জীবনে ভালো থাকার জন্য কী করা উচিত?
জীবনে ভালো থাকতে হলে,
জীবনে কী কী হলো না, কী কী পাওয়া গেলো না, সেগুলোর হিসেব না করে, কী কী হয়েছে, কী কী পাওয়া গেছে, সেগুলোর হিসাবকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। যা যা পাওয়া গেছে, সেগুলোই না পেলে কেমন হতো, সেটা ভাবনাতে থাকা উচিৎ।
এই অভ্যাস, জীবনের অপ্রাপ্তি সম্পর্কে আক্ষেপ কে মিনিমাইজ করতেই থাকবে, জীবনে ভালো থাকার অনুভূতিকে প্রকট করে তুলবে।
আমার প্রতিবেশী এক পরিবার। খুবই বিত্তশালী, পাড়ার কারোর সাথে কথাবার্তা নেই। মুখ চেনাচেনি রয়েছে।
ক’দিন ধরেই দেখছি, পরিবারের কর্তা, কর্ত্রী মাঝে মাঝেই খুব দামী একটি গাড়ীতে সকালবেলা বেরিয়ে যান। তাঁদের দেখি, আর দুঃখ করি, ইসসসস্ আমি ও যদি এমন একটা গাড়ীতে চড়তে পারতাম। ধুর, গাড়ী ? একটা বাইক কেনার সামর্থ্য যে আমার নেই। তাই মন খারাপ করেই হাঁটতে থাকি। হেঁটেই চলা ফেরা করি, সব সময় হাঁটতেই থাকি। বিষণ্ণতা আর পায়ে হাঁটা মিলে মিশে, একসময় এক অদ্ভুত ভালো লাগা গ্রাস করে মন কে। হাঁটতে থাকা, নেশায় পরিণত হয়ে যায়।
একদিন, যখন সকালবেলা বাড়ী থেকে বেড়িয়েছি, দেখি সেই ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা সেই গাড়ীতে যাচ্ছেন। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, তাঁদের গাড়ী এসে থামলো আমার পাশে। গাড়ীর জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে, সেই ভদ্রমহিলা ডাকলেন আমাকে, কোথায় যাচ্ছেন ?
বললাম, সামনেই।
“উঠে আসুন গাড়ীতে, ছেড়ে দেবো আপনাকে”…
ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উঠে বসি সেই গাড়ীতে। আমি তো এমন গাড়ীই চড়তে চাইছিলাম, অপূর্ণ সাধ মিটিয়ে দিলেন ঈশ্বর। তাও, আক্ষেপ আমার, আমার নিজের তো এমন গাড়ী হলো না।
কথায়, কথায় সেই ভদ্রলোক আমাকে বললেন, আপনি সবসময়ই দেখি খুব হাঁটেন।
বললাম, গাড়ী কেনার মতো সামর্থ্য যে নেই।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, সেই ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা।
জিজ্ঞেস করলাম আপনারা দেখছি মাঝে মাঝেই সকালবেলা গাড়ীতে করে বেরোন, কোথায় যান ?
কয়েক সেকেন্ডের নিস্তব্ধতা…
ভদ্রলোক বললেন, “আমার দুটো কিডনীই যে পুরোপুরি ড্যামেজড্। গত দু’ তিন মাস ধরেই নিয়মিত ডায়ালিসিস সেন্টারে যাচ্ছি। হাঁটার মতো শক্তি নেই। গত দশ বছর আগে চিকিৎসক বলেছিলেন, কিডনী ড্যামেজ প্রগ্রেসিভ স্টেজে রয়েছে, হাঁটতে হবে প্রতিদিন নিয়ম করেই, ড্যামেজ রিভার্স করা যাবে না, তবে প্রগেসন কে স্লো করা যাবে, নয়তো, হয় ডায়ালিসিস, নয় ট্রান্সপ্লান্ট, দুটোর একটাকে বেছে নিতেই হবে। পাত্তা দিই নি তখন… গাড়ী থাকতে হাঁটবো কেন ? কিডনির জন্য ট্রিটমেন্ট রয়েছে, অসুবিধা কোথায় ?
আবার গাড়ীতে নৈঃশব্দ্য বিরাজ করছে।
নিঃশব্দতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলাম, “এখন যদি হাঁটেন, তাহলে ?”
” নো, ডাক্তার বলেছেন, আগে যে হাঁটা আমার উপকারে আসতো, সেই হাঁটাই এখন আমার জন্য ক্ষতির কারণ হবে..”
নেমে যাবো আমি, গাড়ী থামলো।
তাঁদেরকে নমস্কার জানিয়ে, গাড়ী থেকে নেমে গেলাম।
এক পা ও যে এগোতে পারছি না, দু চোখের জলে, চলে যেতে থাকা গাড়িটাকে ঝাপসা দেখছি। কত বড় অকৃতজ্ঞ আমি ! দামী গাড়ী নেই বলে ঈশ্বরকে অপবাদ দিই। তিনি আমাকে গাড়ী দেন নি, হাঁটার শক্তি বজায় রেখেছেন, তিনি আমাকে ডায়ালিসিস সেন্টারে যাওয়ার পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে রেখেছেন।
বলার শক্তি দিয়ে রেখেছেন,
জীবনে আমি ভালো আছি।