশিয়ে লাগালে ক্ষতস্থানে মাছি পড়বে না। এতে পশুর কষ্ট কমবে এবং রোগ ছড়াবে না।
৯। আক্রান্ত প্রাণির পরিচর্যাকারীর ব্যবহৃত কাপড়- চোপড়, হাত-পা এবং ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস অবশ্যই জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
১০। জরুরি ভিত্তিতে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সময়মতো টিকা দিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।