মানুষের জীবনে শান্তি নেই কেন?
মানুষের জীবনে শান্তি নেই কেন?
এটি আমার ভাগ্নি, বয়স দশ মাস। খেলার জন্যে একটা চামচ পেয়েই তার খুশি ধরে না। একটু পর পর যে চামচ দিয়েছে তার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে জানাচ্ছে যে সে এটা পেয়ে খুব খুশি। ওর কাছে জীবনে শান্তির সংজ্ঞা এই চামচটা এবং কেউ একজন যে ওকে এই চামচটা দিয়েছে সেটা।
২০১৭ তে আমার ফোনের ক্যামেরা একদমই ভালো ছিলো না, তখন মনে হতো ভালো ছবি তুলে এমন একটা ফোন পেলেই আমি খুশি হবো। তারপরে পাসওয়ার্ফোড দিয়ে ফোন আনলক করতেও কষ্ট, যদি আমার কাছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর সহ একটা ফোন থাকতো! তার কিছুদিন পরেই আমি রেডমি ৪ ফোনটা কিনি।
শুরুতে তো আমি মহাখুশি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও আছে আবার ভালো ছবিও উঠে। কেনার আগে এত যে উৎকন্ঠা, অবশেষে একটা ভালো ফোন কিনছি তা কেনার দুইদিনেই শেষ হয়ে যায়। এরপরে মনে হয় ক্যামেরা অতটাও ভালো না। তাছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা করার জন্যে দুইটা ক্যামেরাও নেই। প্রসেসর ও তত পাওয়ারফুল না। এরপরে আবার চিন্তা করতে থাকি নতুন ফোন কিনব। ২০১৮ তে এসে আমি মেইজুর একটা ফোন কিনি যাতে ডুয়াল ক্যামেরা, ভালো প্রসেসর এবং তখন আমি যা যা চাইতাম সবই ছিলো।
এটাও কেনার পরে কিছুদিন বেজায় খুশি আমি। কিন্তু হায়! কিছুদিন পরেই আবার সেই আগের দশা- সুপার এমোলেড ডিসপ্লে, ফুল ফিউ স্ক্রিন, আন্ডার ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এসব যে আমার চাই ই চাই। এখনকার ফোনে একগাদা ক্যামেরা দেখে দেখে হতাশ হয়ে যেতাম। তাই এই কিছুদিন আগেই আমি রেডমি কে ২০ প্রো ফোনটি কিনি।
এটা একটা ফ্ল্যাগশিপ কিলার এবং মোটামুটি সবই আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এখন কী আমি খুশি? হ্যাঁ শুরুতে আমি খুব খুশি ছিলাম। কিছুদিন পরেই অবধারিতভাবে আবার এই খুশি হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। হয়তো কিছুদিন পরে আবার মনে হবে অমুক ফোন টা না কেনা পর্যন্ত শান্তি পাবো না।
এটা একটা দুষ্টচক্রের মতো। যতদিন আমরা নিজেদের কে এই চক্র থেকে বের না করতে পারবো ততদিন জীবনে শান্তি খুঁজে পাবোনা। এটাই হচ্ছে বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের সাথে। মানুষ আগের থেকেও ধামাকাওয়ালা কোন বস্তু চায় খুশি হওয়ার জন্যে। যে বস্তুটাই একসময় তাকে স্বর্গসুখ দিয়েছে কিছুদিন পরে গিয়ে সেটা আর ভালো লাগেনা।
তাহলে এই চক্র থেকে বের হওয়ার উপায়? তা বুঝতে চলে যেতে হবে আমাদের জীবনের শুরুতে, এইক্ষেত্রে আমার ভাগ্নির কাছে। জীবনে ছোট ছোট পাওয়া গুলোকে যেদিন আমরা মূল্যায়ন করতে শিখবো আর সেগুলোই যথেষ্ট হবে আমাদের খুশি করতে সেদিন থেকে আমরা হয়তো জীবনে শান্তি খুঁজে পাবো। আমার ভাগ্নিকে রোজ এই এক চামচ দিলেও সে সেটা পেয়ে খুশি হয়, তার আরো উন্নত চামচের প্রয়োজন হয় না। হয়তো এখন সময় এসেছে মামার ও তার ভাগ্নিকে দেখে শেখার!
পাদটিকাঃ প্রথম ছবিটি একটা ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া, বাকিগুলো গুগলে থেকে নেওয়া।