মানুষের মাথায় উকুন হয় কেন?

    মানুষের মাথায় উকুন হয় কেন?

    Doctor Asked on March 2, 2015 in সাধারণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      প্রধানত: মাথাতেই উকুন হয়। এটি অত্যন্ত বিরক্তকর এবং ছোঁয়াচে। এক জনের কারো হলো তার সংস্পর্শে যে আসে তারও মাথায় এই উকুন সংক্রমিত হয়। একটু অন্য রকম হলেও উকুন তিন ধরনের হয়্ মাথা ছাড়াও কাপড়-জামা এবং গায়েও উকুন হতে দেখা যায়।

      প্রকারভেদ :
      এক ধরনের উকুন হয় যেগুলো পাওয়া যায় অন্তর্বাসের (মেন গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া, ল্যাঙ্গোট, ব্রেসিয়ার ইত্যাদি) সেলাইয়ের জায়গায়। এই উকুনগুলোর কামড়ে বুক, পিঠ ইত্যাদি জায়গায় খুব চুলকায়। চুলকাতে চুলকাতে ত্বক ছুলে যায়। ত্বকে ডিম্বাকার গোলাপী ছোপ পড়ে যায়। আর এই রোগ পড়ার জন্য ত্বক মোটা হয়ে যায় এবং ত্বকের রঙ হয়ে যায় আরও ঘন। এমনটা প্রায়শঃ কোমর, পাছা, কাঁধের পেছন, বুক ইত্যাদি জায়গায় হয়।

      দ্বিতীয় ধরনের উকুন হয় গায়ে বা শরীরে বিশেষ করে যৌনাঙ্গে। অনেকেই এধরনের উকুনকে চাম-উকুন বলেন। যৌনাঙ্গের চুল, দাড়ি, ভ্রু, বগল বা বগলের চুল ইত্যাদি জায়গায় হয়। এসব জায়গায় উকুনের ডিম চেপ্টে লেগে থাকে। এই উকুনের জন্রও উপরোক্ত জায়গাগুলোতে ভীষণ চুলকায়। ত্বকে নীলচে ছোপ বা দাগ হতেও দেখা যায়। একবার হলে চট করে শরীর থেকে যেতে চায় না। প্রতিদিন এগুলো এত বাড়ে যে তুলে তুলে মেরেও শেষ করা যায় না।

      তৃতীয় ধরনের উকুনের কথা আমরা সবাই জানি মাথার চুলে হয়। মাথার চুলের মধ্যে এই উকুনের অজস্র ডিম লেপ্টে থাকে। তাই যতই তোলা যাক বা মারা যাক মাথার উকুন নিঃশেষিত হয় না। অনবরত মাথা চুলকায়, চুলে জট লেগে যায়, চুলে দুর্গন্ধ হয় এবং চোখের উপরের দিকে ত্বক ফোলা-ফোলা লাগে।

      কারণ : 
      নানা কারণে এই উকুনের সংক্রমণ হয়। প্রতিদিন মাথা ধুয়ে ঠিক মতো না মুছলে চুল অপরিস্কার রাখলে, নিয়মিত মাথা না আঁচড়ালে, ব্যবহৃত মাথার তেল উন্নতমানের না হওয়ার জন্য মাথায় উকুন হয় এবং দ্রুত তার বৃদ্ধি হয়।

      সাধারণত: স্কুল থেকে এই উকুন বাচ্চারা বয়ে নিয়ে আসে। এছাড়া উকুন যার হয়েছে তার ব্যবহৃত গামছা তোয়ালে ব্যবহার করলেও উকুন সংক্রমিত হয়। মাথার বালিশ এমনকি যার মাথার উকুন আছে তার পাশে শুলেও সুস্থ মানুষের মাথায় উকুন সংক্রমিত হতে পারে।
      একটা জিনিস মনে রাখা দরকার উকুন তুলে উকুনের উপদ্রব সাময়িক ভাবে কিছু কমানো যায় বা চুলকানি কিছু কমানো যায় কিন্তু উকুনের বংশকে নির্বংশ করা যায় না।

      উকুনের অনেক ওষুধ এখন বাজারে বেরিয়েছে সেগুলির ব্যবহারে উকুনের উপদ্রব কমে কিন্তু ঘরোয়া চিকিৎসাতেও উকুনকে সমূলে নষ্ট করা যায়।

      প্রতিকার :
      ১। কিছু পেঁয়াজ নিয়ে ভালো করে পিষে নিয়ে তার রস বের করে নিন। এই রস চুলে বা আক্রান্ত জায়গায় লাগান। পেঁয়াজের রস চুলে অন্ততঃ ৩-৪ ঘণ্টা লাগিয়ে রাখতে হবে তারপর সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ৩-৪ এভাবে নিয়মিত পেঁয়াজের রস লাগালে মাথার উকুন নষ্ট হয়ে যায়।

      ২। কাঁচা সীতাফল বা আতার চূর্ণ অথবা আতার বীচির চূর্ণ রাতে শোয়ার সময় ভালো করে চুলে লাগিয়ে একটা কাপড় দিয়ে চুল বেঁধে রাখুন। সকালে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। দিন কয়েক এমন করলে চুলের সমস্ত উকুন, নিকি (বা নিক) মরে যায়।

      ৩। আতা বা সীতাফল এবং গোমূত্র এক সঙ্গে বেটে থকথকে করে নিন। এই থকথকে বাটা রাতে শোয়ার সময় মাথায় ভালো করে লাগিয়ে একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে শুয়ে পড়–ন। সকালে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এতে উকুন এবং খুস্কি দুটোই নাশ হয়।

      ৪। ছ’ চামচ পরিষ্কার জলে দু’চামচ শুদ্ধ সিরকা মিশিয়ে তুলোর পলতে তৈরি করে ভালো করে চুলে লাগান এবং কাপড় বেঁধে দিয়ে শুয়ে পড়–ন। সকালে মাথায় শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দু’বার এমন করুন। এতে এক মাসের মধ্যেই মাথার খুস্কি এবং উকুন চলে যায়।

      ৫। আপেলের টুকরো চুলে ঘষুন অথবা আপেলের রসে জর মিশিয়ে অন্ততঃ আধঘণ্টা আঙুল দিয়ে মাথায় খুব করে ঘষতে থাকুন। তিন দিনের মধ্যেই এতে উকুনের বংশ নাশ হবে।

      ৬। রসুন বেটে লেবুর রসে মিশিয়ে রাতে শোয়ার সময়ে মাথায় ঘষে ঘষে লাগান। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে চার-পাঁচ দিন করলেই উকুন নাশ হয়।

      ৭। নারকেলের তেলে কর্পূর মিশিয়ে রাতে মাথায় লাগান। সকালে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এতেও উকুনের বংশ ধ্বংস হয়।

      ৮। আতার বীজ বেটে মাথায় লাগিয়ে ঘণ্টা দুই রেখে মাথা ধুয়ে ফেললেও উকুনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

      ৯। নারকেলের তেল, নিমের পাতা ফুটিয়ে শিশিতে ভরে রাখুন। এই নিম তেল নিয়মিত মাথায় মাখলে বা মাথায় আঙুল দিয়ে ভালো করে মালিশ করার পর চিরুণী দিয়ে মাথা আঁচড়ে নিলে উকুন চলে যায়।

      ১০। কর্পূরের রস তেলে মিশিয়ে চুলে লাগান। এতেও উকুন নষ্ট হয়।

      Professor Answered on March 2, 2015.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.