বেশ আগের কথা। আমি কোন এক কারণে ছুটিতে আছি। আমার তৎকালীন বান্ধবী অফিস গেছে। আমি বেশ বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে বাইরে খেতে গেলাম। খেয়েদেয়ে বেশ আয়েশ করে বাসায় ফিরে চাবি লাগিয়ে দেখি দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। এমন হবার কথা নয়! বাসায় আমরা ছাড়া আর কেউ থাকেনা। মোটা গেছো এক ইঁদুর রাতের বেলা মাঝেমধ্যে আমাদের ভয় দেখাতে আসে, তবে কাউকে বাইরে রেখে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেবার মতো নিষ্ঠুর তাকে আমার কোনদিনই মনে হয়নি।

ভয়েভয়ে বান্ধবীকে ফোন দিলাম, হয়তো সেই কোন কারণে বাড়ি ফিরে এসেছে, না সে তো অফিসেই। ভাগ্যক্রমে পাশের ফ্ল্যাটেই এক পুলিশ ভদ্রলোক থাকতেন। দরজায় টোকা দিয়ে দেখলাম উনিও লুঙ্গি পরে ভাত খাচ্ছেন। ব্যাপারটা বলতেই উনি বেশ আগ্রহ নিয়ে বেরিয়ে এলেন। আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে কিছুক্ষণ মোচড়ামুচড়ি করলেন। এরপর উনি ভিতরে গিয়ে পিস্তল নিয়ে এলেন, বাংলা সিনেমার হিরোদের মতো হুংকার দিয়ে বললেন “ভিত্রে কে আছিস বাইর হ!”। আমি তার বিশাল দেহের পিছনে লুকিয়ে মুখটা সামান্য বের করে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম কি হয়। কিন্তু ভিতর থেকে কারো কোন সাড়াশব্দ নেই।

এর মধ্যে আমার বান্ধবী হন্তদন্ত হয়ে ফিরলেন। নিজের চাবিটা দরজায় লাগালেন, এবং দরজা খুলে গেল। আমি আর পুলিশ ভদ্রলোক একে অপরের দিকে তাকিয়ে খানিকক্ষণ মাথা চুলকালাম। উনিই মুখ খুললেন “বুঝলেন ভাই এই বাড়ির দরজাগুলায় সমস্যা আছে এমন হয় মাঝেমধ্যে”। আমিও তার সাথে একমত হলাম। দুই দুই জন লোক মিলে চেষ্টা করে দরজা খুলতে পারলাম না, কোন ঝামেলা না থাকলে এমন তো আর হবার কথা নয়!

বান্ধবীকে বললাম এসব কাউকে বলার দরকার নেই। কি দরকার এসব ছোটখাট ব্যাপার বন্ধুবান্ধবকে বলে বিরক্ত করার। কিন্তু আধা ঘন্টা পরেই দেখলাম সবাই জেনে গেছে। ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছে। সবাই আমার সাহস, বুদ্ধি এবং প্রজ্ঞার অনেক প্রশংসা করল, আমিও হে হে বলে সায় দিয়ে গেলাম।

এখনো বিশেষ সাহস এবং যন্ত্রসংক্রান্ত বিভিন্ন দক্ষতার আলোচনা উঠলে এই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে আমার বীরত্বের উদাহরণ টানা হয়। আমি অবশ্য এসব গায়ে মাখিনা, বিনয় আমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।