একাকিত্ব কাটাবার জন্য আপনি কী করেন?
একাকিত্ব কাটাবার জন্য আপনি কী করেন?
গতকাল রাত তিনটায় কলিং বেল বাজছে। আমি ছিলাম গভীর ঘুমে। কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। সুরভি বাসায় নেই। সে তার বাবার বাড়ি গেছে। আবার কলিং বেলের শব্দ। এত রাতে কে এলো? চিৎকার করে বললাম কে? একজন মহিলা বলল, আমি ভিক্ষুক। ভিক্ষা দেন। করোনার সময় থেকেই দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
আমি ভীষণ অবাক! এত রাতে ভিক্ষুক! আমি থাকি ছয় তলায়। তাছাড়া নীচে কেচিগেটে তালা লাগানো হয় ঠিক বারোটায়। ভিক্ষুক এলো কি করে? তাও আবার এত রাতে! আবার কলিং বেলের শব্দ। আমি যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে দরজা খুললাম। ইচ্ছে করছে ভিক্ষুককে ছয় তলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। ঘুম খুব মূল্যবান। টানা আট ঘন্টা ঘুম না হলে পরের দিন শরীর ম্যাজম্যাজ করে।
ভিক্ষুক দেখতে বেশ লম্বা। একটা মেরুন রঙের শাড়ি পরা। শাড়ির রঙ জ্বলে গেছে। অনেক পুরোনো শাড়ি। ভিক্ষুক দেখতে প্রিসেন্স ডায়না হেডেনের মতো। তবে এর মুখটা মলিন এবং বিষন্ন। যেন জন্ডিস হয়েছে। ভিক্ষুক সামান্য তেজ দেখিয়ে বলল, দরজা খুলতে এত সময় লাগে! ভিক্ষুক বসার ঘরে বসলো। বলল, এসি ছেড়ে দেন। যা গরম পড়েছে। ভিক্ষুকের ভাবভঙ্গি কিছুই বুঝতে পারছি না। বলল, ক্ষুধা লেগেছে। কিছু খেতে দেন।
আমি বললাম, ঘরে কোনো খাবার নেই। সুরভি বাসায় নেই। আমি ভাবীর ঘরে খেয়েছি। ভিক্ষুক বলল, তাহলে জটপট নুডুলস রান্না করে দেন। ফ্রিজে কোক থাকলে কোক দিতে পারেন। আমি বললাম, স্যরি। ভিক্ষুক বলল, তাহলে অন্তত একবাটি মুড়ি মেখে দেন। চানাচুর না থাকলেও সমস্যা নেই। পেয়াজ, কাচা মরিচ আর সরিষার তেল দিয়ে মেখে দিলেই হবে।
আমি বললাম, আপনি এখন যেতে পারেন। অনেক দিকদারি করেছেন। বাচি না নিজের জ্বালায়। ভিক্ষুক মন খারাপ করে চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ করে দিলাম। বিছায় গিয়ে দেখি, ভিক্ষুক শুয়ে আছে। এবার আমি ভীষণ ভয় পেলাম! বললাম, লোকে দেখলে মন্দ কথা বলবে, আপনি চলে যান। ভিক্ষুক বললো, এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু নাই। আপনি স্বপ্ন দেখছেন স্যার।
একাকীত্ব কাটানোর জন্য আমি লিখি।